দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০২
রাজনৈতিক দলগুলোকে বা রাজনীতিকে প্রতিপক্ষ না বানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, একজন উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য কাজ করছে। এটা অত্যন্ত ঘোরতর অভিযোগ। আমি তীব্র ভাবে এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি এবং আমি মনে করি যে, এই ধরনের উক্তি তার প্রত্যাহার করা উচিত। দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে বা রাজনীতিকে আপনাদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদেরকে সহযোগিতা করছে। আমরা হাজার বার বলেছি, আমাদের চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা বলেছি, এই সরকার হওয়া ব্যর্থ হওয়া মানে জনগণ ব্যর্থ হয়ে যাবে, আমরা ব্যর্থ হয়ে যাবো। তাহলে এই রকম কথা কেন বলবেন আপনি?
গতকাল শুক্রবার বিকেলে শহীদ বুদ্দিজীবী দিবস উপলক্ষে দলের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এই আলোচনা সভা হয়। আজ বুদ্ধিজীবী দিবসে বেলা ১১টায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে মনে করেছেন হাসিনা পালিয়ে গেছে, কাজ শেষ হয়ে গেছে। না, কাজ শেষ হয়নি। আগামী নির্বাচনের পরেও যত দিন পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা না পাবে তত দিন বিএনপিকে কাজ করে যেতে হবে। নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আজকে আমরা শপথ নেই, আমরা আমাদের গড়ে তুলব একটি উপযোগী রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে, গণতন্ত্রের একজন কর্মী হিসেবে, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে। সেই সাথে আমাদের নেতা তারেক রহমান, খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমানের কর্মী হিসেবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি, সেই গণতন্ত্র কথার কথা নয়। এটা একটা কালচার- এটা একটা সংস্কৃতি। আপনি-আমি কিভাবে কথা বলব, আমি আমার প্রতিবেশীর সাথে কেমন কথা বলব, আমার রাজনীতির প্রতিপক্ষের সাথে কিভাবে কথা বলব, সেই বিষয়গুলো আমাদেরকে গণতন্ত্রের ভেতর দিয়ে শিখতে হবে। গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, আওয়ামী লীগ করলে তাকে গলা কেটে ফেলো আর বিএনপি করলে তার মুণ্ড ছেদ করো, তাহলে সেটা কিন্তু গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। তোমার বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার আছে, আমার বিরুদ্ধেও কথা বলার অধিকার আছে- এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।
‘সময়টা কঠিন’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সময়টা সবচেয়ে কঠিন সময়। একটা পদক্ষেপ যদি ভুল হয় আপনি পেছনে পড়ে যাবেন, খাদে পড়ে যাবেন। যদি সঠিক পা দিতে পারেন তাহলে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে তুলে নিয়ে যেত, যেমন আমাদের গুম করে নিত, ঠিক ওইভাবে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাসায় থেকে নেয়ার সময়ে বলছিল কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে। নেয়ার পর আর ফিরে আসেনি। রায়েরবাজারে তাদের হাত-পা বাঁধা লাশ পাওয়া গেছে মহিলা-পুরুষ সবার। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে বুদ্ধিজীবীদের কেনো প্রাণটা দিতে হলো। তিনি বলেন, আয়নাঘরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়া, তাদেরকে শেষ করা, তাদেরকে ধ্বংস করা। কেন? হাসিনার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে হবে- সে জন্য আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়া হতো।
‘একাত্তর আমাদের ভুলে গেলে চলবে না’ : একাত্তরে শহীদ বুদ্দিজীবী এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানসহ বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একাত্তর একটু পেছনে রাখা। আমার মনে হয়, এটা আরেকটা ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশের মূল ইতিহাস থেকে জাতিকে দূরে সরিয়ে দেয়া। যেমন ‘৪৭ সালের দেশভাগকে অনেকে বলেন যে, এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এখন আবার লক্ষ্য করছি যে, ’৭১ সালকে পেছনে রাখা। আমরা মনে করি এটা ইতিহাস বিকৃতি। এই বিষয়টা নিয়ে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের মূল যে ইতিহাস, আজকে এই স্বাধীন বাংলাদেশ, আমরা ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, সেখানে ইতিহাস যেন বিকৃত না করি। ১৫ বছর ধরে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। ঠিক তেমনি করে এখন যাতে ইতিহাস বিকৃতি না হয় সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ করছি।
‘প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকা চাই’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিটি মুহূর্ত এখন আমাদেরকে সতর্কতার সাথে পা ফেলতে হবে। আমাদের প্রতিটি কথা মেপে বলা দরকার। আমরা এমন কোনো কথা বলব না, যা বিজয়কে নষ্ট করে দেয়, অর্জনকে বিনষ্ট করে দেয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে সে দ্রুত কাজ করছে। সে লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটা মিটিংও করেছে এর মধ্যে। তারা (আওয়ামী লীগ) অনেক অপপ্রচার করছে, মিথ্যাচার করছে, যেগুলো বাংলাদেশের জন্য, এই বিপ্লবের জন্য অত্যন্ত উল্টো কথা। তাই আপনাদেরকে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগণের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভেতর দিয়ে আপনাদেরকে কথার মধ্য দিয়ে জবাব দিতে হবে। ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের আরো বেশি সম্পৃক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের মিথ্যাচার-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো- ভিসি অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কাশিয়ানীতে বিএনপির মতবিনিময় সভা : কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কোনো রকম অপ্রীতিকর কাজে জড়ানো যাবে না। জনগণের নিরাপত্তা ও তাদের জানমালের হেফাজত করা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে বিএনপির ইউনিয়ন ও ওয়াডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সেলিমুজ্জামান সেলিম এসব কথা বলেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: গোলাম মোস্তাফা মোল্যার সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শেখ মো: সেলিমের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আহবায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান, যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট কাজি আবুল খায়ের, সদস্য অ্যাডভোকেট মো: তৌফিক ইসলাম, উপজেলা সহসভাপতি মো: হাসানুজ্জামান মিল্টন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: হিরো মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: জায়েদুর রহমান জায়দার, ডা: সোহান, মানববিষয়ক সম্পাদক মো: মোরাদ হোসেন মৃধা, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মো: বিল্লাল হোসেন, যুবদলের সভাপতি এনামুল হক শিমুল, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম পাভেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো: ফোরকান শরীফ টিটো, সদস্যসচিব মো: মিলন খান, ছাত্রদলের সভাপতি মো: সোহেল প্রমুখ।
ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র চর্চার আহ্বান তারেক রহমানের : পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বহু মত ও পথের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। তারেক রহমান বলেন, আজ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া আইনের শাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং বহু মত ও পথের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
বাণীতে তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদতবরণকারী দেশের প্রথম শ্রেণীর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অম্লান স্মৃতির প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি। তিনি আরো বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতির ইতিহাসে এক মর্মস্পর্শী ও শোকাবহ দিন। অমর বুদ্ধিজীবীরা দেশের ক্ষণজন্মা শ্রেষ্ঠ সন্তান, যারা একটি সমৃদ্ধ এবং মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন। তারা ন্যায়বিচারভিত্তিক শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু হানাদার বাহিনীর দোসররা চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিত এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই অগণতান্ত্রিক শক্তি তাদের মুখোশ খুলে ফেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো দেশের মানুষের সর্বজনীন গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো একের পর এক হরণ করতে থাকে। এক নদী রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দিনে দিনে দুর্বল করে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশা ধূলিসাৎ করে। সেই দুঃশাসনের ঐতিহ্য ধারণ করে তাদের উত্তরসূরী আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিভেদ, অনৈক্য, সঙ্কীর্ণতা, গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়া ও জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল এবং গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল।
সুতরাং আমাদের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং দেশকে একটি সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার বদলে একদলীয় দুঃশাসনের বাতাবরণ তৈরি করে। সুতরাং আজ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া আইনের শাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং বহু মত ও পথের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে যাবেন। তিনি আরো বলেন, আজকের এ শোকাবহ দিনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা একসাথে কাজ করি। সবশেষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারেক রহমান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা