গোলান মালভূমিতে বসতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ইসরাইলের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯
অধিকৃত গোলান মালভূমিতে বসতি সম্প্রসারণ উৎসাহিত করতে একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরাইল। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকার পতনে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গোলান মালভূমির জনসংখ্যা দ্বিগুণ করতে চান বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল এ অঞ্চল দখল করেছিল। গোলান মালভূমিতে বর্তমানে ৩০টির বেশি ইসরাইলি বসতি রয়েছে। সব মিলিয়ে বসতিগুলোতে আনুমানিক ২০ হাজার মানুষ বাস করছেন। এ ছাড়া ওই এলাকায় দ্রুজ আরব গোষ্ঠীর প্রায় ২০ হাজার সিরীয় রয়েছেন। ইসরাইলের দখলে আসার পরও তারা এলাকা ছেড়ে যাননি। বাশার আল আসাদ সরকার পতনের পর গোলান মালভূমি ও সিরিয়ার মধ্যে একটি বাফার জোনে অবস্থান নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তারা বলেছে, দামেস্কে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।
বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনার ঘোষণা করেও নেতানিয়াহু রোববার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ার সাথে সঙ্ঘাতে জড়াতে চায় না ইসরাইল। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তাদের সিরিয়া নীতি নির্ধারিত হবে। ইসরাইলি বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হলেও তার তোয়াক্কা করে না তেলআবিব। এ বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, গোলান মালভূমির এ এলাকা আমরা ছাড়ব না। এখানে আমরা উন্নয়ন করব এবং আরো বসতি স্থাপন করব।
তবে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনায় আপত্তি জানিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বলেছেন, গোলান মালভূমিতে সম্প্রসারণের কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না তিনি। তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সিরিয়ার সাথে সঙ্ঘাত বাড়াতে ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান না বলে দাবি করেছেন নেতানিয়াহু। তাহলে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করে আবার ঠিক উল্টো কাজটিই বা কেন করছি! আমরা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট সঙ্কট মোকাবেলা করছি।
নেতানিয়াহুর এ ঘোষণার কিছুদিন আগেই সিরিয়ার কার্যত নতুন নেতা (ডি ফ্যাক্টো লিডার) আবু মোহাম্মদ আল- জোলানি সামরিক অবকাঠামোতে ধারাবাহিক ইসরাইলি হামলার সমালোচনা করেছিলেন। ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, ৮ ডিসেম্বর থেকে সিরিয়ায় ৪৫০টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই অন্তত ৭৫টি হামলা হয়েছে।
সিরিয়া টিভিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-জোলানি বলেছেন, ইসরাইলি হামলা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ঝুঁঁকি তৈরি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের সাথে সঙ্ঘাতে জড়াতে চায় না সিরিয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নতুন সঙ্ঘাতে জড়ানোর অবস্থা নেই। তার বক্তব্যের বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সিরিয়ায় চলমান হামলার বিষয়ে তাদের দাবি, চরমপন্থীদের হাতে অস্ত্র পৌঁছানো ঠেকাতে এ পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এক সপ্তাহ পর স্কুল চালু : সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে নাটকীয়ভাবে উৎখাতের এক সপ্তাহ পরই শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে গেছে। সিরিয়ার নতুন শাসকগোষ্ঠী স্কুল খোলার নির্দেশ দেয়ার পর তা কার্যকর হয়। এএফপি ও সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা বলেছে, ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়া পুনর্গঠনের জন্য দেশটির নতুন ‘ডি ফ্যাক্টো’ নেতা আহমাদ আল-শারা বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। বোমার আঘাতে দেশটির বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত হয়েছে অর্থনীতি। এখনো লাখ লাখ শরণার্থী সিরিয়ার বাইরে বিভিন্ন শিবিরে বসবাস করছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরব দেশগুলোর সাপ্তাহিক প্রথম কর্মদিবস রোববার দেশজুড়ে বেশির ভাগ স্কুল খুলেছে। তবে পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের ক্লাসে পাঠাচ্ছেন না। রোববার সকালে দামেস্কের একটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের আঙিনায় শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে অপেক্ষা করতে থাকে। স্কুল সেক্রেটারি রায়েদ নাসের নতুন সরকারের পতাকা ঝুলিয়ে দেয়ার সাথে সাথে তারা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়।
স্কুলের কোনোপ্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয়নি জানিয়ে নাসের বলেন বলেন, ‘সবকিছুই ভালো। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে স্কুলে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় সেবাগুলো নিশ্চিত করতে আমরা দুই-তিন দিন ধরে কাজ করেছি।’ শিক্ষার্থী সালাহ আল-দিন দিয়াব শ্রেণিকক্ষে পতাকা টাঙিয়ে দেয়। সে বলে ‘আমি ভীষণ খুশি এবং আশাবাদী। আগে ভয় পেতাম যে, আমাকে সামরিক বাহিনীতেই যোগ দিতে হবে। চেকপোস্টের কাছে গেলে আশঙ্কা থাকত মনে।’
ইরান ও রাশিয়া-সমর্থিত আসাদ সরকারের পতনের এক সপ্তাহ পর সিরিয়া যখন পুনর্গঠনের চেষ্টা শুরু করেছে, তখন তার প্রতিবেশী ও অন্যান্য বিদেশী শক্তিগুলো দেশটি নিয়ে তাদের নতুন অবস্থান কী হবে তা নিয়ে কাজ করছে। জাতিসঙ্ঘের সিরিয়াবিষয়ক দূত গেইর পেডারসেন রোববার বলেছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য তিনি দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার দ্রুত অবসানের আশা করছেন।
এদিকে দামেস্ক থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গত ৮ ডিসেম্বর ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) দখলের পর সিরিয়ার রাজধানীতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দৈনন্দিন জীবনেও মৃদু গতির সঞ্চার করেছে। ৫৬ বছর বয়সী তিন সন্তানের মা রাঘিদা ঘোসন বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরত পাঠাতে বলেছে। তিনি এএফপিকে বলেন, আগামী দু’দিনের মধ্যে ছোটরাও ফিরে যাবে।
একজন স্কুল কর্মচারী বলেন, ৩০ শতাংশের বেশি স্কুল ছাত্রছাত্রী রোববার ক্লাসে ফেরত আসেনি, তবে ধীরে ধীরে তাদের উপস্থিতি বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। তবে রোববার প্রশাসনিক কর্মীদের কাজে উপস্থিতি ছিল কম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশ্ববিদ্যালয় কর্মী বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক হতে এখনো সময় লাগবে। মূলত সিরিয়ায় কর্মসপ্তাহের প্রথমদিন রোববার অনেক লোকই স্বাভাবিকভাবে কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। ব্যবসায়িক জীবনও নতুনভাবে শুরু হয়েছে।
বিদ্রোহীগোষ্ঠী ভেঙে দেয়া হবে : সিরিয়ার মিলিটারি অপারেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আহমদ আল-শারা ওরফে আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি জানিয়েছেন, দেশের সব সশস্ত্র গোষ্ঠী ভেঙে দেয়া হবে। এমনকি এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সব সদস্যকে সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীতেও নেয়া হবে না। দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের পর্যালোচনার আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে আল-শারা নিশ্চিত করেছেন যে, ‘বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগ হবে না, কেবল কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তা (বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো থেকে নিয়োগ) বাধ্যতামূলক হবে।’
আল-শারা আরো বলেন, সিরিয়ায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনাধীন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘প্রধান অগ্রাধিকার হলো ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িগুলো পুনর্নির্মাণ এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনা।’ আল-শারা আরো নিশ্চিত করেছেন, ‘সিরিয়ায় সব গোষ্ঠী বিলুপ্ত হবে এবং নতুন সিরিয়ান রাষ্ট্র ছাড়া কারো হাতে অস্ত্র থাকবে না।’
এ দিকে সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত জারি করেছে আমদানির সুবিধার জন্য। এ সিদ্ধান্তের আলোকে আমদানিকারকেরা অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত পণ্য আমদানির জন্য দেশের বাইরে অর্থ পাঠাতে পারবেন। তবে অর্থপাচার-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় বিধির সাথে সাংঘর্ষিক হলে সেই আমদানিকারককে আইনের আওতায় আনা হবে।
আহমদ আল-শারা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনে নেতৃত্ব দেয়া হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান। এ গোষ্ঠীই গত সপ্তাহে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। যার মাধ্যমে আসাদ পরিবারের পাঁচ দশক ধরে চলা কঠোর শাসনের অবসান ঘটেছে।
এর আগে, গত শনিবার এইচটিএসের এ নেতা বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধ এবং সংঘর্ষে বিধ্বস্ত সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা নতুন কোনো সঙ্ঘাতের অনুমতি দেয় না। এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো দেশের পুনর্গঠন এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, এমন কোনো বিরোধে জড়ানো নয়, যা আরো ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।’ আল-শারা জোর দিয়ে বলেন, ‘কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যার সমাধান করাই এখন একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ।’ তবে তিনি সতর্ক করেন যে, ‘অপরিকল্পিত সামরিক অভিযান’ কারো জন্য লাভজনক হবে না।
এ দিকে সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকা নিয়েও তিনি মন্তব্য করেন। প্রায় একদশক আগে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ আসাদের পক্ষে যুদ্ধের ভারসাম্য বদলে দিয়েছিল। সম্প্রতি রাশিয়া ক্ষমতাচ্যুত আসাদকে আশ্রয় দিয়েছে। এ বিষয়ে শারা বলেন, ‘রাশিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক এমনভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত, যা উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে। বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সতর্কতার সাথে পরিচালনার দাবি রাখে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা