২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিরুদ্ধে হাসিনাকে কোর্টে যেতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের পরামর্শ

-


বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত মহেশ সাচদেব সোমবার জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যর্পণ অনুরোধের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারেন। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মহেশ সাচদেব বলেন, ভারতের প্রত্যর্পণ অনুরোধ যেমনভাবে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ বিভিন্ন শর্তে প্রত্যাখ্যান করেছিল, হাসিনাও তেমনি বলতে পারেন যে, তিনি তার দেশের সরকারকে বিশ্বাস করেন না এবং তার প্রতি অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাচদেব আরো বলেন, প্রত্যর্পণ চুক্তি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়।
মহেশ সাচদেব বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে, যা রাজনৈতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ নাকচ করে। তবে অপরাধমূলক বিষয়গুলো রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সুতরাং, এসব শর্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের (সাবেক) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতে গিয়ে বলতে পারেন যে, তার প্রতি অন্যায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ভারতও এমন উদাহরণ তুলে ধরতে পারে যে, আমরা নিশ্চিত নই যে, তিনি ন্যায়বিচার পাবেন কি না। আপনি মনে রাখবেন, ইউরোপ থেকে ভারতের সন্ত্রাসীদের প্রত্যর্পণ আটকানো হয়েছিল, কারণ ভারতীয় বিচারব্যবস্থা এবং ভারতীয় জেলগুলো ইউরোপের মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে। সুতরাং, এসব বিষয় ঘটতে পারে এবং এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হতে পারে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি প্রথমে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০১৬ সালে এটি সংশোধিত হয়। এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। তবে, দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রাজনৈতিক প্রকৃতির অপরাধের ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ নাকচ করার অনুমতি দেয়।

মহেশ সাচদেব বলেন, কর্তৃপক্ষ আজ প্রকাশ্যে উল্লেখ করেছে যে, এই বিশেষ অনুরোধের জন্য ভারতকে একটি ভারবাল নোট দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, হাসিনাকে ন্যায়বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে প্রয়োজন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কী অভিযোগ রয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। আমাদের বাংলাদেশের সাথে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার শর্তাবলি প্রযোজ্য হবে বলে আমি মনে করি। একই সাথে দুই-তিনটি যোগাযোগ প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
সাচদেব বলেন, ভারবাল নোট সাধারণত কূটনৈতিক যোগাযোগের সর্বনিম্ন স্তর এবং এটি কোনো একটি বিষয়ে একটি দেশের অগ্রাধিকার নির্দেশ করে। এটি কেবল কিছু রেকর্ড রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। আপনি যদি ভিসা চান, সেটিও একটি নোট ভারবাল। একজন সাধারণ ব্যক্তি যদি সাংস্কৃতিক টুর্নামেন্ট বা এ ধরনের কোনো কাজে যায়, তার জন্যও অপর পক্ষকে নোট ভারবাল দেয়া প্রয়োজন, যাতে তার যতœ নেয়া হয়। যদি গুরুত্ব নির্দেশ করতে হয়, তবে আরো উচ্চ স্তরের অ্যাড মেমোয়ার ইত্যাদি থাকতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা শেখ হাসিনাকে কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে। সাচদেব বলেন, শেখ হাসিনার বিষয়টি একধরনের ফ্লিপ-ফ্লপ বা উল্টাপাল্টা অবস্থা। কারণ, তাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধটি যেমন সরকারি, তেমনি তার জন্য আশ্রয়ের অনুরোধটিও সরকারি।

মহেশ সাচদেব বলেন, আমি মনে করি, ভারত এবং বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে। এমনকি এই মাসের শুরুর দিকে আমাদের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে যাওয়ার আগে থেকেই এবং তারা এই সম্ভাবনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বাংলাদেশের দাবি নতুন কিছু নয়। এটি মাঝে মাঝেই সামনে আনা হয়েছে, বিশেষ করে আগস্টে তিনি দেশত্যাগ করার পর থেকে। তিনি আরো বলেন, কিন্তু তারপর তিনি আগস্টে দেশত্যাগ করেন এবং ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধে তাকে গ্রহণ করা হয় যেখানে বলা হয়েছিল, তিনি যাচ্ছেন, তাকে গ্রহণ করুন। তাই এখানে কিছুটা ফ্লিপ-ফ্লপ বা উল্টাপাল্টা বিষয় দেখা যাচ্ছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কিছু লোক হয়তো মনে মনে আশা করবেন না যে, তাকে দ্রুত প্রত্যর্পণ করা হবে, কারণ এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা এমন কিছু প্রকাশ করতে পারেন, যা বাংলাদেশের সরকারকে বিব্রত করতে পারে। তাই আমি মনে করি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রভাবিত হবে; কিন্তু এগুলো প্রত্যাশিত পদক্ষেপ। অবশ্যই এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রোপাগান্ডার জন্য ব্যবহৃত হবে। বলা হবে, আমরা চেয়েছি; কিন্তু তারা এখনো মানেনি। তাই এটি ভারতের বিরুদ্ধে আরেকটি দাগ এবং বাংলাদেশের সমস্যাগুলোকে ভারতের ঘাড়ে চাপানোর আরেকটি চেষ্টা।
সাচদেব বলেন, তিনি (হাসিনা) কতদিন এখানে (ভারতে) থাকবেন তা নির্ধারণ করা যাবে না। আমি মনে করি, তার অনুরোধটি আশ্রয়ের জন্য। আশ্রয়সংক্রান্ত অনুরোধগুলো সাধারণত রাজনৈতিক ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। আমার জানা মতে, এ ধরনের ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা নেই এবং এটা আগেই জানা গিয়েছিল যে, ভারত তাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাকে সেখানে থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশের কাছে অনুরোধ করেছিলেন এবং কেউই তাকে তাদের দেশে স্থায়ী হওয়ার অনুমতি দেয়নি। তাই তিনি এখানে। এখন তিনি এখানে থাকায়, তাকে বহিষ্কার করা আমাদের জন্য অরাজনৈতিক হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement