২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ইসলামী ব্যাংকের ১০৯২ কোটি টাকা আত্মসাৎ

এস আলমের ছেলেসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা, ১২৫ অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ

-

জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে এক হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের (এস আলম) ছেলে আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক ইয়াসির আরাফাত বাদি হয়ে এ মামলা করেন।
মহাপরিচালক মো: আক্তার হোসেন বলেন, অনুসন্ধান টিমের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক থেকে অনুমোদনের পর মামলা হয়েছে। যেখানে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান, এমডি, একাধিক পরিচালকসহ ৫৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই ও এস আলম গ্রুপের বেতনভুক্ত কর্মচারী মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম সারওয়ার চৌধুরীকে সামনে রেখে মাত্র তিন বছরে ওই টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মামলায় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডা: তানভীর আহমদ, সাবেক পরিচালক ড. মো: ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, ড. মো: সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মো: জয়নাল আবেদীন, খুরশীদ উল আলম, মো: কামরুল হাসান, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক ডিএমডি ও প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো: মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক ডিএমডি কাজী মো: রেজাউল করিম, বর্তমান ডিএমডি পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো: আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: ফরিদ উদ্দিন, কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপক আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও বর্তমানের এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাকতাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাকতাই শাখা প্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: মনজুর হাসান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী এবং দক্ষিণের অপর জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ।
ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আসামি করা হয়েছে মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সওয়ার চৌধুরীকে, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংকের মোহাম্মদ এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং করপোরেশানের মোরশেদুল আলম, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, চেমন ইস্পাতের পরিচালক মুহা: নজরুল ইসলাম, এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের এমডি মো: আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, রেইনবো করপোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, আনছার এন্টারপ্রাইজের দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহম্মেদ সালাম শুনানি করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহম্মেদ সালাম শুনানি করেন। আনছারুল আলম চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম, ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের এমডি মো. রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সর মালিক এম এ মোনায়েম, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউজের মালিক এরশাদ উদ্দিন, জাস্ট রাইট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো: গিয়াস উদ্দিন, এক্সক্লুসিভ বিজনেস হাউজের মালিক ফেরদৌস আহম্মদ বাপ্পি, এনেক্স বিজনেস কর্নারের মালিক আনোয়ারুল আজম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউজের মালিক মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ মামুন, চৌধুরী বিজনেস হাউজের মালিক মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী এবং ডিলাক্সিয়াম ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক কাজী মেজবাহ উদ্দিন।
মামলার এজাহারে যা আছে : ২০২১ সালে নভেম্বর মাসে এস আলম সংশ্লিষ্ট মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সরোওয়ার চৌধুরী ইসলামী ব্যাংকের চাকতাই শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করেন। পরের মাসে ওই শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই না করে তা অনুমোদন করেন। মিথ্যা তথ্যের ওপর জাল কাগজ তৈরি করে এই ঋণের জন্য আবেদন করে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ। এরপর কোনো প্রকার যাচাই না করেই পূর্বপরিকল্পনামাফিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেই আবেদন অনুমোদন করেন। প্রথমে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করা হলেও পরে সেটা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন : দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চাকতাই শাখাসহ প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য ব্যাংক থেকে জব্দ করা রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা যায় মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে অপকর্ম ঘটিয়েছেন। আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ২০২১ সালের ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথমপর্যায় ৮৯০ টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে বিনিয়োগ সীমা বাড়িয়ে হাজার কোটি এবং ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বরে ১১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়। যার মধ্যে আসল ৯৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ও মুনাফা ১২৫.৮০ কোটি টাকাসহ ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মুরাদ এন্টারপ্রাইজ যে বিনিয়োগের কথা বলে ঋণ নিয়েছিলেন তা না করে এস আলম তার বিভিন্ন ব্যবসায় ঋণ পরিশোধও করেছেন। এর মাধ্যমে তারা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।
১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ : এ দিকে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের (ফ্রিজ) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক ইব্রাহীম মিয়া এ নির্দেশ দেন। এ দিন দুদকের উপপরিচালক (টিম লিডার) মো: আবু সাঈদ এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহম্মেদ সালাম শুনানি করেন। পরে তিনি বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১ (এক) বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ১২৫টি হিসাবে জমাকৃত ২২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৯১ টাকা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। এসব হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক। আবেদনে আরো বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন উদ্দেশ্যে ব্যাংক বিভিন্ন হিসাবে জমা রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় এ অর্থ উত্তোলন করে বিদেশে পাচার বা গোপন করার আশঙ্কা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
নিজেদের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করল যুক্তরাষ্ট্র! হাসিনা যত টাকা লুট করে নিয়ে গেছে তা দিয়ে ১০০টি পদ্মা সেতু তৈরি করা যেত : টুকু খুলনায় হত্যাসহ ৪ মামলায় সালাম মুর্শেদীর জামিন নামঞ্জুর কারো লুটপাটের দায়ভার আমি নেব না : মেজর হাফিজ ‘যারা চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করছে দেশের মানুষ তাদেরকেও বর্জন করবে’ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার দিয়ে এনসিএলের ফাইনালে ঢাকা মেট্রো দেবিদ্বারে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ রক্ষার দাবি স্থানীয়দের ‘পোল্যান্ড গেলে নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করা হবে’ জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ : সিলেটে জামায়াত আমির নিরাপত্তা নিশ্চিতে যা প্রয়োজন তুরস্ক করবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিদান উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক

সকল