সর্বনিম্ন কোটা ১০০০ হজে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
- খালিদ সাইফুল্লাহ
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩২, আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬
আগামী বছরের হজে এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা এক হাজার করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে চার গুণ বেশি। এত বেশি সংখ্যক হজযাত্রী কোনো একক এজেন্সির কাছেই নেই। এ জন্য এজেন্সিগুলোকে লিড এজেন্সি নির্ধারণ করে কমপক্ষে এক হাজার হজযাত্রী একত্র করার নির্দেশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে গত বুধবার এজেন্সিগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ দিকে হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা গত বছরের চারগুণ নির্ধারণ করায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এজেন্সি মালিকরা। তারা বলছেন, গত বছর যেখানে আড়াইশ হজযাত্রী মেলাতে ও তাদের সেবা দিতেই হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এবার এক হাজার হজযাত্রী একত্র করে ব্যবস্থাপনা করা খুবই কঠিন কাজ হবে এবং চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর কোটা সর্বনিম্ন ১০০ জন করার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত হজের মতোই আগামী বছরের হজে বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা বরাদ্দ করেছে সৌদি সরকার। গত বছর কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। মাত্র ৮৫ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি গত বছর পবিত্র হজ পালন করেন। এ বছর হজ নিবন্ধন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন প্রায় ৭৫ হাজার হজযাত্রী। আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের শেষ সময় রয়েছে। সে পর্যন্ত আরো হজযাত্রী বাড়বে বলে এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন। তবে এবার এজেন্সি মালিকরা হজযাত্রীদের সর্বনিম্ন কোটা নিয়ে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। তারা বলেন, গত সরকারের আমল থেকেই এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীদের সর্বনিম্ন কোটা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। মাত্র ৫৬ এজেন্সির মাধ্যমে হজ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু সে সময় সাধারণ হজ এজেন্সি মালিকদের বাধার মুখে সেটি পারেনি।
গত বছর প্রথমে সর্বনিম্ন কোটা দুই হাজার করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে কমতে কমতে ২৫০ করা হয়। কিন্তু এবারও সে তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে এবার সবনিম্নœ কোটা দুই হাজার থেকে সর্বশেষ এক হাজার বহাল রাখা হয়েছে। অর্থাৎ একটি এজেন্সিকে মোট এক হাজার হজযাত্রীর ব্যবস্থাপনা করতে হবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো এজেন্সির অধীনেই এক হাজার হজযাত্রী নেই। এমনকি কোনো কোনো এজেন্সির মাধ্যমে একশরও নিচে হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। এ কারণে এবার একটি লিড এজেন্সির অধীনে অসংখ্য এজেন্সিকে একত্র হতে হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে এজেন্সিগুলোকে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে লিড এজেন্সি নির্ধারণ, মোনাজ্জেম নির্বাচন এবং সব এজেন্সির হজযাত্রীকে লিড এজেন্সিতে স্থানান্তর করতে হবে। এতে হজযাত্রীদের সেবা প্রদানে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন এজেন্সি মালিকরা।
বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকদের আহ্বায়ক আখতার উজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের জাতীয় হজনীতিতে রয়েছে এজেন্সিপ্রতি হজযাত্রীর কোটা সর্বনিম্ন ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ জন। কিন্তু সরকার আমাদের সৌদির বরাত দিয়ে জানাচ্ছে এবার সর্বনিম্ন কোটা হবে এক হাজার। যা হজনীতি বিরোধী। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গত বছর আড়াইশ’ হজযাত্রী থাকার পরও প্রায় সব এজেন্সিকে লিড এজেন্সির মাধ্যমে হাজী পাঠাতে হয়েছিল। এতে হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকদের নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এবার এক হাজারের বাধ্যবাধকতা থাকলে পুরো হজ ব্যবস্থাপনা ভঙ্গুর হয়ে যাবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আখতার উজ্জামান বলেন, এবার শত শত এজেন্সির হাজীদের বাড়ি ভাড়া করার জন্য মাত্র পাঁচজন প্রতিনিধি পাঠাতে বলেছে। যা অবাস্তব ও অসম্ভব একটি কাজ। প্রায় এক লাখ হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া মাত্র পাঁচজন কিভাবে করবে তা আমার বুঝে আসে না।
হাবের সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা এক হাজার করা হলে হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এ জন্য বিষয়টি এখনই সরকারের বিবেচনা করা উচিত। আমাদের দাবি সর্বনিম্ন কোটা একশ’ করা। তাও যদি না হয় যেন আগের বছরেরটা রাখা হয় সে বিষয়ে সরকারের জোর প্রচেষ্টার আহ্বান জানান তিনি।
হাবের সাবেক সহসভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এজেন্সি মালিকরা খুবই চিন্তায় আছে। তারা এটা কোনোভাবেই মানবে না। এবার বেশির ভাগ এজেন্সির অধীনে ৪০-৫০ জন করে হজযাত্রী আছে। একশ’র বেশি হজযাত্রী আছে সর্বোচ্চ ২০টি এজেন্সির। আড়াই শতাধিক হজযাত্রী আছে ৪-৫টি এজেন্সির। এক হাজার হজযাত্রী কোনো এজেন্সিরই নেই। ফলে একটি লিড এজেন্সির অধীনে ১৫-২০টি এজেন্সির হজযাত্রী দিতে হবে। এতে হজযাত্রীদের সেবায় চরম বিপর্যয় দেখা দেবে। হজযাত্রী অন্য এজেন্সির কিন্তু কোনো সমস্যা হলেই লিড এজেন্সিকে দায়ী করা হবে। এ জন্য কোনো এজেন্সিই এ দায় নিতে চায় না। সরকারের উচিত সর্বনিম্ন একশ’ জন করা, না হলে গত বছরের মতো আড়াইশ’ করা। এটি যদি সৌদি সরকারের সাথে বসে সরকার ঠিক করতে না পারে তাহলে হজে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা