সিরিজ জিতে বাংলাদেশের ইতিহাস
- ক্রীড়া প্রতিবেদক
- ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ম্যাচ শেষ হতে তখনো কয়েক ওভার বাকি! রস্টন চেজ ও আকিল হোসেন যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে রান বের করতে হাঁসফাঁস করছেন তখন বাড়ির পথ ধরেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমর্থকরা। ৪২ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর এমন চিত্র অনুমেয়ই ছিল। চেজ ও আকিল মিলে প্রাণান্তকর চেষ্টা করলেন। দু’জনের লড়াই কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে। সেন্ট ভিনসেন্টে দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ তে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং পেয়ে শামীমের ১৭ বলে ৩৫ রানে ভর করে ১২৯ রান করে লিটন দাসের দল। জবাবে স্বাগতিক দল থেমে যায় ১০২ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অল্প রানে আটকে দিতে ১৬ রানে তিন উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার তাসকিন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের দুই ম্যাচ হেরে বিব্রতকর রেকর্ডে নাম উঠেছে ক্যারিবীয়দের। তাদের ২৭ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-২০ সিরিজ জিতেছে লিটন দাসের নেতৃত্বে। এই হারে সিরিজ হারানোর পাশাপাশি টি-২০তে সবচেয়ে বেশি হারের রেকর্ড গড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ক্যারিবীয়রা হেরেছে ১০৮ ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরে টি-২০তে ১০৭ ম্যাচ হারার রেকর্ডে দুইয়ে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যানের দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ঢের এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-২০তে ১০৮ হারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৯৩ ম্যাচ জিতেছে উইন্ডিজ। ২১৫টি-২০তে ৯৩ ম্যাচ জেতায় ক্যারিবীয়দের সাফল্যের হার ৪৩.২৬ শতাংশ। ২০১২ ও ২০১৬ সালে দুইবার টি-২০ বিশ্বকাপও জিতেছে তারা। অন্য দিকে বাংলাদেশ ১৮১টি-২০ খেলে জিতেছে ৭০ ম্যাচ। সাফল্যের হার ৩৮.৬৭ শতাংশ।
টি-২০তে ম্যাচ হারের সেঞ্চুরি করেছে চার দল। শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে হেরেছে ১০৪ ও ১০৩টি। সবশেষ আফগানিস্তানের কাছে জিম্বাবুয়ে হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। এ বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশে বাংলাদেশের বসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেন্ট ভিনসেন্টে আগামীকাল সিরিজের তৃতীয় টি-২০তে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ম্যাচ জিতলে উইন্ডিজ এড়াবে ধবলধোলাই। তাতে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলই ১০৮ ম্যাচ হেরে টি-২০তে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারের রেকর্ড গড়বে যৌথভাবে।
বিজয় দিবসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের পর সিরিজ জয়ে চোখ ছিল টাইগারদের। ম্যাচের আগের দিন বিসিবির এক ভিডিওতে সেটাই বলেছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। তাই ব্যাট হাতে বাঁ হাতি ব্যাটার অবদান রাখলেন দারুণভাবে। সৌম্য সরকার, লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিমরা যেখানে দাঁড়াতেই পারছিলেন না সেখানে ১৭ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন শামীম। তাতে বাংলাদেশের পুঁজি ১০০ পেরিয়ে ১২৯ রানে থেমেছে। শামীমের আগে বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকের আলী অনিক।
এরপর তাসকিনের হাত ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেন লিটন বাহিনী। তৃতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই ব্রেন্ডন কিং ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে ফেরান তাসকিন। সেখান থেকেই বাংলাদেশের জয়ের গল্প শুরু। এরপর একে একে যোগ দিলেন মাহেদী, রিশাদ, হাসানরা। তাদের সবার দাপুটে বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেমেছে মাত্র ১০২ রানে। বাংলাদেশও জয় পেয়েছে অনায়াসে।
সেন্ট ভিনসেন্টে জয়ের জন্য ১৩০ রান তাড়ায় ভালো শুরুই পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হাসান ও মাহেদীর প্রথম দুই ওভার থেকে ১৯ রান এনেছিলেন ব্রেন্ডন কিং ও জনসন চার্লস। তবে তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে কিং ও আন্দ্রে ফ্লেচারের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি দিয়েছেন। পাওয়ার প্লেতে চার্লস ও নিকোলাস পুরানের উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেন অফ স্পিনার মাহেদী।
রভম্যান পাওয়াল ও রোমারিও শেফার্ডও ফিরেছেন দ্রুতই। মধ্যে পাওয়েলের ক্যাচ মিস করে আঙুলের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন সৌম্য সরকার। ৪২ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে তোলেন চেজ ও আকিল। শুরুতে সাবধানী ব্যাটিং করলেও শেষের দিকে এসে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী হন দু’জনে। তবে চেজ ৩২ ও শেষ ব্যাটার হিসেবে আকিল ৩১ রানে ফিরলে ২৭ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। তাসকিন তিনটি, তানজিম, রিশাদ ও মাহেদী দু’টি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে দ্রুতই লিটন, তানজিদ ও সৌম্যর উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সফরকারীদের এগিয়ে নিয়েছেন মিরাজ। দু’বার জীবন পেলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। আলজারি জোসেফের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে কিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ২৫ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে। প্রমোশন পেয়ে ছয়ে নামলেও পাঁচ রানের বেশি করতে পারেননি রিশাদ।
মেহেদী ও জাকের মিলে বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। যদিও দলের রান একশ হওয়ার আগে ২১ রানে জাকের ও ১১ রান করে ফিরেছেন মাহেদী। শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন শামীম। দু’টি করে চার ও ছক্কায় ২০৫.৮৮ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন। তার ব্যাটেই মূলত ১২৯ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে মোতি দু’টি উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১২৯/৭ (লিটন ৩, সৌম্য ১১, তানজিদ ২, মিরাজ ২৬, জাকের ২১, রিশাদ ৫, মাহেদী ১১, শামীম ৩৫*, তানজিম ৯*; আকিল ১/১৬, চেস ১/৮, জোসেফ ১/২১, মোতি ২/২৫, ম্যাককয় ১/৩২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৮.৩ ওভারে ১০২ (কিং ৮, চার্লস ১৪, ফ্লেচার ০, পুরান ৫, চেইস ৩২, পাওয়েল ৬, শেফার্ড ০, আকিল ৩১, মোতি ০, জোসেফ ০, ম্যাককয় ১*; হাসান ১/২৩, শেখ মাহেদী ২/২০, তাসকিন ৩/১৬, তানজিম ২/২২, রিশাদ ২/১২, মিরাজ ০/৮)।
ফল : বাংলাদেশ ২৭ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে।
ম্যাচ সেরা : শামীম হোসেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা