স্বাভাবিক হয়নি সয়াবিন তেলের সরবরাহ
শীত এলেও সবজির দাম চড়া- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮
বাজারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। যদিও গত সোমবার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তারপরও গত চার দিনে বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি কোম্পানিগুলো। এখনো পাড়া-মহল্লার বেশির ভাগ দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল। এ দিকে শীত এলেও কমছে না সবজির দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অল্প সমযের মধ্যে সবজির দাম নাগালের মধ্যে চলে আসবে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি ও ডিমের দাম।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর-১ এর কাঁচাবাজারে গিয়ে বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে হাতেগোনা দু’টি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেখানে আলম স্টোরের রাজু আহমেদ বলেন, তেল কোম্পানির গতকাল তেল দেয়ার কথা ছিল। দিন শেষে জানিয়েছে দিতে পারবে না। আজ দেবে জানিয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একই অবস্থা। এরমধ্যে তেলের দাম বেড়েছে। আজ তেল পাবেন বলে আশা করছেন।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পরিবেশকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত একটি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি নতুন দামের সয়াবিন তেলের বোতল বাজারে ছাড়েনি। এ জন্য তারাও খুচরাপর্যায়ে পণ্যটি দিতে পারছেন না।
বাড়তি দাম যোগ করে বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা। তবে নতুন এ দামের তেল এখনো আসেনি। সরবরাহ সঙ্কটের কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। নতুন করে দাম বাড়ার আগে বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিনের লিটার ছিল ১৪৯ টাকা।
খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কট থাকলেও গত সপ্তাহের চেয়ে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া চিনি আটা ও ময়দাসহ অন্য পণ্যগুলোর দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
এ দিকে শীত এলে বাজারে সবজির দাম কমবে এমন কথা বলে আসছিলেন সবজি বিক্রেতারা। কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশে শীত অনুভূত হতে শুরু হলেও এখনো বাজারে ৮০-১০০ টাকা ঘরেই আছে বেশির ভাগ সবজি। মুলা, মিষ্টি কুমড়া ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজিই বাজারে এখন সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
যদিও বিক্রেতারা বলছেন, আর কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে শীতকালীন সবজি বেশি করে আসতে শুরু করবে। তখন সবজির দাম অনেক কমে আসবে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, টমেটো ১২০ টাকা, কাঁচামারিচ ১০০ টাকা, বিচিওয়ালা শিম প্রতি কেজি ১০০, করলা ১০০ টাকা, শসা কেজি ৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, মুলা কেজি ৩০ টাকা, পেঁয়াজের পাতা প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে বাজারে বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, মাঝারি সাইজের ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, সাধারণ শিম কেজি ৫০ টাকা, শালগম ৫০ টাকা এবং পেঁয়াজের ফুল প্রতি মুঠো ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, শীতে মানুষ কাঁপছে, কিন্তু বাজারে এলে সবজির বাজার এখনো খুব গরম। দুই একটি ছাড়া বেশির ভাগ সবজি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকার ঘরে। শীতের সময়ও সবজির এত দাম এটা মেনে নেয়া যায় না। এই সময়ে এসে সবজির দাম থাকবে সবচেয়ে কম, অথচ বাজারে উল্টো চিত্র। একমাত্র মুলার সবচেয়ে কম দাম, এ ছাড়া বাকি সবজি ৫০ টাকা, আর বেশির ভাগই ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য অনেক বেশি দাম।
একই রকম অভিযোগ করে আরেক ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, সবজির অনেক বেশি দাম চলছে বাজারে। শীতে সবজির দাম কম থাকার কথা থাকলেও তা এখনো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ব্যবসায়ীরা, বিক্রেতারা যে যার মতো করে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে দাম আদায় করে নিচ্ছেন।
কাওরান বাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে এনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, শীতের সবজি এখনো পুরোপুরি বাজারে ওঠেনি। যেসব মাল আছে সেগুলো আগের ক্ষেতের ফসল। নতুন করে সবজি বাজারে ওঠা মাত্রই দাম অনেক কমে যাবে। যদিও এ সময়ে এসে সবজির দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে। এর মূল কারণ নতুন সবজি এখনো ওঠেনি, আর বর্তমানে সরবরাহ কিছুটা কম। এক সপ্তাহের মধ্যে আশা করা যায় নতুন সবজিগুলো উঠবে, তখন অনেকটাই দাম কমে আসবে।
সবজি বিক্রেতা আনিছুর রহমান বলেন, নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু করেছে। পাতা পেঁয়াজও এসেছে। ফলে আগের মজুদ পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি চলে এলে দাম আরো কমবে।
তবে বাজারে মুরগির দাম অপরিবর্তিত দেখা গেছে। গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮৫ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা