গণহত্যা আড়ালে শেখ হাসিনার নির্দেশে বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট
তদন্ত সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে পলক- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় গণহত্যার ঘটনা আড়াল করতে শেখ হাসিনার নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয় বলে স্বীকার করেছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এমন জবানবন্দী দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির, অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল ও শুনানি নিয়ে আদালতের আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর এসব তথ্য জানান।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পলক স্বীকার করেছেন যে ইন্টারনেট বন্ধ করে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর ইন্টারনেট বন্ধের এ নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় কোনো দুর্ঘটনার কারণে বা কোনো ভবনে আগুন লাগার কারণে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল না। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের ও আন্তর্জাতিক ইন্টারনেটের সব গেটওয়ে বন্ধ রাখা হয়। ইন্টারনেট বন্ধ রাখার উদ্দেশ্য ছিল গণহত্যার বিষয় যেন কেউ জানতে না পারে। সুতরাং ইন্টারনেট বন্ধ করার মাধ্যমে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা গোটা দুনিয়া থেকে আড়াল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মিথ্যা অজুহাত দেয়া হয়েছিল যে ক্যাবল পুড়ে গিয়েছিল, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। শেখ হাসিনার নির্দেশে এবং তার পরবর্তী কমান্ডার জুনাইদ আহমেদ পলকের পরবর্তী নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়। বিটিসিএল ও বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল সিএলসি এরাও চিঠি দিয়ে জানিয়েছে তারা কার কার নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। এই রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালানো হয়েছিল।
সাবেক পুলিশ প্রধানসহ ৩ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ : জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকার সাবেক পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল কাফি, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো: শাহিদুর ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২৬, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে তাদের পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ, গাজী এম এইচ তামিম, আবদুল্লাহ আল নোমান, এস এম মঈনুল করিম, শাইখ মাহদী।
৮ কর্মকর্তার তদন্ত দুই মাসে শেষ করার নির্দেশ : গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) জিয়াউল আহসানসহ ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
এর আগে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব:) জিয়াউল আহসানসহ ৮ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্য পাঁচজন হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো: আব্দুল্লাহ আল কাফি, ডিএমপির মিরপুর জোনের সাবেক ডিসি মো: জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো: শাহিদুর ইসলাম, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান এবং ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো: আরাফাত হোসেন।
গত ২০ নভেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ প্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা