গুম খুনের জন্য ক্ষমা চাইলেন র্যাব ডিজি
আয়নাঘর থাকার কথা স্বীকার- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুম-খুনের জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যবহৃত ‘আয়নাঘর’ থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, তার অস্তিত্ব র্যাবে থাকার কথা স্বীকার করেছেন এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সমসাময়িক বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
র্যাবে আয়নাঘর ছিল কি না জানতে চাইলে র্যাব ডিজি বলেন, ‘র্যাবে যে আয়নাঘরের বিষয়টা এসেছে, এটা তো ছিল, আছে। কমিশন আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যে, যে অবস্থায় আছে ওই অবস্থায় রাখার জন্য। কোথাও এখন কোনোরকম যেন পরিবর্তন, পরিবর্ধন না করা হয়। সে অনুযায়ী আমরা ঠিক ওইভাবেই রেখেছি, যা যেভাবে ছিল।’
শহিদুর রহমান বলেন, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, আজ পর্যন্ত যারা র্যাব দ্বারা নির্যাতিত বা অত্যাচারিত হয়েছেন, তাদের কাছে এবং যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, যেমন নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যারা র্যাব কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি। এসব ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার প্রত্যাশা করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুম-খুন কমিশন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ ধরনের অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। আমরা আশা করব, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হবে। এভাবেই দায়মুক্তি সম্ভব, অন্যকোনোভাবেই আমরা এ দায় থেকে মুক্ত হতে পারব না। কেবল সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের মাধ্যমেই আমরা দায়মুক্ত হতে চাই। আমি আপনাদের মাধ্যমে আবারো যারা র্যাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, র্যাবের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ আছে, গুম-খুন, অপহরণ, এ ধরনের বেশকিছু অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে আছে- তাদের পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
বিএনপি গত মঙ্গলবার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তুলে র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে এ প্রসঙ্গে র্যাব ডিজি বলেন, ভবিষ্যতে র্যাব তার দায়িত্ব আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করবে। তিনি বলেন, আমি র্যাবে কর্মরত আছি। আমরা যতদিন র্যাবে দায়িত্ব পালন করব, নিষ্ঠার সাথে আন্তরিকতার সাথে পালন করব। এ ব্যাপারে সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সেটিই শিরোধার্য। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব।
র্যাবের পোশাক পরিবর্তন চান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের ক্ষেত্রে দাবি উঠেছে, র্যাবের ক্ষেত্রেও দাবি উঠেছে। আমরা পোশাক পরিবর্তনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। পোশাকের বিষয়ে আমি মনে করি, পোশাকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষটাকে পোশাকটা পরানো হয় তারা। ভালো ব্যক্তি যে পোশাকই পরুক না কেন তার কাছ থেকে আমরা ভালো কিছু পাবো, খারাপ ব্যক্তিকে যত ভালো পোশাকই পরাই আমরা ভালো কিছু পাবো না।
র্যাবের নিজস্ব আইনপ্রণয়নের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, র্যাবের নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। পুলিশ ব্যাটালিয়ন আইন সংশোধন করে র্যাব বাহিনী গঠন করা হয়েছে। আমরা র্যাবের জন্য একটা আইন প্রণয়নের চিন্তা করছি। এ ছাড়া কিভাবে সংস্কার আনা যায় জনসাধারণের মতামতের সাপেক্ষে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের মামলায় যথেষ্ট অগ্রগতি আছে জানিয়ে র্যাব ডিজি বলেন, ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছিল, তাদের দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছিল। ৫ অগস্টের পরে আরো ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন জবানবন্দী দিয়েছেন। আশা করছি, মামলার তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হবো।
বগুড়ায় মাকে হত্যার দায়ে সন্তানকে অভিযুক্ত করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ করতে গেলে কিছু ভুলভ্রান্তি হয়, কাজ না করলে ভুল হয় না। এ ক্ষেত্রে যাতে ভুলভ্রান্তি না হয় ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব। আন্দোলনে র্যাবের ১৬৮টি অস্ত্র খোয়া গিয়েছিল যার মধ্যে ৯০টি উদ্ধার হয়েছে। আর লুট হওয়া ১২ হাজার গুলির মধ্যে সাত হাজার উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে লুণ্ঠিত ২২৮টি অস্ত্র ও ১১ হাজার ৯৪১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও ৫ আগস্ট-পরবর্তী দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৮০ জন অপরাধীকে গ্রেফতার, ১৫০টি অস্ত্র ও এক হাজার ২৯ রাউন্ড গোলাবারুদসহ সর্বমোট ৪৬৮টি অস্ত্র ও ২০ হাজার ২৭৩ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র্যাব।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জড়িতদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, এখন পর্যন্ত চারজন সাবেক মন্ত্রী, ১৭ জন সাবেক এমপি, সাবেক মেয়র/উপজেলা/ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ৪০ জন, কাউন্সিলর/মেম্বার ১৬ জন, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ১৮৩ জন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করে ৩০ জন সরাসরি গুলিবর্ষণকারীসহ সর্বমোট ৩৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা