১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

৪ খাতে হাজার কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি কর্ণফুলী টানেলে

-

অর্থনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ানো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। শুধুমাত্র চারটি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এটি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের ১৩ শতাংশের বেশি।
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, আর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২০২০ সালের নভেম্বরে এর উদ্বোধনের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারীসহ কয়েক দফায় পেছায় প্রকল্প শেষ হওয়ার সময়। সাথে বাড়ে ব্যয়ও। প্রাথমিকভাবে যা সাড়ে আট হাজার কোটির কিছুটা কম ছিল সেটা বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। এর মাঝে বাংলাদেশ ব্যয় করছে চার হাজার ৬১৯ কোটি ৭০ লাখ এবং চীনের ঋণ ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা।
মোট ৯.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩১৫ কিলোমিটার। দুই লেনের ডুয়েল টানেলটির প্রবেশপথ-চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের কাছে, কর্ণফুলী নদীর ভাটির দিকে নেভি কলেজের কাছে। এর বহির্গমন আনোয়ারা প্রান্তে সার কারখানার কাছে।
প্রকল্পটির দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তের প্রতিবেদন সূত্র থেকে জানা গেছে, মূল চুক্তির (টার্নকি) অধীনে টানেল নির্মাণকাজের সুপারভিশন ফি পরিশোধ করা সত্ত্বেও ভিন্ন চুক্তির অধীন সরকারি খাত হতে আবার সুপারিভশন ফি পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩০২ দুই কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার চারশত আটত্রিশ টাকা। এর বাইরে নেগোশিয়েটেড চুক্তিমূল্য বাজারমূল্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হওয়া সত্ত্বেও অপ্রাপ্য প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রদান করায় সরকারের ২২৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭০ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে । এর পাশাপাশি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সার্ভিস এরিয়ায় কাজ সম্পাদনের নামে প্রকল্প এলাকার বাইরে ২৮টি বাংলো (পর্যটন কেন্দ্র) নির্মাণে সরকারের আর্থিক ক্ষতি ২৭৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। একই সাথে চুক্তির আইটেমের বিপরীতে কোনোরূপ কমপ্লায়েন্স ডকুমেন্টস ও কাজ সম্পাদন ব্যতিরেকে ব্যয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। শুধু এই চার খাত মিলে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৫১৩ কোটি টাকার বেশি, যা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যে মূল প্রস্তাব ছিল তার ১৩ শতাংশের বেশি। অন্যান্য খাতের দুর্নীতির হিসাব করা হলে প্রায় এক- চতুর্থাংশ অর্থ কম খরচে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হতো বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
টানেলের অনিয়ম অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মূল চুক্তির অধীন টানেল নির্মাণকাজের সুপারভিশন ফি পরিশোধ করা সত্ত্বেও ভিন্ন চুক্তির অধীন জিওবি খাত হতে আবার সুপারিভশন ফি পরিশোধ করায় সরকারের যে আর্থিক ক্ষতি ৩০২ কোটি ৩০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয় তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয় । এতে বলা হয়, নিরীক্ষাকালে চুক্তিপত্র, আইপি (ইন্টেরিম পেমেন্ট), ভেরিয়েশন অর্ডার ও বিওকিউ পর্যালোচনা অনুযায়ী প্যাকেজ নম্বর ডব্লিউডি ১ এর আওতায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজের জন্য ২০১৫ সালের ৩০ জুন সেতু কর্তৃপক্ষ চায়না কমিউনিকেশন কোম্পানির সাথে সাত কোটি পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের একটি ইপিসি-টার্নকি চুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্ণিত চুক্তির আইটেম নম্বর ১৩ এর অধীন কন্সট্রাকশন সুপারভিশন ফি বাবদ ৭০ লাখ ৯ হাজার ৬০৫ ডলার এবং সাব-আইটেম নম্বর ১৩১৪-০০১ এ কন্টিনজেন্সি বাবদ দুই কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার চুক্তিমূল্য ছিল। কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সুপারভিশন ফি আইটেমের অধীন চুক্তিমূল্যের সমুদয় ৭০ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার ৫৭৯ টাকা পরিশোধ করে।
এদিকে আবার, প্যাকেজ নম্বর এসডি ২ এর অধীন টানেল নির্মাণের ডিজাইন রিভিউ, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কাজের জন্য ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর কর্তৃপক্ষ এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড নামক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে ২৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬৪ টাকা মূল্যের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর তারিখে ৩১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ২০৯ টাকা মূল্যের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এর বিপরীতে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ৩০২ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার ৪৩৮ টাকা পরিশোধ করা হয়।
ইপিসি-টার্নকি চুক্তির শর্তের আওতায় কার্য বাস্তবায়নে যাবতীয় সুপারভিশন ঠিকাদার করবেন। সে কারণে, ঠিকাদার চুক্তির আইটেমের অধীন কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন ফি অন্তর্ভুক্ত করেন এবং এ কাজের জন্য আলাদা প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করেন। সুতরাং কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কাজের জন্য আলাদা চুক্তির অধীন জনবল নিয়োগের প্রয়োজন নেই। আলোচ্য ক্ষেত্রে, টার্নকি চুক্তির মূল শর্ত এবং বৈশিষ্ট্যের বাইরে জিওবি খাত থেকে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে, মূল চুক্তিতে টানেল কনস্ট্রাকশনের সুপারভিশন ফি ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়েছে বিধায় জিওবি খাত হতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগপূর্বক ফি প্রদান করায় একই কাজের জন্য দ্বৈত পরিশোধে সরকারের ৩০২ কোটি ৩০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের পাল্টা যুক্তি দেখালেও সে আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক নয় বলে উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওপেন টার্নকি পদ্ধতিতে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঠিকাদার নিজে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট ও কনস্ট্রাকশনের (ইপিসি) দায়িত্ব পালন করে। এ ব্যবস্থায় ঠিকাদার প্রকল্প চালু হওয়া পর্যন্ত দায়ী থাকায় নির্মাণকাজের সব ঝুঁকি বহন করে। ঝুঁকিবহনের জন্য ঠিকাদার প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাজারমূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত চুক্তিমূল্য গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সুপারভিশনের কাজ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নিগোশিয়েশন পর্যায়ে ঠিকাদারের অনুকূলে সুপারভিশন আইটেমটি বাদ দেয়া আবশ্যক ছিল। এজন্য দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আপত্তিকৃত অর্থ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করা আবশ্যক মর্মে সুপারিশ করা হয়।
টানেলের প্রকল্পে নিগোশিয়েটেড চুক্তিমূল্য বাজারমূল্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হওয়া সত্ত্বেও অপ্রাপ্য প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রদান করায় সরকারের ২২৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭০ টাকা আর্থিক ক্ষতির বিবরণে বলা হয়, প্রকল্প চুক্তির আওতায় নির্মাণকার্য সম্পাদনের পর ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আইপিসি চায়না কমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশক্রমে মোট এক হাজার ৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। ওই পরিশোধিত অর্থের ওপর চুক্তির পিসিসি ক্লজ ১৩.৮ এ বর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণক্রমে ২০১৯ সালের বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (বিবিএস) বাজারদরকে ভিত্তিমূল্য সূচক এবং বর্তমান বাজার (বিবিএস কর্তৃক প্রকাশিত দর) মূল্যকে ভাগ করে অ্যাডজাস্টমেন্ট ফ্যাক্টর নির্ণয়পূর্বক প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট বাবদ ২২৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।
পিসিসি ক্লজ ১৩.৮ এ বর্ণিত নির্দেশনা অনুসারে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্যের সূচক হবে দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখের ২৮ দিন পূর্বের বাজারদর। প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রদান সংক্রান্ত ক্যালকুলেশন শিট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, রডের (রি-ইনফোর্সমেন্ট স্টিল) ভিত্তিমূল্য ১০৪.৩০ টাকা/ কেজি ধরা হয়েছে। কিন্তু, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সাথে নিগোশিয়েশনের মাধ্যমে প্রতি ১৩৭.০৫ টাকা মূল্যে চুক্তি করেন। অথচ চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে ভিত্তিমূল্য ৭৩.৫৮ টাকা/কেজি ধরে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রদান করা হয়েছে। চুক্তিকালীন রডের চুক্তিমূল্য ছিল তৎকালীন বাজারমূল্যের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। অনুরূপভাবে, কনক্রিট কাস্টিং ক্ষেত্রে ৭.৭৫ গুণ বেশি । উল্লেখ্য যে, ৬০ গ্রেড ডি ফর্ম বার এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি ১১০ টাকা ।
চুক্তির পিসিসি ক্লজ ১৩.৮ অনুযায়ী বাজারমূল্য অপেক্ষা বেশি দামে মালামাল ক্রয় করলে সে ক্ষেত্রে ঠিকাদার মূল্য সমন্বয় প্রাপ্য হবেন। আলোচ্য ক্ষেত্রে চুক্তিমূল্য বর্তমান বাজারমূল্য অপেক্ষা তিন গুণ বেশি। সুতরাং ঠিকাদার কর্তৃক কার্য সম্পাদনকালে চুক্তিমূল্যের অধিক দরে নির্মাণসামগ্রী ক্রয় করা হয়নি বিধায় ঠিকাদার প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রাপ্য নন। তা সত্ত্বেও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিগোশিয়েশনের মাধ্যমে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্লজের অপব্যাখ্যা করে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে ঠিকাদার অপ্রাপ্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ফলে, নিগোশিয়েটেড চুক্তিমূল্য বাজারমূল্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হওয়া সত্ত্বেও অপ্রাপ্য প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রদান করায় ২২৪ কোটি ১৩ টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
চুক্তির মূল আর্থিক সংস্থান অনুযায়ী মাল্টিলেন রোড টানেল নির্মাণের জন্য ৭০ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলারের জি টু জি অর্থায়নে কাজের সাকুল্য মূল্য হিসাবে নেগোশিয়েশন করা হয়। পরবর্তীতে নির্মাণকাজের প্রাইজ অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রদানের জন্য মূল চুক্তিমূল্য সমন্বয় বাবদ অর্থের সংস্থান নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে সংশোধিত চুক্তিতে ৬০০ কোটি টাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাজারমূল্য এবং চুক্তির আইটেমগুলোর মধ্যে দরের তুলনায় পরিলক্ষিত হয় যে, চুক্তিতে আইটেমগুলোর মূল্য উচ্চ হারে প্রদান করা হয়েছে। চুক্তিতে যেমন, সি ২০ আরসিসি উদ্ধৃত হয়েছে ২০ হাজার ১৬৭ টাকা; সি ৩৫ উদ্ধৃত হয়েছে ৪০ হাজার ৭৯৫ টাকা এবং ডিফর্ম বার উদ্ধৃত হয়েছে ১২০ টাকা। কিন্তু, ২০১৫ সালের ভিত্তি তারিখ অনুযায়ী সি ২০ আরসিসি ১১ হাজার ৯২৫ টাকা, সি ৩৫ ২৪ হাজার ৭৯৫ টাকা এবং ডিফর্ম বার ৯২ টাকা। নির্মাণকাজের মূল আইটেমগুলো বাজারদর অপেক্ষা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চ দরে চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ঠিকাদার বর্তমান বাজারদর (২০২২-২০২৩) অপেক্ষা বেশি মূল্য নির্মাণকাজে বিল গ্রহণ করছে।
উল্লেখ্য যে, বিবিএস সূচকের ভিত্তিতে মূল্য সমন্বয়ের বিধান রাখা হয়। বিবিএসের মূল্য সূচকগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য এবং সরঞ্জামের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়। সুতরাং বিবিএসের মূল্যসূচক শুধু দেশজ উৎপাদিত পণ্যের ওপর প্রযোজ্য। কিন্তু, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যেসব পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না, যা ঠিকাদার কর্তৃক আমদানিকৃত মালামাল সরাসরি প্রকল্প কাজে ব্যবহার করায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি/মুদ্রা সঙ্কোচন দ্বারা প্রভাবিত নয়, সেসব বিদেশী উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সমন্বয় পরিশোধ করার জন্য স্থানীয় সূচক ব্যবহার করে । তাই মূল্য সমন্বয় হিসেবে ঠিকাদারকে অযৌক্তিক সুবিধা দেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ভিত্তি মূল্য অপেক্ষা চুক্তিতে আইটেমের দর বেশি থাকায় বিবিএসের বর্তমান বাজারদরের পার্থক্য দেখিয়ে ঠিকাদারকে অপ্রাপ্য মূল্য সমন্বয় প্রদান করায় ২২৪ কোটি টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতি। এতে চুক্তির পিসিসি ক্লজ নম্বর ১৩.৮ লঙ্ঘন হয়েছে।
নিরীক্ষা সুপারিশে ঠিকাদারকে অপ্রাপ্য প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য দায়ী ব্যক্তি/ ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে আপত্তিকৃত অর্থ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করার কথা বলা হয়।
চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সার্ভিস এরিয়ায় কাজ সম্পাদনের নামে প্রকল্প এলাকার বাইরে ২৮টি বাংলো নির্মাণে সরকারের ২৭৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি প্রসঙ্গে বলা হয়, চুক্তির অধীন, সার্ভিস এরিয়া, (পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে) আইটেমের অনুকূলে প্রকল্প এরিয়া থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের পার্কিং এলাকার স্থানে ২৮টি বাংলো, একটি রিসিপশন বিল্ডিং, একটি মডেল মেস এবং একটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করার জন্য প্রভিশনাল সাম হতে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ২৭৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সার্ভিস এরিয়া, বলতে এমপ্লয়ার্স রিকুয়ারমেন্টস, অনুযায়ী টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ঠিকাদার কর্তৃক বিল্ডিং নির্মাণ এবং সাইট ফ্যাসিলিটিস প্রদান করবেন বুঝানো হয়েছে। সাব-ক্লজ অনুযায়ী এমপ্লয়ার্স রিকুয়ারমেন্টস, হলো প্রকল্প এরিয়ার কাছাকাছি স্থানে সাইট অফিস ভবন নির্মাণ। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকল্প এরিয়ার বাইরে চুক্তিতে বর্ণিত এমপ্লয়ার্স রিকুয়ারমেন্টস, বহির্ভূত বাংলো, রিসিপশন বিল্ডিং, মডেল মেস এবং কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করার জন্য বিল পরিশোধ করা হয়েছে। চুক্তির এতদসংক্রান্ত সংশোধনে এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চুক্তির শর্ত নম্বর ১৩.৫ অনুযায়ী প্রভিশনাল সাম এর আওতায় কোনো কাজ বাস্তবায়ন করা হলে ওই কাজের প্রাক্কলন প্রস্তুত এবং দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। আলোচ্য ক্ষেত্রে, আলাদা দরপত্র না করে মূল ঠিকাদারকে প্রাক্কলন ছাড়া মাইলস্টোনের (লামসাম) ভিত্তিতে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
ফলে, চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সার্ভিস এরিয়ায় কাজ সম্পাদনের নামে প্রকল্প এলাকার বাইরে ২৮টি বাংলো (পর্যটনকেন্দ্র) নির্মাণে সরকারের ২৭৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
নিরীক্ষা মন্তব্যে বলা হয়, জবাব আপত্তি নিষ্পত্তি সহায়ক নয়। কারণ, চুক্তিতে সার্ভিস এরিয়া বলতে টানেল নির্মাণকাজের সুবিধার্থে এমপ্লয়ার্স সাইট ফ্যাসিলিটিস আওতায় শুধু সাইট অফিস নির্মাণের সংস্থান রয়েছে। সার্ভিস এরিয়া টানেল নির্মাণের সাথে সম্পর্কিত ছিল না। সুতরাং টানেল নির্মাণে হু করে পর্যটন ব্যবসার জন্য অর্থ ব্যয় করার সুযোগ নেই।
নিরীক্ষার চূড়ান্ত সুপারিশে দায়ী ব্যক্তি ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে আপত্তিকৃত অর্থ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করা আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হয়।
চুক্তির আইটেমের বিপরীতে কোনোরূপ কমপ্লায়েন্স ডকুমেন্টস এবং কাজ সম্পাদন ব্যতিরেকে ব্যয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি ২৫০ কোটি টাকা অনিয়মের বিবরণে বলা হয়, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কন্টিনজেন্সি আইটেমের অধীন চুক্তির মূল্যের সময় ২৫০ কোটি টাকা চূড়ান্তভাবে পরিশোধ করে।
আইটেমের বিপরীতে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশক্রমে বিল পরিশোধ করতে হয়। চুক্তির অন্যান্য আইটেমে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসসহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশক্রমে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আলোচ্য আইটেমের ক্ষেত্রে কন্টিনজেন্সি বাবদ ব্যয়ের উল্লেখ করা হলেও ওই ব্যয়ের স্বপক্ষে প্রমাণক হিসাবে কী বাবদ খরচ করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো বিল-ভাউচার বা কমপ্লায়েন্স ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি। ফলে পুরো অনিয়মের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্প বহির্ভূত খরচ দেখানো সরকারের আর্থিক ক্ষতি।
নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের জবাবে বলা হয়, চুক্তিটি লামসাম কন্ট্রাক্ট। আইটেম কোড ০১১২-০০২ অনুসারে কস্ট সেন্টারটি আনুমানিক প্রশাসনিক ব্যয় এবং কস্ট সেন্টার ১৩ (কন্টিনজেন্ট) খরচ সম্পূর্ণ প্রকল্পের সাধারণ ঝুঁকিগুলো বহন করার জন্য। উপরোক্ত বিবেচনায় এই উভয় খরচের প্রকৃতি ভিন্ন এবং তাই এ হিসাব সরকারি অর্থের কোনো ক্ষতি হয়নি। তদুপরি, চুক্তিটি মাইলস্টোনভিত্তিক হওয়ায় কস্ট সেন্টারের সাথে সম্পর্ক নেই ।
নিরীক্ষার চূড়ান্ত সুপারিশে বলা হয়, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আপত্তিকৃত অর্থ তাদের কাছ থেকে আদায়পূর্বক সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে ৫৩ নাগরিকের উদ্বেগ ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে দুর্নীতি কে প্রশয় দেয়া হবে না : জাতীয় নাগরিক কমিটি ফতুল্লা থেকে অপহৃত ২ শিশু বরিশাল থেকে উদ্ধার মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষককে চাকরিচ্যুতের দাবি টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি ট্রাম্প আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য দিবসে রিকের র‌্যালি ও মানববন্ধন অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল চুয়েটে র‌্যাগিংয়ের দায়ে ১১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ঢাকায় উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার না করতে ডিএমপির নির্দেশনা তামিমের ঝড়ে জয় পেল চট্টগ্রাম তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা, কর্মকর্তা প্রত্যাহার

সকল