আগরতলামুখী লংমার্চে জনস্রোত
দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করিনি- নিজস্ব প্রতিবেদক ও আখাউড়া সংবাদদাতা
- ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ করার দাবিতে ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে আখাউড়া সীমান্তে লংমার্চ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।
গতকাল সকাল ৯টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ লংমার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। লংমার্চটি যাত্রাবাড়ী, কাঁচপুর ব্রিজ, নরসিংদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে (সীমান্তে) সমাবেশের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এ কর্মসূচি শেষ হয়। বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা থেকে আসা লংমার্চের গাড়িবহর আখাউড়ায় প্রবেশ করে। তবে যানজটের কারণে সব গাড়ি বন্দর এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি। লংমার্চ ঘিরে সীমান্ত এলাকায় ছিল কড়া নিরাপত্তা। কাস্টমস এলাকা পর্যন্ত লোকজনকে আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নয়াপল্টনে লংমার্চ শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করতে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করা হয়নি। আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছি, এই স্বাধীনতা কি আমরা বিক্রি করে দেবো? আমরা পিন্ডির কাছে থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, এটি দিল্লির কাছে আমরা সমর্পণ করব এই রক্ত আমাদের নেই। আজ দিল্লির যারা সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী; তারা মনে রেখো, তোমরা একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু লেডি ফেরাউনকে টিকিয়ে রাখতে সমর্থন দিয়েছিলে।’
রিজভী বলেন, ‘আজ ভারতের শাসকগোষ্ঠী গোটা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে সমালোচিত। অথচ ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করে। ওরা (ভারত) বাংলাদেশের মানুষের রক্তের যে তেজ, আত্মশক্তি, বীরত্ব এটা দিল্লির শাসকরা বুঝতে পারেনি।’
লংমার্চ চলাকালে ভৈরবে এক পথসভায় দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, ‘ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই লংমার্চ কর্মসূচি করছি আমরা। আমরা ভারতকে সকল প্রকার আগ্রাসী মনোভাব পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।
পথসভায় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ আর চলবে না। আমরা স্বাধীনতা এনেছি মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য, তাকে বিপন্ন করতে দেব না। স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজনে আবার হাতিয়ার তুলে নেবো।
তিনি বলেন, আমরা ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র ভেবেছিলাম। কিন্তু আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে তারা হামলা করে সম্পত্তি বিনষ্ট করেছে, আমাদের পতাকা পুড়িয়েছে। এসব কখনো বন্ধুত্বের নমুনা হতে পারে না। আজকের পর থেকে ভারতের সাথে কোনো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হবে না। এখন থেকে তাদের সাথে আলোচনা করতে হলে বহুপক্ষীয় আলোচনা করতে হবে।
ভারতের উদ্দেশে যুবদলের এই নেতা আরো বলেন, দেশের এই পরিবর্তন মেনে নিন। আমরা ভালো থাকতে চাই। বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার যে নতুন পথ শুরু হয়েছে, তাকে আপনারা সমর্থন করুন। শেখ হাসিনাকে আর প্রশ্রয় দেবেন না, এ দেশের মাটিতেই তার বিচার হবে।
এ সময় ভারতকে উদ্দেশ করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেছেন, ‘এ দেশের এক ইঞ্চি মাটির দিকে তাকালে সেই চোখ উপরে ফেলা হবে।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত। দেশের প্রয়োজনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব বিদেশী ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসন প্রতিহত করব।
ভৈরবে লংমার্চের গাড়িবহর প্রবেশ করার সময় সড়কের দুই পাশে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। তারা হাত নেড়ে, ফুল ছিটিয়ে গাড়িবহরকে স্বাগত জানান। এ সময় ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে নানা রকম স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। পরে লংমার্চটি আখাউড়া (স্থলবন্দর) সীমান্তে গিয়ে শেষ হয়।
লং মার্চ থেকে বন্ধুত্বের বার্তা : আখাউড়া স্থলবন্দরের সমাবেশ থেকে ভারতকে প্রভুত্ব ছাড়ার বার্তা দিয়ে বন্ধুত্বের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সব ধরনের ষড়যন্ত্র বন্ধে ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। সকাল থেকে অন্তত ৮-১০টি জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ আখাউড়া আসতে থাকেন। দুপুরে বন্দর এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এস জিলানী। প্রধান অতিথি ছিলেন যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যুবদল সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম।
রাকিবুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘এ দেশে আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ দেশের মানুষ ভারতের আগ্রাাসী মনোভাব মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ। আবার যদি পতাকা অবমাননা হয় তাহলে আমরা এর কঠোর জবাব দেবো।’
নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানোর সময় সেখানে পুলিশ ছিল নীরব। তারা প্রতিবেশী দেশ। কিন্তু বন্ধু হতে পারেনি। তারা তিস্তার পানি না দিলেও ফেনী নদী থেকে নিয়ে গেছে। তারা পররাষ্ট্রনীতি কী হবে শেখায়। আগে তাদের জাহাজ ভিড়তে দিতে হয়। স্বাধীনতার পর থেকে তারা শোষণ করে। আমরা জামদানি পাঠাই, ইলিশ পাঠাই। তারা ফেলানীর লাশ দেয় আর ফেনসিডিল দেয়।’
মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীন চেতা। তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের বাইরে প্রভু নেই। তারা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চায়। সার্বভৌম প্রশ্নে এ দেশের মানুষ প্রয়োজনে ঝুকি নিতে রাজি।’