আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা : নিহত ৪৬
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের বিমান হামলায় ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্রের বরাতে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি। মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, মঙ্গলবার রাতে পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলায় চারটি পয়েন্টে বোমাবর্ষণ করেছে পাকিস্তান। এতে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অন্য দিকে নিহতদের সবাই পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার ওয়াজিরিস্তান থেকে আগত শরণার্থী ছিলেন।
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খারাজমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় জানিয়েছেন এ তথ্য। এক্স বার্তায় এনায়েতুল্লাহ খারাজমি বলেন, নিহতদের সবাই বেসামরিক এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে। এরা সবাই ওয়াজিরিস্তান থেকে শরণার্থী হিসেবে এখানে এসেছিলেন। বার্তায় তিনি আরো বলেন, দেশের ভূমি এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার বৈধ অধিকারের বলেই সরকার এই হামলার জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে, বার্তা সংস্থা এপি জানায়, আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে সন্দেহভাজন পাকিস্তানি তালেবানের একাধিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস এবং কিছু বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন বলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিরাপত্তা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার পাকিস্তানের সাথে সীমান্তবর্তী পার্বত্য এলাকায় এই হামলাগুলো চালানো হয়। তবে যুদ্ধবিমানগুলো কতটা গভীরে প্রবেশ করেছিল এবং কিভাবে এই হামলা পরিচালিত হয়েছিল তা এখনো পরিষ্কার নয়। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো মুখপাত্র এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেননি।
তবে কাবুলে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, পাকিস্তানি হামলায় নারী ও শিশুসহ সাধারণ নাগরিকরা নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই ওয়াজিরিস্তানের শরণার্থী। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান এই হামলাকে আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন এবং নির্লজ্জ আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
এক্স প্লাটফর্মে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পাকিস্তানের এই একতরফা পদক্ষেপ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। আমরা এই কাপুরুষোচিত হামলার জবাব দেবো এবং আমাদের ভূখণ্ড রক্ষার অধিকারকে অগ্রাহ্য করব না। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন লিখেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) চারটি শিবিরকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্যবহার করতেন শের জামান ওরফে মুখলিস ইয়ার, কমান্ডার আবু হামজা, টিটিপির উমর মিডিয়ার প্রধান কমান্ডার আখতার মুহাম্মদ।
এক বছরের দীর্ঘ বিরতির পর কূটনৈতিক আলোচনার জন্য কাবুল সফর করছেন আফগানিস্তানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত মোহাম্মদ সাদিক নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। অন্তর্বর্তীকালীন আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির মুত্তাকির সাথে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের দিনই এই হামলা চালানো হয় বলে ডন লিখেছে। স্থানীয়দের দাবি, পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান এই বোমা হামলার জন্য দায়ী। খবরে বলা হয়েছে, বারমলের মুর্গ বাজার গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গেছে, যা চলমান মানবিক সঙ্কটকে আরো বাড়িয়েছে।
এএনআই লিখেছে, বিমান হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে, যা ওই অঞ্চলে উত্তেজনা আরো বাড়িয়েছে। খামা প্রেস জানিয়েছে, উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে; ঘটনার বিস্তারিত নিশ্চিত হতে এবং হামলার দায় স্পষ্ট করতে আরো তদন্ত প্রয়োজন। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান হামলার কথা স্বীকার না করলেও সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো ধারণা দিয়েছে, সীমান্তের কাছে তালেবানের গোপন আস্তানা লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছে।
এএনআই লিখেছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, বিশেষ করে আফগানিস্তানে পাকিস্তানি তালেবানের উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে এই ঘটনা ঘটল। পাকিস্তানি তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর তাদের হামলা বাড়িয়েছে। আর তাদেরকে আফগান তালেবান আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের এ দাবি অস্বীকার করেছেন তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারাজমি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা