ভরা মৌসুমেও বেড়েছে চালের দাম : কমেছে আলু-পেঁয়াজের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১২
দীর্ঘদিন বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া আলু ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। সেই সাথে কমেছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। এতে কিছুটা স্বস্তিতে বাজার করতে পারছে স্বল্প আয়ের মানুষ। তবে চাল ও ভোজ্যতেলের দাম এখনো চড়া। আমনের ভরা মৌসুমের মধ্যেই নতুন করে মিলাররা বাড়িয়ে দিয়েছে চালের দাম। গত দুই সপ্তাহে বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে চলে আসায় ভোক্তারা আগের তুলনায় এখন অর্ধেক দামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। এতে আমদানি করা ও পুরনো পেঁয়াজের দামও কিছুটা কমেছে। বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পুরনো দেশি পেঁয়াজ কেজি ১০০ টাকা, আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। আলুর দাম কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। দেশী রসুন কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় উঠেছে। স্বর্ণা ও পায়জাম জাতের আমনের চাল বাজারে উঠলেও এসব চালের দাম বেড়েছে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। বাজারে মিনিকেট চাল ৭২-৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি নাজিরশাইল জাতের চালের দাম উঠেছে ৮০ টাকায়।
পুরোপুরি মৌসুম শুরু হওয়ায় বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। এতে প্রায় সব ধরনের সবজি ভোক্তার নাগালের মধ্যে রয়েছে। বেগুন কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, শিম কেজি মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, বরবটি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, পটোল ৪০ থেকে ৫০, করলা ৭০ থেকে ৮০, কাঁচা মরি চ কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, কাঁচা টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, পেপে ৩০, গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকায় ও প্রতি পিস লম্বা লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে যায়, এখনো সেই দাম কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা পর্যন্ত, যা ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ছিল।
এর প্রভাবে বাজারের সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। এ জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ টাকা, যা আগের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা বেশি। মুরগির দাম বাড়লেও ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি বড় রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট ও মাঝারি আকৃতির রুই ৩০০ টাকার কিছু কম-বেশি, কাতল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশী কৈ ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়াও প্রতি কেজি দেশী মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।
চট্টগ্রামে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, শীতের দিনে সবজির বাজারে স্বস্তি মিলেছে অবশেষে। বাজার ছাড়াও রাস্তায় রাস্তায় ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম শীতের সবজি। কমেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ ও আলুর দামও। অন্য দিকে ব্রয়লার মুরগির দাম একটু বাড়তিই রয়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুরগির ডিমের দামও কিছুটা কমেছে। তবে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে। সাথে বেড়েছে ডালের দামও, সয়াবিন তেলের সরবরাহ বেড়েছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র জুমার নামাজের পর রাস্তার ধারে অস্থায়ী বাজার বসার একটি সংস্কৃতি রয়েছে। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, ঐতিহ্যবাহী চন্দনপুরা তাজ মসজিদ, বাকলিয়া এক্সেস রোডের ইয়াকুব আলী জামে মসজিদ, চকবাজার ওয়ালি খাঁ জামে মসজিদ ও মিসকিন শাহ জামে মসজিদের অদূরে নামাজ শেষে কাঁচা তরকারির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও হাতে হাতে শীতকালীন সবজি কিনে বাসায় ফিরছিেেলন। চন্দনপুরা জামে মসজিদের পাশে রাস্তার ধারে ভ্যানগাড়ি থেকে সবজি ক্রয় করছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ নুরুল মোস্তফা। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সারি সারি তাজা সবজির ভাসমান দোকান দেখে ভালোই লাগছে। চাহিদার চেয়েও বেশি সবজি কিনলাম।
দেখা গেছে, শীতের ছোঁয়ায় ভালোই শীতল হয়েছে সবজির বাজার। মৌসুম না হওয়ায় কয়েক প্রকারের সবজির বাড়তি দাম থাকলেও বেশির ভাগ সবজিরই দাম কমেছে।
দেখা গেছে, বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০-২৫ টাকা, লতি ৬০ টাকা, ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা ও পটোল ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ২০-৩০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, ক্ষীরা ৪০-৫০ টাকা, টমেটো ৫০-৬০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, শালগম ২৫-৩০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।
এ ছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ২৫ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা ও পুরনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি কেজি বাঁধাকপি ২০-৩০ টাকা ও লাউ প্রতিটি ২০-২৫ টাকা করে।
দাম কমেছে কাঁচামরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে এটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়, আর পাইকারিতে ৩৫-৪০ টাকা। অনেকেই কম দামে কাঁচা মরিচ কিনে ব্ল্যান্ডিং করে ফ্রিজে রাখছেন। অথচ কয়েক দিন আগেও কাঁচামরিচের দাম ছিল অনেক বেশি।
এ ছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, লাউশাক ৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। তবে স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারে। মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা