গাজায় বড়দিনে ‘মৃত্যু ও ধ্বংস’ সমাপ্তির প্রার্থনা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন ছিল গতকাল বুধবার। বরাবরের মতো এবারো বিশ্বজুড়ে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্টের জন্মতিথির এই দিনটি নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হয়। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়ও ছোঁয়া লেগেছে বড়দিনের, তবে গত ১৪ মাস ধরে চলমান ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনে বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত গাজায় এ উৎসবের লেশমাত্র উদযাপন নেই। কোথাও উৎসবমুখর আলোকসজ্জা হয়নি, উপত্যকার কোনো খ্রিষ্টান বাড়িতে রাখা হয়নি বড়দিন উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ ক্রিসমাস ট্রিও। এএফপি।
তবুও পবিত্র বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নিতে গত মঙ্গলবার গাজার প্রধান শহর গাজা সিটির বৃহত্তম গির্জা গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ অব সেইন্ট পরফিরিয়াসে জড়ো হয়েছিলেন শতাধিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। সেখানে গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংস শেষের জন্য প্রার্থনা করেছেন তারা। বড়দিন উপলক্ষে দ্বাদশ শতকে নির্মিত এই গির্জাটিতে প্রার্থনা করতে এসেছিলেন জর্জ আল সায়েফ। এএফপিকে তিনি বলেন, “এই বড়দিন মৃত্যু ও ধ্বংসের দূষণে পরিপূর্ণ। এখানে কোনো আনন্দ নেই, উৎসবের আবহ নেই। আমরা এমনকি এ-ও জানি না যে আজকের এই প্রার্থনায় যারা এসেছে, তারা আগামীকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে কি না।”
গাজা সিটির যে গির্জাটিতে গতকাল বড়দিনের প্রার্থনা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটিও। গত বছর অক্টোবরে ইসরাইলি গোলা আঘাত হানে গির্জা চত্বরে, এতে নিহত হয়েছিলেন সেখানে আশ্রয় নেয়া ১৮ জন ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টান। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে, আজ থেকে দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে জেরুসালেমের বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যিশুখ্রিষ্ট। যে গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন, সেটি বর্তমানে ফিলিস্তিনের অন্তর্গত।
গাজায় অবশ্য খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কমিউনিটি খুব বড় নয়। বর্তমানে এই কমিউনিটির এক হাজার ১০০ জন জীবিত রয়েছেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক প্রার্থনা শেষে এক বক্তব্যে বলেছিলেন, “দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ধরে কী ভয়াবহ অত্যাচার চলছে গাজার বাসিন্দাদের ওপর! শিশু ও অসহায় বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চলছে, স্কুল-হাসপাতালে বোমাবর্ষণ হচ্ছে।” ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার অবশ্য পোপের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। পোপ ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দিকে তাকালে যে কেউ-ই বুঝবেন, কী পরিমাণ কষ্ট, যন্ত্রণায় গুমরে মরছেন সেখানকার জীবিত লোকজন। গাজা সিটির বাসিন্দা কামাল জামিল সিজার অ্যান্টন জানান, ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে তারা গাজার হোলি ফ্যামিলি চার্চ নামের একটি গির্জার চত্বরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সম্প্রতি সেই গির্জায় গোলাবর্ষণ করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে তিনি বেঁচে গেলেও মারা গেছেন তার স্ত্রী নাহিদা এবং মেয়ে সামার। এএফপিকে অ্যান্টন বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, এ বছর যুদ্ধ বন্ধ হবে; কিন্তু হলো না। আমরা শুধু চাই যুদ্ধ বন্ধ হোক। কারণ এই যুদ্ধের কারণে প্রতিদিন আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষ, স্বজনদের হারাচ্ছি।”
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা