১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মহান বিজয় দিবসে জামায়াতের সমাবেশ

তারা স্বাধীনতা বিক্রি করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে : ডা: শফিক

পল্টনে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত -


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিক্রি করে দিয়েছিল তারাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা যে দেশের আদর্শ ধারণ ও লালন করে সেই দেশেই চলে গেছে। শেখ হাসিনা এ দেশে ফিরে এসেছিলেন শুধু তার পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ক্ষমতার বিনিময়ে বন্ধক দিতে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়া হয়নি কেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, স্বাধীনতা ছিনতাই করে এক পরিবারের সম্পদ বানানো হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান কবে, কোথায় স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে সেটি এ দেশের কারো জানা নেই। ৭ মার্চ যদি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়ে থাকেন, তাহলে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে শেখ মুজিবুর রহমান নিজের বাসভবনে কেন পাকিস্তানের পতাকা ঝুলিয়েছে? তৎকালীন ছাত্ররা সেই পতাকা খুলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছিল।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ রূপ নেয় জনসমুদ্রে! সকাল ১০টায় সমাবেশ শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুইপাশ নেতাকর্মী ও জনসাধারণের অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে উঠে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পূর্ব সভাপতি মুজাফফর হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিজয় র‌্যালি পল্টন মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রেস ক্লাব-হাইকোর্ট মোড়-রমনা হয়ে কাকরাইল মোড়ে এসে শেষ হয়। বিজয় র‌্যালিতে কয়েক লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, শেখ মুজিব কে কারা হত্যা করেছে?- স্বাধীনতার সপক্ষের সেনাসদস্যরা হত্যা করেছে। কেন করেছে?- কারণ শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বেরিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের যাত্রা শুরু করেছিল। তার কন্যাও পরবর্তীতে ভারতের তাঁবেদারি করতে এ দেশের আলেম-ওলামাদের, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক সাধারণ জনগণকে হত্যা করছে। তিনি বলেন, এই পল্টন ময়দানে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের বক্তব্য ছিল ‘বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’-এই তুমুল ঝড় এ দেশের ১৮ কোটি জনগণের বুকের ভেতরের ঝড়। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সকল হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচার করা হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, এই বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হবে ভারতীয় আধিপত্যবাদ নিপাত যাক, পরাজিত শক্তি ভারতের দোসর আওয়ামী লীগ নিপাত যাক; জাতীয় স্বার্থে সব বিভেদ ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ। তিনি ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তবেই ১৯৭১ থেকে ২০২৪ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য জীবন উৎস্বর্গকারী শহীদদের স্বপ্ন ও চেতনা পূরণ হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে বর্গা দেয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এ দেশের ছাত্র-জনতা জীবন ও রক্ত দিয়ে সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে। ছাত্র জনতার অর্জিত সেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে, শেখ হাসিনা ভারতে বসে তার ভারতীয় প্রভুদের ঘাড়ে বসে ষড়যন্ত্র করতেছে। ছাত্র-জনতার অর্জিত স্বাধীনতা রায় জামায়াত-শিবির এ দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। নতুন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে একটি মানবিক ও কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে তিনি দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন।

উত্তরায় জামায়াতের বিজয় র‌্যালি : আওয়ামী-বাকশালীরা মহান স্বাধীনতা ও বিজয়কে হাইজ্যাক করায় আমাদের জন্য স্বাধীনতা পুরোপুরি অর্থবহ হয়ে ওঠেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। গতকাল রাজধানীর উত্তরায় জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উত্তরা জোনের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক বিশাল র‌্যালি পরবর্তী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিজয় র‌্যালিটি উত্তরা ১১ চৌরাস্তা জমজম টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে উত্তরা আজমপুর এসে শেষ হয়। র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির মোহাম্মদ আব্দুর রহমান মূসা ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য জামাল উদ্দিন, মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি এইচ এম আতিকুর রহমান প্রমুখ।
বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতৃবৃন্দ : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে বঙ্গভবনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধিদল যোগদান করেন। সংগঠনের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, মাওলানা মুহাম্মাদ শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের বিজয় দিবসের আলোচনা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের পুরো ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। জামায়াতে ইসলামীকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে স্বাধীনতার বিরোধী আখ্যা দিয়ে ৫৩ বছর মিথ্যার আশ্রয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। এই আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা অপপ্রচারের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু তারা পারেনি। বরং তারাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্র জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিবে। গতকাল সকালে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ান বাজারের বাংলাদেশ ইসলামিক একাডেমি (বিআইএ) মিলনায়তনে আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় নগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম মহানগর নায়েবে আমির পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফুর রহমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও কোতোয়ালি থানা আমির আমির হোছাইন, চকবাজার থানা আমির আহমদ খালেদুল আনোয়ার, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবক ডা: খাইরুল আনোয়ার, কোতোয়ালি থানা সেক্রেটারি মোস্তাক আহমেদ, চকবাজার থানা সেক্রেটারি সাদুর রশিদ চৌধুরী প্রমুখ।

রাজশাহী জামায়াতের বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভা
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল সোমবার জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরী শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকালে নগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে একটি বিজয় র‌্যালি শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। এর আগে নগরীর হেতেমখাঁ, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর মোড়, লক্ষ্মীপুর ও বিন্দুর মোড় থেকে বিভিন্ন থানাভিত্তিক র‌্যালি বের হয়ে আলুপট্টি মোড়ে গিয়ে প্রধান র‌্যালির সাথে যোগ দেয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরী আমির মাওলানা ড. কেরামত আলী। জামায়াতের রাজশাহী মহানগরী সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডলের সঞ্চালনায় বিজয় র‌্যালি ও আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে দলটির মহানগরী নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসাইন, সাংগঠনিক সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সারওয়ার জাহান প্রিন্স, প্রকাশনা সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, অফিস সম্পাদক তৌহিদুর রহমান সুইট, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সোহেল, যুব সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদসহ রাজশাহী মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমিরবৃন্দ। কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement