নতুন সিরিয়া গড়ার অঙ্গীকার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০৫
- নির্যাতন ও হত্যায় জড়িতদের ক্ষমা নেই : বিদ্রোহী নেতা
- বিদ্রোহীদের সাথে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
- ইসরাইল সিরিয়ায় শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করছে : তুরস্ক
- সব কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা বাশারের বাথ পার্টির
নতুন সিরিয়া গড়ার অঙ্গীকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-বশির । তিনি বলেছেন, বাশার-পরবর্তী নতুন সিরিয়া হবে সবার। সব সম্প্রদায়ের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করবে সরকার। এক সাক্ষাৎকারে নিজ প্রশাসনের এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছেন মোহাম্মদ আল-বশির।
ইতালীয় সংবাদপত্র কোরিয়ারে ডেলা সেরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভঙ্গুর নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন বশির। তিনি জানান, বাশার আল-আসাদের আমলে যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোয় শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে বাধ্য হওয়া সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সহজ করতে কাজ করবে সরকার।
মোহাম্মদ আল-বশির বলেন, বাশারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ভয়াবহ সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সিরিয়ার নিজস্ব মুদ্রার মান অত্যন্ত কম। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেই বললেই চলে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেই সামনে অগ্রসর হতে হবে। সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে। এর আগে গত মঙ্গলবার আলজাজিরা টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই মুহূর্তে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন মোহাম্মদ আল-বশির। তা ছাড়া সিরিয়াকে নিয়ে বিদেশীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বাশার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। বুধবার মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান তিনি। দামেস্ক থেকে সাক্ষাৎকারটি নেন স্কাই নিউজের জেইন জাফার এবং সেলিন আল-খালদি। তাদের সাথে আলাপকালে সিরিয়াকে পুনর্গঠনের কথা জানান জোলানি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও সঙ্ঘাতে সিরিয়ার মানুষ ক্লান্ত। নতুন করে তারা আর কোনো সঙ্ঘাত চায় না।
ইরানি মিলিশিয়া, হিজবুল্লাহ এবং বাশার সরকারের অপসারণ সিরিয়ার পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন জোলানি। তিনি বলেন, ‘তাদের অনুপস্থিতিই সমাধান। বর্তমান পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।’ বাশার পতনের অভিযানে নিজ দলের যোদ্ধাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন জোলানি। তিনি বলেন, তারা কোনো বিদেশী সহায়তা বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই সিরিয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। বাশারের প্রতি রুশ ও ইরানি সমর্থনের দিকে ইঙ্গিত করে জোলানি বলেন, উপনিবেশবাদীরা সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
নির্যাতন ও হত্যায় জড়িতদের ক্ষমা নেই : বিদ্রোহী নেতা
আলজাজিরা জানায়, তবে স্বৈরাচার বাশার আল-আসাদ সরকারের সময় কারাবন্দীদের নির্যাতন ও হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা ও তাদের ক্ষমা না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি (আল-শারা)। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের যেসব কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়েছেন, তাদের ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে অনুরোধ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশারকে হটাতে নেতৃত্ব দেয়া এ বিদ্রোহী নেতা। হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নেতা আহমদ আলুশারা গত বুধবার সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান।
আসাদ সরকারের সময় বন্দী নির্যাতনে জড়িতদের ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে আল-শারা বলেন, ‘আমরা সিরিয়ায় তাদের (সাবেক কর্মকর্তাদের) খুঁজে বের করব। যারা বিদেশে পালিয়েছেন, তাদের ফেরত পাঠাতে দেশগুলোর কাছে আমরা অনুরোধ জানাব; যাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়।’ আসাদ সরকারকে হটানোর পর সিরিয়ায় হাজারো কারাবন্দীকে মুক্ত করে দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারসহ দেশটির বিভিন্ন কারাগার থেকে নিখোঁজ হওয়া হাজারো মানুষের স্বজন এখন তাদের খুঁজে ফিরছেন। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আল-শারা পতিত সরকারের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে এ হুঁশিয়ারি দিলেন।
১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে এ মুহূর্তে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর চেষ্টা করছেন বিদ্রোহী নেতারা। নতুন এই শাসকেরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারেন কি না- সেদিকে সতর্ক নজর রাখছে বিশ্ব। এ অবস্থায় বিদ্রোহী নেতার বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্বের সাতে দেখা হচ্ছে। একসময় আল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা আল-শারার এইচটিএস এখন সিরিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর শক্তি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন শাসকদের অবশ্যই ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের দাবি পূরণ এবং সহিংসতা ঠেকানো ও আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ইতোমধ্যে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার লক্ষ্য, লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনা, দেশবাসীর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা ও জনগণকে মৌলিক সেবা দেয়া। তবে দেশ পুনর্গঠনের কাজ করা হবে খুবই কঠিন। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল বশির বলেন, ‘আমাদের কোনো বৈদেশিক মুদ্রা নেই। নেই ঋণ ও বন্ড পাওয়ার নিশ্চয়তা। আমরা এখনো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি।’
বিদ্রোহীদের সাথে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র : বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ শেষে সিরিয়াকে পুনর্গঠন করার কাজটি অনেক জটিল হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরাও। কেননা, গৃহযুদ্ধকালে অনেক শহর বোমা হামলায় একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে। দেশের অনেক গ্রামাঞ্চল হয়ে পড়েছে জনশূন্য। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় মুখথুবড়ে আছে দেশের অর্থনীতি। গৃহযুদ্ধে প্রতিবেশী তুরস্কে পালিয়ে গেছেন লাখ লাখ সিরীয়। আধুনিককালে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কটগুলোর এটি একটি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সতর্কতার সাথে সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। যদিও বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস ওয়াশিংটন, জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আরো কিছু পক্ষের কাছে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ার নতুন সরকারকে সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখানোর প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে হবে। যাদের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, তাদের সবার কাছে এ সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সিরিয়াকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার বা প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা প্রতিরোধ করতে হবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব এমন আচরণ করবে, যাতে আসাদের আমলে দেশটির সরকার ও বিদ্রোহীদের ওপর আরোপ করা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া সহজ হয়।
ইসরাইল সিরিয়ায় শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করছে : তুরস্ক
ইসরাইল সিরিয়ায় শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাঁকান ফিদান। তিনি বলেন, গাজা ধ্বংসকারী ইসরাইল এখন আমাদের সিরীয় ভাই-বোনদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি। বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার মিশনে সিরিয়ার কয়েকটি বিরোধী দলকে সমর্থন জানায় তুরস্ক। তুরস্কের পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে ফিদান বলেন, সিরিয়ার জনগণ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ইসরাইল তাকে বিপন্ন করছে। গাজা ধ্বংসকারী ইসরাইল এখন আমাদের সিরীয় ভাই-বোনদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিরিয়ার জাতীয় ঐক্য, স্থিতিশীলতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সমৃদ্ধিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দেই। এসব লক্ষ্য অর্জনে আঙ্কারা সব আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংশ্লিষ্টদের সাথে কাজ করবে।
বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পরপরই ইসরাইলি সেনারা গোলান মালভূমির কাছে বাফার জোন দখল করে নেয়। শুধু গোলান অঞ্চলেই নয়, সিরিয়াজুড়ে শত শত কাঠামোতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, শনিবার থেকে ইসরাইলি বিমান বাহিনী সিরিয়ার ৩২০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র ডিপো, ড্রোন, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, রাডার এবং নৌবাহিনীর জাহাজ। এমন প্রেক্ষাপটে তুরস্কের দিকে আঙুল তুলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি দেশটির নাম উল্লেখ না করলেও আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়া তুরস্কের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, হ্যাঁ, সিরিয়ার একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র স্পষ্টতই এই বিষয়ে ভূমিকা পালন করেছে এবং তা অব্যাহত রেখেছে- সবাই এটি দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু মূল ষড়যন্ত্রকারী, মূল পরিকল্পনাকারী ও কমান্ড সেন্টার আমেরিকা ও ইহুদিবাদী সরকারের মধ্যেই নিহিত।
সব কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা বাশারের বাথ পার্টির : সশস্ত্র বিরোধীরা ক্ষমতা দখলের পর সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাথ পার্টি দলের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সিরিয়ার আল ওয়াতান সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাথ পার্টি ঘোষণা করে, জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পার্টির নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দলের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। বিবৃতিতে বলা হয়, অস্ত্রসহ দলের সব বস্তুগত সম্পদ স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা