২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অর্থনীতি বেগবান করার কাজ কেবল অর্থ মন্ত্রণালয়ের নয় : ড. হোসেন জিল্লুর

-

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, অর্থনীতিকে বেগবান করার কাজ শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নয়, অন্যদেরও এ কাজে সমান দায়িত্ব আছে। বিনিয়োগ থমকে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ অনেক কিছু করার আছে। তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অলিগার্কদের (বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী শ্রেণী) প্রভাব হ্রাসসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার কথা বলেন। তিনি এই পাঁচ সমস্যাকে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অভিহিত করে বলেন, যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আগামী বছর অর্থনীতিতে ইতিবাচক কিছু দেখা যাবে।
গতকাল ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ব্যাংকিং অ্যালমানাকের ষষ্ঠ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে হোসেন জিল্লুর রহমান আরো বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) থেকে তৃণমূল পর্যায়ে কিভাবে আস্থার জায়গা তৈরি করা যায় এবং মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে পরিবারগুলোকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে অলিগার্কদের বাজার নিয়ন্ত্রণের শক্তি কমানোর ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন হোসেন জিল্লুর।
ড. জিল্লুর বলেন, তথ্যের সত্যতা, পেশাদারিত্ব এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সন্তোষজনক পর্যায়ে অগ্রগতি হচ্ছে। আর্থিক শৃঙ্খলা খাত, সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থা থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড় করানো হয়েছে। এখন অর্থনীতির চাকা ঘুরতে হবে, অর্থনীতির প্রক্রিয়াগুলো বেগবান করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এখানে ব্যক্তিখাত থেকে শুরু করে সবার সম্পৃক্ততা আছে। মূল্যস্ফীতি আরেকটা বিষয় এবং মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করতে হলে আমাদের অলিগার্কিক মার্কেট পাওয়ার গত ১৫ বছরের শাসনকালে অন্য স্তরে চলে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, তথ্য ও পেশাদারিত্ব আগের থেকে উন্নত হচ্ছে, সামনে আরো এগোবে। অর্থনীতিকে আরো বেগবান করতে ইচ্ছার ঘাটতি নয়, সক্ষমতার সাথে ব্যক্তিখাতকে আরো কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় ভাবতে হবে। এ জন্য সবাইকে আরো আস্থার জায়গায় আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হলেও সুফল মিলছে না। মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। আগের মাসেও এই হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তার মানে ২০২৩ সালের নভেম্বরে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় মিলেছে, তা এ বছরের নভেম্বরে কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১১১ টাকা ৩৮ পয়সা।
বিগত ১৫ বছরের তথ্য বিভ্রাট নিয়ে ‘বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি’ হতে হয় উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, টের পাচ্ছি... কিসের মধ্য দিয়ে গেছে গত ১৫ বছর। মূল্যস্ফীতি, জিডিপি নিয়ে তথ্য বিভ্রাটের পেছনে অনিচ্ছাকৃত কিছুটা ভুল রয়েছে আবার নীতিনির্ধারকরাও তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেন। কিছু আছে রাজনীতিবিদদের নেতিবাচক ভূমিকা।
তিনি বলেন, আমরা কোনো পাওয়ার দেখাতে আসিনি, একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। যেসব তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেগুলো আমরা পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা করছি। কারণ দাতা সংস্থাগুলো আমাদের কাছে নানা প্রশ্ন করেন, তারা বোঝাতে চান আগেই কম ছিল ইত্যাদি। এ নিয়ে আমরা তাদের বোঝাচ্ছি আগের তথ্য লুকানো ছিল, আমরা সঠিকটা উপস্থাপন করছি।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ এ শেয়ার মহা আনন্দে কিনছেন। এগুলো কয়েক দিন পরই ওয়েস্ট পেপার হিসেবে ব্যবহার হবে। আবার দেখা যায়, শেয়ার প্রাইস কমে গেলেই আন্দোলন করেন, আমি এর পক্ষে নই। তিনি বলেন, বিবিএসকে বলা হয়েছে তথ্য যা আছে, তাই যেন প্রকাশ হয়। এখানে কারচুপির কোনো ব্যাপার নেই। আমাদের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের মতো পুঁজিবাজারের অবস্থাও একই রকমের। আমরা এগুলো পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা করছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা আরো বলেন, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো করার চেষ্টা করছি, যাতে ব্যবসায়ীরা এক স্থান থেকেই সব তথ্য পান, তথ্যের জন্য তাদের ১০ জায়গায় দৌড়াতে না হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমরা সেক্টরগুলোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা চাই, যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বোর্ডে পরিবর্তন এনেছি। তিনি বলেন, ব্যাংকিং অ্যালমানাক আগে কখনো দেখিনি, এটি আমানতকারীদেরও কাজে লাগবে।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ তথ্য রয়েছে ব্যাংকিং অ্যালমানাকে। এতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। শিক্ষাবিষয়ক সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘শিক্ষাবিচিত্রা’র উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে এটি প্রকাশিত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল, শাখা, পণ্যের তালিকাসহ সবই আছে এ বইয়ে।
বইয়ের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ঠিক হালনাগাদ তথ্য বইয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। এখন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর চললেও বইয়ের তথ্য ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পদ্মা ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি, অন্যরা দিয়েছে।
ব্যাংকিং অ্যালমানাক ছাপা ও অনলাইন উভয় রূপেই গতকাল প্রকাশিত হয়। অ্যামাজন ডটকম, রকমারি ডটকম ও প্রকাশনা সংস্থা পাঠক সমাবেশের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এ বই কেনা যাবে। দাম এক হাজার ২৫০ টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement