২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি
সংস্কারে ৬ মাসের বেশি লাগার কথা নয় মনে করে দলটি- মঈন উদ্দিন খান
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা নিয়ে যে ধারণা দিয়েছেন, বিএনপি সেটিকে ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হিসেবে দেখলেও কার্যত সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ আশা করছে। দলটি আগামী বছরের মাঝামাঝিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের যে দাবি ইতোমধ্যে তুলেছে, সেটি ২০২৫ সাল অতিক্রম করে যাক কোনোভাবেই তার পক্ষপাতী নয়। নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনে যত বিলম্ব হবে, স্বৈরাচার ও তাদের দেশী-বিদেশী দোসরদের চক্রান্ত তত বাড়তে পারে।
গতকাল বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে একটা ধারণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ভাষণে তিনি বলেন, মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে মনোযোগ দেয় সরকার। এ লক্ষ্যে ১৫টি কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে চললেও সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানানো হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে গত দুই মাস ধরে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপি। সাম্প্রতিক সময়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতারসহ কয়েকটি ঘটনাকে ঘিরে দেশ ও সরকারকে অস্থিতিশীল করতে দেশী-বিদেশী নানান চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে অভিযোগ দলটির। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা সভা থেকে রোডম্যাপের দাবি আরো জোরালো করেন বিএনপি নেতারা। দলটির নেতাদের অভিমত, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি তাদের ৩১ দফায়ও সংস্কারের কথা বলেছে। তাই নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত। এর অংশ হিসেবে দ্রুত রোডম্যাপ দিলে দেশ পুরোপুরি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ঢুকে যাবে। এতে করে বিদ্যমান অস্থিরতাও কেটে যাবে। তা ছাড়া গত ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণও এখন ভোট দিতে উন্মুখ। আর সব সংস্কার শেষে নির্বাচন করতে গেলে সেটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। নির্বাচিত সরকার এসে তারা সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নেবে। এমন অবস্থায় সংস্কার ও রোডম্যাপ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল দু-একজন উপদেষ্টাও বক্তব্য দেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় সব সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। অন্য দিকে নির্বাচিত সরকারের অধীনে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি তোলায় রাজনৈতিক দলগুলোর অতীতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আজকে তারা বলছে, সংস্কার তারাই সবচেয়ে ভালো করতে পারবে, এটাই তো গণতান্ত্রিক দেশের কথা। তা হলে তারা ৫৩ বছর কেন করেননি?’
এ দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত রোববার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী করতে চাইছে, রাষ্ট্র মেরামতের জন্য তাদের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন- সেটি জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে উঠে, সেটি হবে অবশ্যই গণআকাক্সক্ষাবিরোধী। বিএনপি নেতা ও উপদেষ্টাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কখন হতে পারে, সে সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চায় বিএনপি। দলটি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু একটি অনির্বাচিত সরকার, নির্বাচন প্রলম্বিত হলে এখন দেশবিরোধী নানা ধরনের যে প্রোপাগান্ডা-ষড়যন্ত্র চলছে, সেটি আরো ডালপালা মেলতে পারে। তাই আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা নয়, এ ব্যাপারে রোডম্যাপ আকারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চায় দলটি। বিএনপি আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ নির্বাচন চাইলেও সেটি ওই বছরের শেষ নাগাদ হলেও তার বিরোধিতা করবে না। এটিকে সহনীয় বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারকে এই সময়টুকু দিতে চায় তারা। এটাকে যৌক্তিক সময় বলে মেনে নেবে তারা। দলটি মনে করে, আগামী বছরের প্রথমার্ধের ভেতরে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষে পরবর্তী ৩-৪ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। তবে নির্বাচন ২০২৬ সালে গেলে সেটি হবে দীর্ঘ সময়, এর মধ্য দিয়ে সময়ক্ষেপণ হবে-যেটি কাম্য নয়। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সাথে কথা বলে তাদের এমন মনোভাব জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণে সুনির্দিষ্টভাবে রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকলেও সরকার যে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনের চিন্তা করছে, সেটাকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে দলটি পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে ধারণায় নেতাদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি লক্ষ করা গেছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে ঘিরে যে ধোঁয়াশা ছিল, তাও কাটতে শুরু করবে বলে মনে করেন দলটির কেউ কেউ ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনীয় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সে জন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়। আমরা আশা করি, তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) সংস্কারের সময় ও নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্ট করে একটি রোডম্যাপ দেবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা