খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে
চিকিৎসা হবে জনস হপকিন্সে- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:৩২
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তার চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল জানিয়েছেন, মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শক্রমে ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে সঠিক তারিখ এখনো পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি। আর ব্যক্তিগত সহকারী এ বি এম আবদুস সাত্তার সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার দিন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ৭ জানুয়ারি ঘিরে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সাথে সাতজন চিকিৎসকসহ ১৬ সদস্যের একটি টিম যাবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গতকাল বলেন, খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে যাদের যাওয়ার কথা রয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাদের ভিসা হাতে পেলে তারিখ চূড়ান্ত হবে। তা ছাড়া সম্ভাব্য তারিখে খালেদা জিয়া বিমান ভ্রমণ করার মতো শারীরিকভাবে ‘ফিট’ কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের পূর্ব বাল্টিমোরে বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাও নিয়েছেন তিনি। তবে প্রথমে লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের কাছে যাবেন। সেখানে কয়েক দিন অবস্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র যাবেন লিভার জটিলতার চিকিৎসার জন্য।
অধ্যাপক জাহিদ জানান, মেডিক্যালের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি বিমানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লন্ডন যাবেন। তার সাথে চিকিৎসকের একটি টিম, পরিবারের কয়েকজন সদস্য এবং চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও যাবেন।
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডস, প্রফেসর জেমস পিটার অ্যাডাম হ্যামিলটন ও প্রফেসর আবদুল হামিদ আহমেদ আব্দুর রব ঢাকা এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিয়েছিলেন। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের লিভারের রক্তনালীতে তখন সফল অস্ত্রোপচার করেন।
৭৯ বছর বয়েসী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের নানা জটিলতা রয়েছে তার। ২০০২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার হৃদযন্ত্রের তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তখন চারটি মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন। সে সময় তিনি যুক্তরাজ্যের ডা: হ্যাডলি ব্যারির কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত দুদকের মামলায় কারাগারে যান খালেদা জিয়া। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে পরদিন ৬ আগস্ট এভাকেয়ারে চিকিৎসাধীন থাকা বেগম জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন।
এর আগে গত ৭ জুলাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের সাক্ষাৎ দেন তিনি। এরপর ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় বাসভবন ফিরোজায় ফিরে আসেন। এর আগে ১৫৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি বাসায় ফিরেছিলেন তিনি।
এরপর চলতি বছরের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রিত হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিপুল সমাদৃত হন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা তার সাথে কুশলবিনিময় করেন। বিগত কয়েক মাসে তিনি ব্রিটিশ হাইকমিশনার, চীন, সৌদি আরব ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেগম জিয়ার বিদেশযাত্রা দিনের বেলাতেই হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মী ও অনুসারীদের বিষয়টি সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার ও চিকিৎসকরা। দলের সিনিয়র নেতারা বিমানবন্দরে বেগম জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে পারেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা