১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সিরিয়ায় যুদ্ধ শেষ হয়নি : জাতিসঙ্ঘ

-


বিরোধী যোদ্ধারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করলেও সিরিয়ায় যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি বলে সতর্ক করেছেন দেশটির বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন। তিনি দেশটির উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক সমর্থিত সশস্ত্র দল এবং কুর্দি যোদ্ধাদের লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। গত মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিশেষ দূত বলেন, ‘একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার আগে গত দুই সপ্তাহে সেখানে ব্যাপক সঙ্ঘাত হয়েছে।’
আলজাজিরা জানায়, সেখানে যুদ্ধ বাড়াটা বিপর্যয়কর হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। বাশার আল আসাদকে উৎখাতের পরও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এএনএ) এবং কুর্দিদের নেতৃত্বে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) সাথে লড়াই চলছে। ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সিরিয়ায় যে জোট গঠন করা হয়েছিল, তার প্রধান মিত্র এসডিএফ। দলটি পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্বে লড়াই করে।

এ দিকে তুরস্ক ওয়াইপিজিকে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে দেখে। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের দল পিকেকে প্রায় ৪০ বছর ধরে তুরস্কের সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করছে। গত সপ্তাহে এসএনএর যোদ্ধারা এসডিএফের কাছ থেকে সিরিয়ার উত্তরের শহর মানবিজ দখল করে। এরপর তারা ফোরাত নদীর ধরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে পেডারসনের বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, উত্তর সিরিয়ায় যে যুদ্ধবিরতি চলছে, সেটা এ সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মিলার আরো বলেন, ‘আমরা সামনের পথ নিয়ে এসডিএফের সাথে, তুরস্কের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।’ কোনো পক্ষই সিরিয়ায় সঙ্ঘাত বৃদ্ধি দেখতে চায় না।

এক যুগ পর দামেস্কে উড়ল ফ্রান্সের পতাকা : রয়টার্স জানায়, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দূতাবাসে ১২ বছরের মধ্যে গত মঙ্গলবার প্রথম পতাকা উড়িয়েছে ফ্রান্স। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে এই এক যুগ ধরে ফরাসি দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ৯ দিন আগে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর এখন সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ক তৈরি এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার হওয়ার মধ্যে ফ্রান্স আবার তাদের দূতাবাসে পতাকা ওড়াল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের নেতাদের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে। দামেস্কে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম ও এর নেতা আহমদ আল-শারা ওরফে আল-জুলানির নেতৃত্বাধীন নতুন কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে ধীরে ধীর নতুন চ্যানেল খুলে দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। ফ্রান্স ও ব্রিটেন সোমবারই শারার সাথে বৈঠক করতে সিরিয়ায় দল পাঠিয়েছে। জার্মানিও সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের সাথে বৈঠক করার পরিকল্পনা করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মঙ্গলবার সিরিয়ার নেতাদের সাথে যোগাযোগ করবে বলে জানিয়েছে। ফ্রান্স এ দিন সিরিয়ার একদল কূটনীতিক পাঠায় সেখানকার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন তা খতিয়ে দেখার জন্য। দলটি সেখানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আবার ফেরত আসবে। তাই আপাতত দূতাবাসে পতাকা ওড়ানো হলেও কার্যক্রম এখনই শুরু হচ্ছে না। ফ্রান্স ২০১২ সালে সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল।

তার পতনের পর এখন সিরিয়ায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন জাতিসঙ্ঘের ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় সবার অংশগ্রহণভিত্তিক এবং বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে বলে জানিয়েছে ফ্রান্স। সিরিয়ায় শারার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) দেশের নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোহাম্মদ আল-বশিরকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সিরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ওপর জারি থাকা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়াও জরুরি।
সোমবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল শারার সাথে বৈঠক করে। বৈঠকে শারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং সিরিয়ায় শরণার্থীদের ফিরতে সহায়তা করার জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, শারা আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। সানার প্রকাশ করা ছবিতে শারাকে স্যুট ও খোলা শার্ট পরে ব্রিটিশদের সাথে বৈঠক করতে দেখা গেছে। যা তার গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের সাবেক আল-কায়েদা সংশ্লিষ্টতা থেকে বেরিয়ে আসারই প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফলে এই বৈঠক পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সিরিয়ার নতুন নেতাদের সম্পর্কে নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে। তা ছাড়া,বাশার আল-আসাদের পতনের ফলে সিরিয়ায় রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব কমেছে। এটিও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য দামেস্কের সাথে যোগাযোগের চ্যানেল আবার উন্মুক্ত করার পথ খুলে দেয়ার সম্ভাবনা জাগাতে পারে।

সিরিয়ার মাউন্ট হেরমনে থাকবে ইসরাইলি বাহিনী : নেতানিয়াহু
রয়টার্স আরো জানায়, সিরিয়া সীমান্তবর্তী কৌশলগত মাউন্ট হেরমনে ইসরাইল থাকবে যতক্ষণ না কোনো নতুন ব্যবস্থা নেয়া হয়। মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ কথা বলেছেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পর ইসরাইলি সেনারা সিরিয়া ও ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমির মধ্যবর্তী নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলে প্রবেশ করে মাউন্ট হেরমনের দখল নেয়।
ইসরাইলি কর্মকর্তারা এ পদক্ষেপকে সীমিত ও অস্থায়ী বলে উল্লেখ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, এটি ইসরাইলের সীমান্ত সুরক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে। তবে সেনা প্রত্যাহারের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া হয়নি। গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সেনাদের শীতকাল পর্যন্ত মাউন্ট হেরমনে থাকার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার নেতানিয়াহু সামরিক কমান্ডার এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে মাউন্ট হেরমনে একটি কার্যক্রম পর্যালোচনা সভায় যোগ দেন।
সেখানে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো নতুন কোনো ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইডিএফ (ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) মোতায়েন রাখার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। মাউন্ট হেরমনে ইসরাইলের প্রবেশ ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর গঠিত বাফার জোনের আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে সমালোচনা করেছে বেশ কয়েকটি দেশ ও জাতিসঙ্ঘ। তারা সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা আরবি ভাষা শিখলে উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে বিসিএসের আবেদনে চিকিৎসকদের বয়স ৩৪ করা হোক : ড্যাব জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ শিক্ষার্থী গুপ্তহত্যায় ছাত্রশিবিরের উদ্বেগ যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি দাবি শিশু বিশেষজ্ঞদের ‘বাংলাদেশের উপজেলাসমূহের ডিজিটাল মানচিত্র প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের সেমিনার বাংলাদেশকে আরো ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা দেবে আইএমএফ তদন্তে বেরিয়ে এলো মা-মেয়ে হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী বিকল্প টুর্নামেন্টের চিন্তা করছে বাফুফে যাত্রীদের প্রতাশা পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা চুয়াডাঙ্গার বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে জখম

সকল