ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত শতাধিক
- নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থীদের সংঘর্ষে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। সংঘর্ষ চলাকালে ধারালো অস্ত্র ও বাঁশের লাঠির আঘাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আহতদের ৩৫ জনকে টঙ্গী সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং ৫৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ চলে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল বেলা ২টায় ১৪৪ ধারা জারি করার পর দখলে থাকা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানের দখল ছাড়তে বাধ্য হন। ইজতেমা ময়দানে দুই গ্রুপের রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনায় আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল জুবায়েরপন্থী সদস্য মুফতি আমানুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে ইজতেমা একটাই হবে। সরকারও এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করবে। সাদপন্থীরা ইজতেমা মাঠ না ছাড়লে টঙ্গী অভিমুখে লংমার্চ করা হবে।
এ দিকে ইজতেমা ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ময়দানে ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহতদের ওপর হামলার ঘটনার পর গতকাল সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন। বর্তমানে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নি-িদ্র নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মোতায়েন রয়েছে।
গতকাল তাবলিগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ইজতেমা ও আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ৩টায় সাদপন্থী সদস্যরা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই জোড় ইজতেমা করার জন্য উত্তরপাশের টিনের বেড়া ও বিদেশী অতিথিদের কামরার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় ময়দানের জিম্মাদারিতে নিয়োজিত জুবায়েরপন্থীদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। গতকাল বেলা দেড়টা পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে হামলা পাল্টা হামলা চলে। বেলা দেড়টায় পুলিশের পক্ষ থেকে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকায় সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয় পক্ষের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে ময়দান ছাড়ার সিদ্ধান্ত দিলে বেলা ৩টা থেকে সাদপন্থ’ীরা ময়দান ত্যাগ করতে শুরু করেন। এদিকে সংঘর্ষে নিহত তিনজন জুবায়েরপন্থী বলে তারা দাবি করছেন।
জুবায়েরপন্থী মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, গত মঙ্গলবার মাওলানা জুবায়ের সাহেবকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, বুধবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে বিরোধ মীমাংসায় গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে সন্তোষজনক একটি ফয়সালা হবে। মঙ্গলবার রাত আড়াইটায় কাকারাইল মসজিদে চলমান সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জুবায়েরপন্থীদের সমন্বয়কদের বৈঠক চলছিল। ওই সময় খবর আসে সাদপন্থীরা সারা দেশ থেকে টঙ্গী ময়দানের পশ্চিম পাশে তাদের নতুন, পুরাতন সমস্ত সাথী জমা করে ধারালো অস্ত্রসহ টঙ্গী ময়দানের ফরেন টেন্টের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, ‘সাদপন্থীরা কোনোভাবেই প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি কাজে নিয়োজিত ঘুমন্ত সাথীদের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায়। এতে অনেক সাথী আহত হয় এবং ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরো একজন নিহত হন। এ সময় জুবায়ের গ্রুপের শতাধিক সাথী মারাত্মক আহত ও মুমূর্ষু অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অপরদিকে সাদপন্থী মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক মুফতি মুয়াজ বিন নূর জানান, রাত ৩টার দিকে জুবায়েরপন্থীরা টঙ্গীর ময়দানের পশ্চিম পাশ থেকে ব্রিজের ওপর তাদের সাথীদের দিকে ইট পাটকেল ও আগুনের মশাল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। তখন সাদ সাহেবের অনুসারীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এরপর খবর পেয়ে সাদ অনুসারী সাথীরা ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে ময়দানে প্রবেশ করে। তখন তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে সাথীদের ওপর আঘাত করে। এতে অসংখ্য সাথী আহত হয়। তবে হতাহতের সংখ্যা বা নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি বলে তিনি জানান।
নিহত চারজনের পরিচয় প্রকাশ : এদিকে ইজতেমা ময়দানে নিহত তিনজনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে জুবায়েরপন্থীরা। নিহতরা হলেন, বাচ্চু মিয়া (৭০), তাইজুল (৬৫) ও বেলাল (৬০)। বাচ্চু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দুর গ্রামে। নিহত বেলালের বাড়ি রাজধানীর দক্ষিণ খান থানার বেরাইদ এলাকায়, তার বাবার নাম আব্দুস সামাদ এবং নিহত তাইজুল ইসলামের বাড়ি বগুড়া জেলায়। তারা সবাই জুবায়ের সাহেবের সাথী। ইজতেমা ময়দানে সাদপন্থীদের রাতের হামলায় তারা নিহত হন বলে জানান জুবায়েরপন্থী মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ। হামলায় শূরায়ে নেজামের আরো শতাধিক সাথী আহত হয়েছেন বলেও তার দাবি।
এর আগে গতকাল সকালে সাদপন্থী ওয়াটস অ্যাপ মিডিয়া গ্রুপে তাদের দুইজন সাথী নিহত হওয়ার খবর দিলেও পরে সেটি গ্রুপ থেকে ডিলিট করে দেয়া হয়।
হামলার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ : গতকাল বেলা ১২টায় জুবায়েরপন্থীরা ময়দানের পূর্বপাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করলে ময়দানের ভেতর থেকে সাদপন্থীরা বাঁশের লাঠি নিয়ে ধাওয়া দিলে ফের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে সংঘর্ষ টঙ্গী সরকারি জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
বেলা দেড়টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত অবরোধ ও সংঘর্ষ চলে। তাবলিগের দুই গ্রপের সংঘর্ষে মহাসড়কের উভয়পাশে বেলা ২টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ময়দানের চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাঁজোয়া যানসহ অবস্থান নেয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা, বিজিবি, র্যাব, এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলাা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ইজতেমা ময়দানে মোতায়েন করা হয়েছে।
কাকরাইলে সংবাদ সম্মেলন : বাংলাদেশে ইজতেমা একটাই হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাবলিগের শূরায়ে নিজামের সদস্য মুফতি আমানুল হক। সরকারও এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি। গতকাল বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি।
আমানুল হক বলেন, রাতের আঁধারে লেবাসধারী সাদপন্থী হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা ধারালো চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের চার শতাধিক মুসল্লি আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনো বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আগামীকাল ইজতেমা ময়দান অভিমুখী লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে মুফতি আমানুল হক বলেন, আজ (গতকাল) সন্ধ্যার মধ্যে যদি সাদ বাহিনী মাঠ ছেড়ে না দেয় তাহলে আগামীকাল (আজ) সারা দেশ ও ঢাকার ৮ পয়েন্ট থেকে আমরা লংমার্চ করে টঙ্গীর মাঠে গিয়ে সমবেত হয়ে জোহরের নামাজ আদায় করব। তারা যদি মাঠ ছেড়ে দেয় তবে লংমার্চ হবে না। তবে তাদের নামে হত্যা মামলা করব। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই।
এ সময় ওয়াসিফুল ইসলাম, ওসামা, আব্দুল্লাহ মনসুর, আজিম উদ্দিনসহ মোট ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তাবলিগ জামায়াতের এই শীর্ষ মুরুব্বি। তিনি বলেন, সরকার তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক যাতে তারা আর এমন ফেতনা না করতে পারে। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বর্তমান সরকারকে একটা বিপদের মুখে ফেলে দেয়ার চক্রান্তের বীজ হলো সাদিয়ানী বাহিনী। তারা ভারতের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। কারণ তাদের আমির ভারতের। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই তাদের বিচার করা হোক। এই কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীতে কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো সাদিয়ানীকে আসতে দেয়া হবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা