পিটিআইয়ের সাথে সংলাপে রাজি নওয়াজ শরিফ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পাকিস্তানে সেনাচৌকিতে হামলায় ১৬ জন সেনাসদস্য নিহত ও পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। অন্য দিকে আফগান সীমান্তের কাছে স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতের দিকে চালানো এ হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানি তালেবান ।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটাতে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকার এবং পিটিআইয়ের এর মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনার পথ আরো এগিয়েছে। মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) সভাপতি নওয়াজ শরিফ চির-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সাথে ইমরান খানের সাথে আলোচনার জন্য রাজি হতে পারেন।
যদিও সংলাপের পক্ষে বিবৃতি দেয়া সত্ত্বেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। তবে পিটিআই এবং সরকারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সব পক্ষই সংলাপের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে তীব্র বিক্ষোভ, রাজনৈতিক সহিংসতা দেখেছে পাকিস্তান। রাজনৈতিক স্থবিরতায় ধুঁকছে পাকিস্তানের অর্থনীতি। চলমান বিরোধ কাটাতে ইমরান খানের দল পিটিআই এবং সরকারের মধ্যে সংলাপ শুরুর আভাস কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে দেশটির জনগণকে।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, এরই মধ্যে পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার সংলাপে অংশ নিতে জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিকের সাথে যোগাযোগ করেছেন।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় প্রভাব বিস্তার করে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। যেকোনো সংলাপের অগ্রগতি নির্ভর করবে তার ইঙ্গিত বা অনুমোদনের ওপর। এর আগে পিটিআইয়ের সাথে তার মেয়ে ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াহের সংলাপের সম্ভাব্যতা প্রত্যাখ্যান করেন। ওই সময় তিনি পিটিআইকে একটি বিঘœ সৃষ্টিকারী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে এবার পিএমএলএনের একজন সিনিয়র নেতা নিশ্চিত করেছেন যে, এবার ইমরান খানের সাথে সংলাপে রাজি হতে পারেন নওয়াজ।
সরকার এবং এস্টাবলিশমেন্ট স্বীকার করে পিটিআই একটি জনপ্রিয় দল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এস্টাবলিশমেন্ট এ বিষয়ে পক্ষে মনে হলেও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার এখনো সতর্কতা অবলম্বন করছে। সূত্রগুলো বলছেন, উভয় পক্ষের মধ্যে কথার লড়াই চললেও তারা আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। এখনো আলোচনার পক্ষে কথাবার্তা, বিবৃতি দেয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংলাপ শুরু হয়নি। সবাই এটা মনে করেন যে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দেশের ভেতর চলমান উত্তেজনা সমাধানে একসাথে আলোচনায় বসা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকার, পিটিআই এবং এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা সবাই সংলাপের জন্য প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় প্রভাব বিস্তার করে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। যেকোনো সংলাপের অগ্রগতি নির্ভর করবে তার ইঙ্গিত বা অনুমোদনের ওপর। এর আগে পিটিআইয়ের সাথে তার মেয়ে ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজের সংলাপের সম্ভাব্যতা প্রত্যাখ্যান করেন। ওই সময় তিনি পিটিআই’কে একটি বিঘœ সৃষ্টিকারী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে এবার পিএমএলএনের একজন সিনিয়র নেতা নিশ্চিত করেছেন যে, এবার ইমরান খানের সাথে সংলাপে রাজি হতে পারেন নওয়াজ। কিন্তু সংলাপ নিয়ে সরকার তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে পিটিআই। অন্য দিকে সরকারের বক্তব্য গণ অসংহতি অথবা ডেডলাইনের হুমকির ভেতর সংলাপ হতে পারে না। এমন অবস্থায় সরকার ও পিটিআইয়ের মধ্যে সহসা যে সংলাপ শুরু হবে এমন কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সংলাপের জন্য সরকার ও পিটিআই উন্মুক্ত বলে দাবি করা হচ্ছে। সূত্র বলেছেন, ২৬ নভেম্বরের আগে পিটিআই এবং সুনির্দিষ্ট মহলের মধ্যে সংলাপ প্রক্রিয়া ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। পিটিআই’কে এই বার্তা দেয়া হয়েছে যে, ইসলামাবাদের ডি-চকের র্যালি থেকে সরে এলে তবেই তা পিটিআইয়ের জন্য স্বস্তির হতে পারে। কিন্তু ২৬ নভেম্বর রাতের বিক্ষোভ এবং এসব নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় বিরূপ পরিবেশ।
সেনাচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলা : পাকিস্তানে সেনাচৌকিতে হামলায় ১৬ জন সেনাসদস্য নিহত ও পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। অন্য দিকে আফগান সীমান্তের কাছে স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতের দিকে চালানো এ হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানি তালেবান ।
এক জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে জানান, মধ্যরাতের পর শুরু হওয়া হামলা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে। প্রায় ৩০ জন বিদ্রোহী পাহাড়ি চৌকিটিকে তিন দিক থেকে আক্রমণ করে।
তিনি আরো বলেন, ‘হামলায় ১৬ জন সেনাসদস্য নিহত এবং পাঁচজন গুরুতর আহত হন। বিদ্রোহীরা তারহীন যোগাযোগ সরঞ্জাম, নথি ও চৌকিতে থাকা অন্যান্য সামগ্রী পুড়িয়ে দিয়েছে।’ পরিচয় না প্রকাশের শর্তে আরেকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মাকিন এলাকার এই হামলায় হতাহতদের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। আফগান সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মাকিন অবস্থিত।
অন্য দিকে পাকিস্তানের তালেবান শাখা একটি বিবৃতিতে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ‘আমাদের জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা নিহত হওয়ার প্রতিশোধ’ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি তারা দাবি করেছে, এই হামলায় তারা মেশিনগান, নাইট ভিশন ডিভাইসসহ সামরিক সরঞ্জামের একটি বড় সংগ্রহ দখল করেছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এখনো এই ঘটনার বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহী সহিংসতার পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে পাকিস্তান। গত বছর সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল।
ইসলামাবাদভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেড় হাজারের বেশি বেসামরিক, নিরাপত্তাকর্মী ও বিদ্রোহী নিহত হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, শনিবারের হামলা ছিল ‘এই অঞ্চলে চলতি বছরে সবচেয়ে বিপজ্জনক হামলা’।
আফগান শাসকরা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানো বিদ্রোহীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে। পাকিস্তানি তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) তাদের আফগান সহযোগীদের মতোই মতাদর্শ লালন করে। আফগানিস্তানের নতুন শাসকরা বিদেশী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে আফগান ভূমি থেকে উৎখাত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে জুলাইয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক খবরে অনুমান করা হয়েছিল, সেখানে সাড়ে ছয় হাজার পর্যন্ত টিটিপি যোদ্ধা অবস্থান করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা