আমাদের শাসক আমরা ঠিক করব ভারত নয় : ডা: শফিক
- রংপুর, গাইবান্ধা, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ সংবাদদাতা
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৪
আগামীর বাংলাদেশ আমাদের তরুণদের হাতে দিতে চাই উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনা ঘর পালানো বউ, আবার পালিয়ে গিয়ে বলে আমি তালাক পাই নাই। বলেন, আমরা এমন একটা দেশ চাই যে দেশকে আর কেউ ভাগ করতে পারবে না। সংখ্যালঘু, সংখ্যা গুরু এই সমস্ত নোংরামি করে জাতির কপাল চুরি করে বিদেশে টাকা পাচার করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা ঠিক করবো আমাদের দেশের শাসক, ভারত ঠিক করবে তাদের দেশের শাসক।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টায় রংপুরের মিঠাপুকুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াত আমির আসাদুজ্জামান শিমুলের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, জামাতের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল্লাহ হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা জামায়াতের আমির আধ্যাপক গোলাম রব্বানী, রংপুর মহানগর জামায়াত আমির এটিএম আজম খান, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মো: এনামুল হক, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা আমির জয়নাল আবেদীন (মাস্টার)সহ রংপুর জেলা ও মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে তিনি পীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভা এবং গাইবান্ধায় জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, তরুণরা আগামীর বাংলাদেশের চালক হবে ইনশাআল্লাহ। মন খারাপ করবেন না যারা মুরুব্বি। আমাদের সন্তানরা যদি সুন্দরভাবে দেশ চালায় তাহলে সব থেকে বেশি খুশি হবো আমরা মুরুব্বিরা। আপনারাও খুশি হবেন।
ডা: শফিক বকেন, ‘আমরা এমন একটা দেশ চাচ্ছি যে দেশের মানুষ তাদের অধিকার চাওয়ার প্রয়োজন হবে না। রাষ্ট্র তার অধিকার দিতে বাধ্য হবে। সেই মানবিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, চাঁদাবাজ মুক্ত বাংলাদেশ, দখলদার মুক্ত বাংলাদেশ যদি আপনারা চান তা হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে আপনাদের ভালোবাসা দিতে হবে। আমরা আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতার কাঙ্গাল। সমর্থনের কাঙ্গাল। আপনারা কি একটু ভালোবাসা আমাদের দিবেন। একটু সহযোগিতা করবেন। একটু সাহায্য করবেন। একটু পাশে থাকবেন। একটু বুকে জড়িয়ে ধরবেন। সেই আগামীর বাংলাদেশ করার সংগ্রাম ও লড়াইয়ে সাথী হিসেবে আপনাদের পাশে চাই। সেই আগামীর বাংলাদেশ এবং কুরআনের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের কোনো দিদির বাড়ি নাই, পিসির বাড়ি নাই, মাসির বাড়ি নাই। দেশের বাইরে কোনো স্বামীর বাড়িও নাই। যাদের আছে তারাই পালিয়ে যায়। আবার ঘর পালানো বউ বলে, আমি তালাক পাই নাই।’
শেখ হাসিনার উদ্দেশে ডাক্তার শফিক বলেন, ‘তুমি (শেখ হাসিনা) তো পালিয়েই গেছো। তোমার আবার তালাক কি। তোমার মতো যারা এই দুনিয়ায় পালিয়ে গেছে তাদের কোনো তালাকের তোয়াক্কা করে নাই সেই সমাজের মানুষ। আমরাও তোমার তালাকের পরোয়া করি না। ভেবেছিলাম পালিয়ে গিয়েছো। কিন্তু তাতে ক্ষান্ত হও নাই। এখন এই ফুঁস-ওই ফুঁস, ফুঁসফাঁস নানান ধরনের ফুসফাঁস করছো। মাঝখানে একটা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর (সনাতন ধর্মাবলম্বী) আবেগ নিয়ে খেলছো। একে একে মহান আল্লাহ সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করছেন। ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে যুবক-যুবতী,ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমেছে। গুলির পরোয়া করেনি। এই ষড়যন্ত্রের পরোয়া করবে না তারা।’
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ খুন করেছে। গুম করেছেন। আয়না ঘর তৈরি করেছেন। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয় সকল বিরোধী দলের ওপর তারা নির্যাতন করেছেন। তারা জুলুম করেছেন। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিশাল একটা বিধ্বস্ত জেলে একা রেখে তাকে নিয়ে আবার উপহাস করেছেন।। অনেক কিছুই করেছেন তারা (আওয়ামী লীগ) কোনো মানুষকে সম্মান দেখাতে শেখেনি।’
ডা: শফিক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেদের দেশের মালিক বানিয়ে ছিলেন। দেশের জনগণকে বানিয়েছিলেন ভাড়াটিয়া। আচ্ছা বলেন তো মালিক কি তার ঘর ছেড়ে কখনো পালায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগ হলো এ দেশের ভাড়াটিয়া। জনগণ হলো এ দেশের বাড়িওয়ালা। সে কারণে ভাড়াটিয়া পালিয়ে গেছে। এ সময় তিনি বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের পালিয়ে যাওয়া এবং গ্রেফতারের কথা শোনান উপস্থিত জনগণকে।’
নারীদের পোশাক পরিচ্ছদের ব্যাপারে ডাক্তার শফিক বলেন, ‘নারীরা তাদের স্বাচ্ছন্দ্য মতো পোশাক পড়বে। আমরা ক্ষমতায় গেলে এ ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করবো না।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলেছিল জামায়াত ক্ষমতায় গেলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদের কচুকাটা করবে। কি নির্জলা মিথ্যা প্রচারণা তাদের। কেন আমরা তাদের কচুকাটা করব?
তারা হজরত আদম আলাইহি ওয়াস সাল্লাম এবং হাওয়া আলাইহি ওয়াস সালামের বংশধর নয়? তাদেরকে কচুকাটা করার জামায়াত কে? বরঞ্চ এই জুজুর ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ ৫৩টি বছর সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে বলতে চাই, যতই ষড়যন্ত্র হোক। সংখ্যালঘুদের জন্য সবার আগে জামায়াতে ইসলামী সহযোগিতা করবে।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঠিক তদন্ত এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের সর্বনাশ যুগে যুগে বছরের পর বছর করেছে। এই বিষয়ে সঠিক তদন্ত হোক। যদি উঠে আসে আমি ডাক্তার শফিকুর রহমান বা আমার দল জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করেছে তাহলে সারা বিশ্ব আমাকে এবং আমার দলকে ঘৃণা করবে। আমরা সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের কাহিনীর শ্বেতপত্র দেখতে চাই। জাতি জানতে চায়, কারা সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করেছে। যারা এই কাজ করেছে তাদেরকে আমরা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে চাই। আমরা মাইনোরিটি এবং মেজোরিটির ধাক্কাধাক্কিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে চাই। বলতে চাই আমরা সবাই বাংলাদেশী। যারা এই দেশের নাগরিক তারা সকলেই সমমর্যাদার ভিত্তিতে নাগরিক। তারা গর্বিত নাগরিক। যদি মসজিদ পাহারা দেয়ার দরকার না পড়ে, তাহলে মন্দির, মঠ, প্যাগোডাও পাহারা দেয়ার দরকার হবে না।এটি নিশ্চিত করা হবে। এবার তার বাস্তবতা আপনারা দেখেছেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে জামায়াত আমির বলেন,
‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেলে দুই দিনে পাঁচ লাখ মানুষ খুন হবে। কিন্তু কয়জন মানুষ খুন হয়েছে। ওরা (আওয়ামী লীগ) খুনি হতে পারে। ওরা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে। ওরা নিষ্ঠুর হতে পারে। পাষাণ হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশটাকে এবং বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসে। তার প্রমাণ দেখিয়েছে ৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের ১৮ কোটি এবং সারা বিশ্বের মানুষ। ৫ লাখ তো দূরের কথা পাঁচজনও খুন হয়নি। এটাই আমাদের সৌন্দর্য।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা আমাদের মজলুম নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আহ্বান করেছিলাম। দুঃখ-কষ্ট বুকে চাপা রেখে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ান। দেশকে রক্ষা করুন। ইনশাআল্লাহ সারা দেশবাসী প্রচণ্ড ধরনের দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ এই দেশ সামনে এগিয়ে যাবে আর কেউ রশি দিয়ে পেছনে আটকিয়ে রাখতে পারবে না।
আমরা ঠিক করবো আমাদের দেশের শাসক ভারত ঠিক করবে তাদের দেশের শাসক
পীরগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতা জানান, আমরা ঠিক করবো আমাদের দেশের শাসক, ভারত ঠিক করবে তাদের দেশের শাসক। ভারতের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে? অনেকে এটাও জিজ্ঞেস করে, আবার বলে ভারত তো আপনাদেরকে ক্ষমতায় আসতেও দিবে না, থাকতেও দিবে না। তিনি সম্মুখে থাকা নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন করেন আচ্ছা বলেন তো এই দেশ কি ভারত? এই দেশ কি দিল্লি? এই দেশ কী? জবাবে উচ্চস্বরে আওয়াজ আসে বাংলাদেশ। এই দেশ কি পরাধীন? তাহলে ভারত আমার দেশের শাসক ঠিক করবে কেন? আমরা কি ভারতের শাসক ঠিক করি? আমাদের কি ঠিক করা উচিত হবে? উচিত হবে না, আমরা অবশ্য শাসক বলি না, আমরা বলি রাষ্ট্রের সেবক, কিসের শাসক? জনগণের আমানত মূল্যবান ভোট তোমাকে ভাই বিশ্বাস করে দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
শাসক হলে তোমার হাতে থাকবে ছড়ি, শরীর গরম থাকবে চোখ থাকবে লাল, চোখটা একটু শীতল করো, হাতের ছড়িটা ফেলে দাও, চেষ্টা করো মানুষের পা ধোয়ানোর দুনিয়ায় সম্মান পাবা। আখিরাতে আল্লাহর দরবারে প্রিয় বান্দা হবা। সেই বাংলাদেশ আমরা চাচ্ছি, যে বাংলাদেশে থাকবে সহমর্মিতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। যে বাংলাদেশে থাকবে না হিংসা। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে আমরা মাইনরিটি মেজরিটি এই সমস্ত সংলাপ আর দেখতে চাই না। এই বড়ি গিলিয়ে গিলিয়ে মানুষের সর্বনাশ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের ফ্লাইওভারের নিচে পথ সভায় জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো হুঙ্কার দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে ছাত্র-জনতা : শাহজাহান চৌধুরী
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাইয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো হুঙ্কার দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে ছাত্র-জনতা। সে দিন বাংলাদেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে রাস্তায় নেমে এসেছিল।
গতকাল সকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের সাথে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন নগর জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মুহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রফেসর সাইফুল্লাহ, কোতোয়ালি থানা আমির মুহাম্মদ আমির হোসাইন, ডবলমুরিং থানা আমির ফারুকে আজম, চকবাজার থানা আমির আহমেদ খালেদুল আনোয়ার, পাঁচলাইশ থানা আমির মাহবুবুর রহমান রুমি প্রমুখ।
সভাপতির বক্তৃতায় শাহজাহান চৌধুরী আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগের শত্রুরা নতুন পরিচয়ে আবারও মাঠে নেমেছে। তাদেরকে প্রতিহত করতে না পারলে বিরাট একটি অধ্যায় ছাত্র-জনতাকে আবারও অতিক্রম করতে হবে। না হয় ১৯৭১ সাল পরবর্তী সেই কালো অধ্যায়ের সম্মুখীন হবে দেশ। প্রকৃত আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করে আমাদের সংগঠিত করতে হবে, যাতে ১৯৭১ সালের মতো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার উদ্ভব না হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা