মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারতের যুদ্ধ’ দাবি মোদির তীব্র সমালোচনা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৬
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস নিয়ে পোস্টে বাংলাদেশের নামই বলেননি। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের যুদ্ধ বলে দাবি করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোদি এক পোস্টে ভারতের সাহসী সৈনিকদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এর আগেও তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের যুদ্ধ বলে দাবি করেছিলেন। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর একটি পোস্টে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আজ এই বিজয় দিবসে, আমরা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই। তাদের নিঃস্বার্থ উৎসর্গ এবং অটল সংকল্প আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। এই দিনটিতে তাদের অসাধারণ বীরত্ব এবং তাদের অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের জাতির ইতিহাসে গভীরভাবে গেঁথে থাকবে।’
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনেই বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের। মোদি তা উল্লেখের প্রয়োজন মনে করেনি।
মহান বিজয় দিবস ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেয়া পোস্টের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া পোস্টে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।
পোস্টে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মোদির দেয়া পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এই বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’
এ দিকে একই দিনে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দেয়া ভাষণে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেত্রী ও ওয়ান্নারের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ‘মুক্তিযুদ্ধে ইন্দ্রিরা গান্ধীর সাহসিকতাপূর্ণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। একই সাথে লোকসভায় ভাষণের শুরুতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করা সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাহসিকতাপূর্ণ নেতৃত্ব ও ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘আজ বিজয় দিবস। প্রথমেই আমি স্যালুট জানাতে চাই সেসব বীর সৈনিককে, যারা একাত্তরে আমাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। সেই সময় বাংলাদেশে যা ঘটেছিল, সেই বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের আমাদের বাঙালি ভাই ও বোনদের কথা কেউ শোনেনি।’ তিনি বলেন, ‘সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী; আমি তাকে স্যালুট জানাতে চাই। তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও সাহস দেখিয়েছিলেন এবং এমন নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছেন, যা দেশটিকে বিজয়ী করে।’
লোকসভায় ভাষণে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির সেনাবাহিনীর সদর দফতরে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মুহূর্তের দৃশ্যের একটি চিত্রকর্ম সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা বলেন, দ্বিতীয় বিষয় হলো, পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, এমন একটি চিত্রকর্ম আজ সেনাবাহিনীর সদর দফতর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’
এর আগে ভারতের সেনাবাহিনী বিষয়টি পরিষ্কার করে জানায়, চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ‘আইকনিক ১৯৭১ সারেন্ডার পেইন্টিং’ নামের চিত্রকর্মটি নয়াদিল্লির মানেকশ সেন্টারে স্থাপন করেছেন।
আইকনিক এই চিত্রকর্মটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতীয় পাকিস্তানি সৈন্যদের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে ওই চিত্রকর্মটি মানেকশ সেন্টারে স্থাপন করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
তীব্র প্রতিবাদ আসিফ নজরুলের : মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
সোমবার দুপুরে ভেরিফাইড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে প্রতিবাদ জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা ফেসবুকে লিখেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এই বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’
তীব্র প্রতিক্রিয়া হাসনাত আবদুল্লাহর : নরেন্দ্র মোদির পোষ্ট নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ নরেন্দ্র মোদির ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করে লিখেছেন, ‘এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মোদি দাবি করেছে, এটি শুধু ভারতের যুদ্ধ এবং তাদের অর্জন। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অস্তিত্বই উপেক্ষিত।’ তিনি পোস্টে আরো লিখেন, ‘যখন এই স্বাধীনতাকে ভারত নিজেদের অর্জন হিসেবে দাবি করে, তখন আমি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ভারতের এ হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এ লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা