১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সিরিয়ার নৌঘাঁটি থেকে সরে যাচ্ছে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ

-

- সীমান্ত থেকে সৈন্য সরাচ্ছে না ইসরাইল
- ইসরাইলকে হামলা বন্ধের অনুরোধ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবে

সিরিয়ার নৌঘাঁটি থেকে সরে যাচ্ছে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজগুলো। বিবিসি স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। রোববার বিদ্রোহীদের হামলার মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। দেশটি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা করেছে রাশিয়া। বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখলের পর সিরিয়ায় নিজেদের অবস্থান নিয়ে ইতস্তত রাশিয়া। বিবিসি, রয়টার্স।
১০ ডিসেম্বর ম্যাক্সারের তোলা ছবিগুলোতে দেখা গেছে, কিছু জাহাজ রোববার থেকে টার্টাস নৌঘাঁটি ছেড়েছে এবং বর্তমানে ভূমধ্যসাগরের উপকূলে নোঙর করে আছে। একই দিনে তোলা অন্যান্য ছবিতে সিরিয়ায় রাশিয়ার প্রধান বিমান ঘাঁটি, হমেইমিমে কার্যকলাপ অব্যাহত দেখা গেছে, টারমাকে স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিমানগুলো দেখা গেছে। সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়ার ভবিষ্যৎ সামরিক উপস্থিতি নিয়ে আগত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবে মস্কো। তিনি মস্কোতে সাংবাদিকদের বলেন, “নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এখন সম্ভাব্য সবকিছু করা হচ্ছে এবং অবশ্যই, আমাদের সামরিক বাহিনীও প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা অবলম্বন করছে।”

টার্টাস নৌঘাঁটিতে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরীয় নৌ বহরের অংশ রয়েছে। ১৯৭০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এটি প্রতিষ্ঠা করে। ২০১২ সালে রাশিয়া এটি প্রসারিত এবং আধুনিকায়ন করে। ওই সময় ক্রেমলিন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ওপর সমর্থন বৃদ্ধি করেছিল। নতুন স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, রাশিয়া যুদ্ধ জাহাজগুলোকে বন্দর থেকে বের করে এনেছে। দুটি গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট সিরিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে নোঙর করা হয়েছে। বর্তমানে বহরের অবশিষ্টাংশ কোথায় রয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

সীমান্ত থেকে সৈন্য সরাচ্ছে না ইসরাইল
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতনের পর দেশটির বাফার জোন (নিরাপদ অঞ্চল) নিয়ন্ত্রণে নেয় ইসরাইল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আপাতত বাফার জোন থেকে সৈন্য সরিয়ে নিচ্ছে না ইসরাইল। এ খবর দিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকা। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভানের সঙ্গে জেরুসালেমে এক বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর দফতর জানিয়েছে যে, গোলান উপত্যকার পাশের বাফার জোনে ইসরাইলি সৈন্যরা ততদিন থাকবে যতদিন না সিরিয়ার দিকের কোনো বাহিনী ইসরাইলিদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী ও ইসরাইলের মধ্যে ১৯৭৪ সালে হস্তক্ষেপ না করার চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য জাতিসঙ্ঘ, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশ ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে। তবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলছে এই পদক্ষেপ সাময়িক।

ইসরাইলকে হামলা বন্ধের অনুরোধ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের
আলজাজিরা জানায়, সিরিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ইসরাইলের কয়েক শ’ বিমান হামলা চালানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সেই সঙ্গে দেশটিতে হামলা চালানো বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, সিরিয়াজুড়ে সব পক্ষের সহিংসতা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর এখন পর্যন্ত ইসরাইল সিরিয়ায় পাঁচ শতাধিক হামলা চালিয়েছে। ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এ তথ্য দিয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, ইসরাইল সর্বশেষ লাতাকিয়া ও তারতুসের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
তারতুসে অস্ত্রের একাধিক গুদামে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে উৎক্ষেপণের জন্য রাখা ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। হামলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া তারতুসে আকাশ প্রতিরক্ষা স্থাপনা ও রাডার-ব্যবস্থায়ও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সিরিয়ার অন্যত্রও হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লাতাকিয়ার রাডার স্থাপনা, দেইর আজোরের সেনাক্যাম্প ও সামরিক বিমানবন্দর।

ইসরাইলি হামলা বন্ধে বিশ্বের পদক্ষেপ চায় ইরান
তা ছাড়া ইসরাইলের আগ্রাসন ও সিরিয়ায় চলমান ধ্বংসলীলা বন্ধে আঞ্চলিক দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ আব্বাস আরাকচি। ইরানের সংবাদমাধ্যম পার্স টুডে জানায়, বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে এ আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ইসরাইল সিরিয়ার প্রায় সব প্রতিরক্ষা ও বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসরাইল ১৯৭৪ সালের সমঝোতা চুক্তি এবং জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৩৫০ নম্বর ইশতেহার লঙ্ঘন করে সিরিয়ার আরও ভূখণ্ড দখল করেছে।

গুলি না চালিয়ে বিজয় উদযাপনের আহ্বান বিদ্রোহী নেতার
সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা মোহাম্মদ আল-জোলানি দেশটির জনগণকে থবিজয় উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি গুলি না চালিয়ে বিজয় উদযাপন করতে বলেছেন। সম্প্রতি রাক্কা শহরে দুর্ঘটনাবশত গুলি চালানোর ঘটনায় প্রাণহানির পর তিনি এ আহ্বান জানালেন। গতকাল শুক্রবার হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) গোষ্ঠীর প্রধান জোলানিকে এক ভিডিওতে সাদা শার্ট ও ভেস্ট পরে উপস্থিত হতে দেখা যায়। এটা তার সাধারণ সামরিক পোশাকের থেকে আলাদা। তিনি বলেন, আমি সিরিয়ার জনগণকে এই পবিত্র বিপ্লবের বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানাই। আমি তাদের রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশের আহ্বান জানাই, তবে গুলি ছোড়া এবং মানুষকে ভয় দেখানোর প্রয়োজন নেই। আমরা এখন দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হবো। জোলানির এই বার্তা এমন সময় আসলো যখন রাক্কায় গুলি ছোড়া নিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। খবর অনুসারে, বৃহস্পতিবার রাক্কা শহরে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতন উদযাপনে শত শত মানুষ রাস্তায় নামেন। কিন্তু এক ব্যক্তি ভুলবশত মেশিনগানের গুলি চালিয়ে ফেলেন। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘটনাস্থলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

দামেস্কে ৬ দেশের দূতাবাস চালু
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ইতিবাচক খবর হলো, ছয়টি দেশ দামেস্কে তাদের দূতাবাস চালু করেছে। জর্দান, সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি ও মিসর ইতোমধ্যে সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে। এটি অস্থায়ী সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বশির জানিয়েছেন, কাতার এবং তুরস্কও শিগগিরই তাদের দূতাবাস চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement