নির্বাচন নিয়ে সরকারের বক্তব্য অস্পষ্ট ও হতাশাজনক : বিএনপি

নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দেয়া বক্তব্য ‘অস্পষ্ট এবং হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেছে বিএনপি। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে দলটি।
গতকাল দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এমন অবস্থানের কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে যে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। তার বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হয়নি। তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথম অংশ অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, আবার তার প্রেসসচিব বলেছেন, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটা পরস্পর বিরোধী। তিনি বলেন, এই ধরনের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য আরো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটি মনে করে যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেছে, সেহেতু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিলম্বের প্রয়োজন নেই। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। জনগণ এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে। সভা মনে করে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত।
তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে তার রোডম্যাপ দিয়ে দেবেন। কিন্তু সেটা তিনি দেননি। এটা আমাদেরকে কিছুটা হতাশ করেছে এবং একই সাথে জাতিকেও কিছুটা হতাশ করেছে।
গত বুধবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত জানাতে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে দলটি।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রেসসচিবের বক্তব্য সাংঘর্ষিক। তারা ঠিক বুঝতে পারছেন না, কোনটা সঠিক।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ই্উনূস যে সময়ের কথা বলছেন এটাতে কি মনে হচ্ছে যে তারা সময়ক্ষেপণ করছেন কিংবা বিষয়টা কি আপনাদের কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যৌক্তিক তো মনে হয়নি। আমরা বলেছি তো; এটাতে আমরা হতাশ হয়েছি।’
পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে যে, নির্বাচিত-পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনের একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম।’
মির্জা ফখরুল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে মোট ৫৫টি দফায় সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে প্রস্তাবনায় এবং তফসিলে ব্যাপক পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করার মধ্য দিয়ে সংবিধানকে একদলীয় শাসন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের প্রধানতম হাতিয়ারে পরিণত করা হয়। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে গণতন্ত্রকে বেহাত করে দেয়া হয়। মাননীয় আদালত রায় ঘোষণার সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণসহ ওই সংশোধনীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং কিছু অংশ সংরক্ষণ করেছেন এবং অধিকাংশ আগামী সংসদের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু রিট আবেদনকারীগণ, সংযুক্ত হওয়া রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্যান্য অংশীজন এবং দেশের আপামর জনসাধারণ আদালতের কাছে আরো বেশি কিছু সিদ্ধান্ত আশা করেছিল। তিনি বলেন, রিট আবেদনকারীগণ পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার প্রার্থনা করেছিলেন। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তিগণ রিটের পক্ষে ইন্টারভেনর হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন।
আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, নির্বাচিত পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে আদালতের রায় ব্যাখ্যা করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ এবং কিছু তফসিল যেগুলো আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে সংযুক্ত করেছিল সেগুলোকে ঘোষণা দিয়েছিল যে, এসব অপরিবর্তনীয় থাকবে। সংবিধান এমন কোনো দলিল না যে, সেটা পরিবর্তন করা যাবে না। আদালত এসবকে অবৈধ ঘোষণা করে বিলুপ্ত করেছেন। বাকি বিষয়গুলো আদালত সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এখানে কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে বলে হয়তো আদালত মনে করেছেন। সুতরাং রাজনৈতিক ভাবে নির্বাচিত পরবর্তী সংসদ যাবতীয় সংশোধনী বিবেচনা করবে ।
মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া অন্য পরিষদগুলো ভেঙে দিয়েছে । ইউনিয়ন পরিষদও অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যিনি সংবিধানকে অবৈধভাবে সংশোধন কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি করবেন কি না প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন সময় আসবে তখন তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।