হাসিনা ও মঈনসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে
পিলখানা হত্যাকাণ্ড- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শহীদ সেনাকর্মকর্তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আইনজীবী এস এম তাসমিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগ দায়েরের পর আইনজীবী তাসমিরুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তা হত্যার সাথে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার সামঞ্জস্যতা পেয়েছি। এর সাথে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দোসররা জড়িত ছিলেন। শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সঙ্কটের মুখে ফেলার জন্য এবং তার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য আমাদের বৃহৎ এবং শক্তিশালী বাহিনীকে ধ্বংস করতে এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। আজ আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেছি। তিনি বলেন, আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছি তার মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা রয়েছেন। আমাদের অভিযোগ খুবই সুস্পষ্ট। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও তৎকালীন বিডিআর- এই দু’টি বাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সঙ্কটের মুখে ফেলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠার জন্য দেশপ্রেমিক এবং দক্ষ অফিসারদেরকে খুন করা হয়েছে। তাদের লাশে আগুন দেয়া হয়েছে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে আটক করে জিম্মি করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। এই সব কিছুই মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার মতো। তাই কমিশন গঠনের মাধ্যমে এ ঘটনার বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগ দায়ের করার পর ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ধ্বংসের নীলনকশা প্রণয়ন করে। সেই লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রথম শিকারে পরিণত হয় বাংলাদেশ রাইফেলসে সে সময় কর্মরত পেশাদার, সৎ-দক্ষ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর অফিসারদের একটি অংশ। শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর সেসব দেশপ্রেমিক অফিসারদের নিজের স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে প্রধানতম অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি ওই সেনা অফিসারদের এবং তাদের পরিবারের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করে নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার পরিকল্পনা করেন। সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের নেতৃত্বে, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অন্য আসামিরা ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। এ ঘটনায় মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।
তারা বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক বীর ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আরো একবার নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করি। ফিরে পেয়েছি বাকস্বাধীনতা। আজকে নতুন করে পেয়েছি বাঁচার আশা। সরকারের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, পিলখানা গণহত্যার তদন্ত ও বিচার সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে দায়েরকৃত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যেসব নিরীহ, নিরপরাধ ও নির্দোষ বিডিআর জওয়ানদের বছরের পর বছর কারাগারে আটক রাখা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি প্রদানে যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবেন। আমরা একইসাথে ২৪ এর জুলাই আন্দোলনসহ বিগত ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার সব শহীদ, আহত-পঙ্গু ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা