উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় কাটছাঁট
চলতি সালে সঙ্কোচন ১৮%, নতুন বছরে বৃদ্ধি ২%- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৭
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য তুলনামূলক ‘ছোট’ একটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রাথমিকভাবে এই এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি ২০২৪-২৫অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা বা দুই শতাংশ বেশি। এর আগে আর কখনো এক বছরের ব্যবধানে নতুন এডিপি আকার এতটা কম হয়নি। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ দিকে চলতি অর্থবছরের জন্য যে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি হাতে নেয়া হয়েছিল বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে এর বেশির ভাগ অর্থই খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চলতি অর্থবছরের এডিপি মোটা অঙ্কের কাটছাঁট করা হচ্ছে। কাটছাঁটের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুইলাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে মূল এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপির আকার কমেছে ১৮ শতাংশ, যা একটি রেকর্ড। এর আগে খুব কম সময়ই এডিপি এত পরিমাণ কমানো হয়েছে।
অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের জন্য একটি ‘ঢাউস’ আকৃতির এডিপি হাতে নিয়েছিল একটি রাজনৈতিক সরকার। এই এডিপিতে অনেক রাজনৈতিক প্রকল্প ছিল, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অগুরুত্বপূর্ণ মনে করে বাস্তবায়ন স্থগিত করে রেখেছে। আসলে এসব প্রকল্প এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করার কোনো যৌক্তিকতাও নেই। ফলে এডিপি বাস্তবায়ন হারও বেশ কমে গেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এডিপি বাস্তবায়ন হার মাত্র ৬ শতাংশ। এই সময়ে যেখানে টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ছিল ৮৮ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। সেখানে ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। ফলে সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য কোনো অবাস্তবায়নযোগ্য উচ্চাভিলাষী এডিপি প্রণয়ন না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মূল এডিপি তো নয়ই, সংশোধিত এডিপিও পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সংশোধিত এডিপির সর্বোচ্চ ৯৫ ভাগ বাস্তবায়ন করা গেছে। অর্থ বিভাগের করা ‘অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’ তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এই দুই অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন হার ছিল ৯৫ শতাংশ। অন্য দিকে সবচেয়ে কম বাস্তবায়িত বছর ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছর। এই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল মাত্র ৮০ শতাংশ। এর পরের অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন ছিল যথাক্রমে ৮৬ ও ৮৭ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়ন বাড়াতে অর্থ বিভাগের সুপারিশ : এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং কমিটির বৈঠকে কিছু সুপারিশ দিয়েছিল অর্থ বিভাগ। এ সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল- অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পগুলোর বিপরীতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা; নতুন অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না হলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে বা স্থগিত রেখে নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করা; সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত ১০০টি প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক নিয়মিত পরিবীক্ষণ সভা করা; দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব পূরণে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক ১০টি বড় প্রকল্প সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি। জানা গেছে, এই সুপারিশ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তাই সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন লক্ষ্য অনুযায়ী হচ্ছে না।