ভোটের মাধ্যমে জনসমর্থন পাওয়াই হলো আস্থার প্রতিফলন : তারেক রহমান
- নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন পাওয়াই হলো জনগণের আস্থার প্রতিফলন। ভোটের মাধ্যমে আস্থা আমাদের অর্জন করতে হবে। সেই ভোটে আস্থা অর্জন করতে হলে মুখে বললে তো হবে না। মানুষ জানতে চায়, আমরা তাদের জন্য কী করব।
তিনি বলেন, মানুষ যখন জানতে পারে আপনি বিএনপির কর্মী, তখনই আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তোমরা এটার কী করবে বা ওটার কী করবে? আমরা আস্থার একটা পর্যায়ে আছি। আমাদের এই আস্থাকে ধরে রাখতে হবে।
গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৩১ দফা কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, আগামীর ভোটই শুধু ভোট না। অনেকে বলে, তারেক রহমান শুধু ভোট ভোট করে। আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব। আগামীর নির্বাচন করেই কী আপনি ক্ষান্ত দিয়ে দেবেন। মানুষ জানতে চায় আমরা কী করব। এখন শুধু কথায় চিড়া ভিজবে না।
তিনি বলেন, জনগণকে জবাব দিতে হবে। তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। নির্বাচিত হলে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেখাতে হবে আপনি কী কী করতে পেরেছেন। সবটা হয়তো আমরা পারব না, তবে যতটুকু করব তা জনগণের কাছে তুলে ধরব। তখন জনগণ এর বিচার করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। আর কোনো রাজনৈতিক দলের এত মানুষ মারা গেছে কি না, জানি না আমরা। গত ১৬ বছরে আমাদের দলের বহু নেতাকর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বললে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাই তাদের অত্যাচারে মারা গেছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব যদি তাদের মতো দিই, তাহলে তো হবে না। তারা অধম বলে আমরা অধম হবো নাকি। আমরা এর জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেবো। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের জবাব দেয়া হবে।
তারেক রহমান বলেন, এখানে যারাই আছেন প্রত্যেকের নামে একটি হলেও গায়েবি মামলা রয়েছে। এত নির্যাতন সহ্য করে জেল খেটেছেন আপনারা, কষ্ট করেছেন। কেন আপনারা এমন কাউকে সুযোগ দেবেন যে আপনাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দেবে। কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সেই সুযোগ দেবেন আপনারা?
তিনি বলেন, মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদেরও জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আপনাদেরও বুঝতে হবে কী করলে জনগণ আপনাকে আরো পছন্দ করবে। আপনার অধীনে অনেক নেতাকর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের ‘দুষ্টু বাচ্চাদের’ যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টুরা আছে, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টুদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়তো দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। এটি জনগণের দায়িত্ব না। আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব। মানুষ চায় না এমন কাজ কেন আপনি করবেন, যেখানে আপনাদের আস্থার সঙ্কট দেখা দেবে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এর অর্থ হলো, জনগণের বাকস্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য দেশের মানুষের সহযোগিতায় দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দফতরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ।
৩১ দফা সফল করার মাধম্যে জুলুম-নির্যাতনের জবাব দেয়া হবে
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানায়, গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ অধম হলেও আমরা অধম হবো না। আমরা আমাদের ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের গত ১৫-১৬ বছরের গুম, খুনসহ সব জুলুম-অত্যাচারের জবাব দেবো। তিনি বলেন, এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশ নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। জনগণের বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে নেতাকর্মীদের প্রতি এমন কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ইতঃপূর্বে আমাদের ঘোষিত ট্যাক-ব্যাক বাংলাদেশের কাজ এখনো শেষ হয়নি। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আগামীর নির্বাচন অনেক কঠিন হবে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, ভোটের মাধ্যমে সমর্থন পাওয়া আস্থার প্রতীক। বিএনপির সমাবেশে ভিড় থাকে তা জনগণের আস্থার প্রকাশ। এই আস্থা ধরে রাখতে হবে। আর আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে ভোটের কথা বলবো এটাই স্বাভাবিক।
বুধবার দিনব্যাপী বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর এবং টাঙ্গাইল জেলার কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দুই মহানগর ও এক জেলায় পৃথকভাবে আয়োজিত কর্মশালা হলেও তিনি এর আগে একই সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের ৩১ দফা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ওই পৃথক কর্মশালায় তিন হাজারের কমবেশি নেতাকর্মী অংশ নেন বলেও জানান তিনি।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির কর্মশালা আয়োজন করা হয় নগরের তাজউদ্দীন আহমেদ অডিটরিয়ামে। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএনপির
যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ড. মাহাদী আমিন। বক্তব্য রাখেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, হালিমা আক্তার আরবী, শাম্মী আক্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, ডা: মাজহারুল আলম ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল করিম রনিসহ গাজীপুর মহানগর বিএনপি এবং সব অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা