পূর্বপাকিস্তান সরকারের শেষ দিন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছিল পূর্বপাকিস্তান সরকারের শেষ দিন। ঢাকায় প্রচণ্ড কামান আক্রমণ চলে। একই সাথে বিমান হামলা। ঢাকার সেনানিবাসে মিত্রবাহিনীর গোলা এসে পড়ে। এ দিন গভর্নর হাউজে ডা: এম এ মালেক যখন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন, ঠিক তখনই সেখানে শুরু হয় ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণ। বেলা সোয়া ১১টায় পাঁচবার বিমান থেকে গভর্নর হাউজে রকেট নিক্ষেপ করা হয়। এতে দরবার হলের ছাদ ধসে পড়ে। এক পর্যায়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন গভর্নর। এরপর তিনি নিরপেক্ষ জোন হোটেল কন্টিনেন্টালে গিয়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন। হোটেল কন্টিনেন্টালে তখন রেড ক্রসের পতাকা উড়ছিল। মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর আজকের এই দিনে নবাবগঞ্জের মরিচায় যুদ্ধে শহীদ হন। দেশপ্রেম ও সমর নৈপুণ্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেয়া হয়।
দুপুরে বগুড়া ব্রিগেড আত্মসমর্পণ করে। মানিকগঞ্জ মুক্ত হয়। সাভার ও ডেমরায় যুদ্ধ চলে। কুমিল্লা পতনের পর মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। টাঙ্গাইল ও জামালপুর পতনের সাথে সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সার্বিক পতন হয়। দলে দলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা আত্মসমর্পণ শুরু করে। অন্য দিকে অনেকে তখনো যুদ্ধ করে জীবন দেয়। যুদ্ধের এ অবস্থায় বেতার মারফত ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশ পাকিস্তানি কমান্ডারদের প্রতি আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। রাতে ঢাকার মার্কিন কনসাল জেনারেল ও জেনারেল নিয়াজীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খান মধ্য রাতে যুদ্ধ বন্ধের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
১৯৭১ সালের এ দিনে চারদিকে যখন বিজয়ের রব, মুক্ত পরিবেশে মানুষ যখন রাস্তায় বের হয়ে আসতে শুরু করছে, ঘরে ফিরতে শুরু করছে, মানুষ যখন প্রাণভরে মুক্ত নিঃশ্বাস নেয়ার অনুপম আনন্দে শিহরিত হচ্ছে, বিজয়কে বরণের আনন্দে দুলছে; ঠিক তখনই এক শোকাবহ ঘটনার অবতারণা ঘটে। বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে স্বাধীনতার শত্রুরা। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বরেণ্য ব্যক্তিত্ব তথা অধ্যাপক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পীদের হত্যা করা হলো বেছে বেছে; যাতে এ জাতি স্বাধীনতা পেলেও আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। ১৪ ডিসেম্বর তাই আমাদের জাতির ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা