আ’লীগ নেতাদের উসকানিতে গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতা
- শাহ আলম
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০০
দেশের গার্মেন্ট খাত অস্থির করতে পতিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে একটি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করলে নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করছে তারা। এ নেতাদের ষড়যন্ত্রের কারণে গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতা বন্ধ হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার বলেন, সরকারি হস্তক্ষেপে পাঁচটি বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত বেতনের ইনক্রিমেন্টের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সাম্প্রতিক মজুরি বৃদ্ধির পরও কেন শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুল আক্তার বলেন, ‘বাস্তবতা হলো আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিক স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। এই সব শ্রমিক প্রায়ই তাদের রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে কাজ করে। কখনো কখনো তারা তাদের ফেডারেশন নেতাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে।
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের কারণে কিছু রাজনৈতিক নেতা পিছু হটেছে। তবে যেসব শ্রমিকরা সচেতন তারা জানে আন্দোলনের কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা কম। এ জন্য তারা সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যেসব শ্রমিক বা রাজনৈতিক নেতারা গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদের শাস্তির আওতায় না আনতে পারলে গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
বিজিএমইএর তথ্যে দেখা যায় বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার পর অস্থিরতা ১১ ডিসেম্বর রাজধানীর পাশের আশুলিয়ায় ২৫টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বন্ধ করে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় আল-মুসলিম, নাসা, নিউ এইজ, ডেকোসহ ২৯টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা, পোশাক কারখানার মালিক এবং সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বার্ষিক ৯ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় । তবে শ্রমিকদের দাবি নতুন করে আরো ১৫ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন একটি সমাধান করা বিষয়ে উসকে দিয়ে একটি চক্র গার্মেন্ট খাতে অস্থিরতা তৈরি করছে।
গত সোমবার সরকার নিয়মিত বার্ষিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সাথে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে। নতুন ঘোষণানুসারে গার্মেন্টশ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি পাবে ৯ শতাংশ। শ্রমিকরা তাদের ডিসেম্বরের মজুরির সাথে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি বেতন পাবে বলে জানানো হয়।
শিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি এবং শ্রমিক নেতারা বলছেন, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাদের উসকানির কারণে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না গার্মেন্ট শ্রমকিদের। তারা আরো উল্লেখ করেছে কিছু নেতা এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করছে। এসব নেতার নিজস্ব এজেন্ডাকে বাস্তবায়নে গার্মেন্ট খাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চলমান শিল্প অস্থিরতা, বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্যরা এবং তাদের বিদেশী মিত্ররা উসকে দিচ্ছে। তিনি বলেন, গার্মেন্টশ্রমিকরা সমস্যা সৃষ্টি করছে না। আসলে আইনশৃঙ্খলা অস্থির করতে গার্মেন্টশ্রমিকেদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এ জন্য পোশাক খাতের অস্থিরতা সৃষ্টিকারী পতিত আওয়ামী লীগ নেতা এবং বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ দিকে শিল্প পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গার্মেন্ট কারখানা যেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, সেসব কারখানার শ্রমিকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। তবে বেতনের ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো দাবিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে । অনেক শ্রমিক কাজ বন্ধ করে চলে যান।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেতনে ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবিতে সাম্প্রতিক ঘটনায় হা-মীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, মেডলার, নেক্সট কালেকশন, আল মুসলিম, সেতারা গ্রুপ এবং অন্যান্য গার্মেন্টের শ্রমিকরা কারখানায় পৌঁছলেও কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। নিট এশিয়ার একজন শ্রমিক বলেন, তিন দিন ধরে আমাদের কারখানায় অস্থিরতা চলছে। শ্রমিকরা কাজ করতে অস্বীকার করছে এবং ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের দাবিতে অন্যদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে। একইভাবে ডেকো গ্রুপের একজন কর্মী বলেন, যেহেতু শ্রমিকরা কাজ করতে অস্বীকার করেছিলেন। এ জন্য গার্মেন্টের কর্মকর্তারা দিনের প্রথম দিকে ছুটি ঘোষণা করেন।
দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সাধন কুমার বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা কারখানায় আসে। তবে তারা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে আলোচনার পর তারা কাজ শুরু করলেও, আশপাশের কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের কারখানাও বন্ধ করে দিতে হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর পোশাক শিল্প খাতে বার্ষিক ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা হতো। কিন্তু শ্রমিকরা ১৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দাবি জানান সরকারের কাছে। সরকারের পক্ষ থেকে ৪ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু পোশাকশ্রমিকদের কাক্সিক্ষত দাবি পূরণ না হওয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, আগে পোশাক শ্রমিকদের ৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি করা হতো। সরকার আরো ৪ শতাংশ বাড়ানোর সিন্ধান্ত নিয়েছে। এতে মোট ৯ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি পাবে পোশাকশ্রমিকরা। কিন্তু পোশাক শ্রমিকদের দাবি ১৫ শতাংশ। তবে অনেক কারখানায় শ্রমিকপক্ষ সরকার ঘোষিত বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা না দেয়ার কারণেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মালিকপক্ষ কারখানায় ঘোষণা দিলেই সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা