১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বন্ধ হচ্ছে না পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি

বগুড়া থেকে ঢাকা আসতে চাঁদা গুনতে হয় ৮ পয়েন্টে
-

পণ্য পরিবহনে বন্ধ হচ্ছে না চাঁদাবাজি। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না যানবাহনে চাঁদাবাজি। পণ্য বোঝাই গাড়ি বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে চাঁদা গুনতে হয় ৮ পয়েন্টে। চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহী এবং বগুড়া অর্থাৎ উত্তরাঞ্চলের সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে বেপরোয়া চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এসব মহাসড়কে শ্রমিক সংগঠনের নামে বেনামে ট্রাক বা যানবাহন আটকে প্রতিদিন তোলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ চাঁদা। পরিবহন শ্রমিক সংস্থার নামে প্রতিটি গাড়িকে দেয়া হচ্ছে একটি স্লিপ। এসব স্লিপে লেখা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে দিতে হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে বগুড়ার শেরপুর, সিরাজগঞ্জ রোড, যমুনা সেতু পশ্চিম, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, মির্জাপুর, সাভারসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে হয়। এসব পয়েন্টে যারা টাকা আদায় করেন তারা কৌশলগত কারণে বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে থাকে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে এই প্রতিবেদকের কথা হয় সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদেরের সাথে। তিনি বগুড়া থেকে মৌসুমি সবজি কিনে ঢাকায় নিয়ে আসেন। কাওরান বাজারে তিনি এসব সবজি পাইকারি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, রাস্তায় চাঁদাবাজদের যন্ত্রণায় তিনি অতিষ্ঠ। বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে তাকে আটটি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয়। প্রতিটি পয়েন্টে দিতে হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, প্রতিদিন পণ্য পরিবহনের জন্য প্রতিটি ট্রাকের ঢাকা পৌঁছতে প্রায় ৪০০০ হাজার টাকার চাঁদা দিতে হয়। পণ্য বিক্রির মাধ্যমে যে মুনাফা হয় তার বড় একটি অংশ চাঁদা বাবদ গুনতে হয় বলে তিনি জানান।

এ দিকে মিরপুর-১ কাঁচাবাজারে কথা হয় মোকলেছুর রহমান নামে এক সবজি বিক্রিতার সাথে। তিনি বগুড়া ও রাজশাহী থেকে সবজি কিনে মিরপুর-১ বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক কমানো সম্ভব। চাঁদাবাজদের যে টাকা দিতে হয় তা পরিশোধ করতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। কারণ বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে চাঁদার টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং পরিবহন মালিকরা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার পরও সড়ক মহাসড়কে পণ্যবাহী বাহনে চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বিভিন্ন সময় বগুড়া, নাটর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁসহ কয়েকটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চললেও এসব চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
কাওরান বাজারে মাছের ব্যবসা করেন আকবর হোসেন। তিনি সাধারণত ময়মনসিংহ থেকে মাছ নিয়ে আসেন এবং কাওরান বাজারে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, সড়কে মাছের গাড়ি নিয়ে বের হলেই চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ট্রাকের চাবি কেড়ে নেয় চাঁদাবাজরা। তিনি বলেন, ব্যবসা করতে এসে চাঁদাবাজদের কাছে ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিক সংগঠনের নামে সড়কে শ্রমিকদের চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ঠ। বিভিন্ন সময় শ্রমিক নেতাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
সম্প্রতি ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়্যারনেস সোসাইটি (ভোক্তা) এক গবেষণায় বলছে, সড়ক ও বাজারগুলোতে চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ করা গেলে মাছ ও শাকসবজির মতো নিত্যপণ্যের দাম কমপক্ষে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। তবে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ করা গেলে শাকসবজির দাম ৩০ শতাংশের বেশি কমানো সম্ভব।

এ দিকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে কর কমানোর পরও বাজারে স্বস্তি না আসায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাজারে চাঁদাবাজির সমঝোতার সংস্কৃতি চালু থাকায় নিত্যপণ্যের মূল্য কমানো কঠিন বলেও মনে করেন তিনি। বাজারে দুই-তিন রকমের চাঁদাবাজের যোগসাজেশে পণ্যের দাম বাড়ছে বলে মনে করেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা খুব কঠিন। কিন্তু চাঁদাবাজির সমঝোতা খুবই সহজ। যেকোনো বাজারে যান। দুই-তিন রকম চাঁদাবাজ আছে, যারা আগের সরকারের। আবার যারা প্রোসপেক্টিভ, আসবে আর লোকাল। আমি কাওরান বাজারে গেছি। তিন ভাগে ভাগ করা। সেখানে সমঝোতা আছে। আমাকে বলা হয়, সিন্ডিকেট ভাঙো। পণ্যের দাম কমানো ও ক্রেতার কাছে পণ্য সহজলভ্য করা। মাঝখানে যে দামটা থাকে, ১০ টাকার বেগুন ৫০ টাকা হয়ে যায়। কোনো কারণ ছাড়াই এটা বেড়ে যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement