গাজায় হাসপাতালের কাছে ইসরাইলি হামলা : নিহত ৫০
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১২
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কাছে বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে প্রায় ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন মেডিক্যাল স্টাফও রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
বার্তা সংস্থাটি বলছে, উত্তর গাজা উপত্যকায় কামাল আদওয়ান হাসপাতালের সদর দফতরের বিপরীতে একটি ভবনে বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রায় ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনজন চিকিৎসাকর্মীও রয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরাইলি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলার পর বেইত লাহিয়া প্রজেক্ট এলাকায় কামাল আদওয়ান হাসপাতালের বিপরীতে একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আমাদের তিনজন মেডিক্যাল স্টাফসহ প্রায় ৫০ জন শহীদ হয়েছেন। আবু সাফিয়া বলেন, চিকিৎসাকর্মীরা হামলার শিকার ওই ভবনে উপস্থিত ছিলেন, কারণ তারা তাদের পরিবার নিয়ে সেখানে থাকতেন। তিনি নিহত কর্মীদের শনাক্ত করেছেন। যাদের একজন আহমদ সামুর, তিনি একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। এ ছাড়া হামলায় নিহত ইসরা একজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান এবং ফারেস নামে এক ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ প্রযুক্তিবিদ।
হাসপাতাল জোরপূর্বক খালি করেছে ইসরাইল
কামাল আদওয়ান হাসপাতাল জোরপূর্বক খালি করে দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গতকাল শুক্রবার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এটি গাজার শেষ কার্যকরী হাসপাতালগুলোর একটি। বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের প্রধান ঈদ সাব্বাহ বিবিসিকে জানান, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মাত্র ১৫ মিনিট সময় দেয় রোগী ও স্টাফদের সরিয়ে নেয়ার জন্য। ডা: সাব্বাহ আরো জানান, ইসরাইলি সেনারা এরপর হাসপাতালে ঢুকে এবং সেখানে থাকা রোগীদের সরিয়ে নেয়া শুরু করে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই এলাকায় হামলার বিষয়ে ‘অজ্ঞাত’ এবং চিকিৎসক নিহতের বিষয়ে তদন্ত করছে। ডা: সাব্বাহ বলেন, ‘এটি খুবই বিপজ্জনক, কারণ আইসিইউ বিভাগের রোগীরা কোমায় আছেন। তারা ভেন্টিলেশন মেশিনে নির্ভরশীল। সরানো হলে তাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়বে।’
এ ছাড়া যদি সেনাবাহিনী এই রোগীদের সরানোর কাজ চালিয়ে যেতে চায়, তবে তাদের বিশেষায়িত যানবাহনের প্রয়োজন হবে। ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এখনো পর্যন্ত সরানোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এর আগের সপ্তাহে একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছিলেন, তারা কামাল আদওয়ান হাসপাতালের রোগীদের নিকটবর্তী ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে, যা ইসরাইলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার খালি করে দিয়েছিল।
ইসরাইল এ বছরের ৫ অক্টোবর থেকে উত্তর গাজায় বড় আকারের স্থল আক্রমণ শুরু করে। ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলকে এলাকাটি দখল করতে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। ইসরাইলের সেই স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানিসহ পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। এর ফলে সেখানে অবস্থানরত অবশিষ্ট জনসংখ্যা সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামাসের সেই আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজায় ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরাইলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসঙ্ঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সঙ্কটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্যনিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
গত মাসে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা