ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও আসন পুনর্বিন্যাস করতে হবে : ডা: শফিক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনের নামে প্রহসন করায় দেশের মানুষ ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। অসংখ্য তরুণ-তরুণীর বয়স হয়েছে ভোট দেয়ার। কিন্তু তারা ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচনের প্রতি তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এ জন্য আমরা যৌক্তিক সময় দেয়ার পক্ষে। বিলম্ব বা দীর্ঘায়িত্ব সময় নয়, যৌক্তিক সময় দিতে চাই। পাশাপাশি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রবাসী ভাইয়েরা আমাদের সাথে সমান তালে যুদ্ধ করেছেন। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাদেরকেও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গতকাল রাজধানীর মগবাজার আল ফালাহ মিলনায়তনে দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, বৈষম্যহীন, ন্যায়বিচার সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কাউকে না কাউকে এ দেশের দায়িত্ব হাতে তুলে নিতে হবে। এ সুষ্ঠু নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমতল মাঠ তৈরি করুন। এর জন্য একটি রোডম্যাপ দিন। আমরা আরও বলেছি সংস্কারের এই মৌলিক বিষয়গুলো সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিতে হবে।
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম মৌলিক দুটি বিষয়ের একটি হলো- রাষ্ট্রের সকল প্রাপ্ত বয়ষ্ক নাগরিকদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিগত সরকার জুলুম করে বহু জায়গায় তৎকালীন বিরোধী দলে যারা ছিলেন তাদের এলাকাগুলোকে টার্গেট করে আসন সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। তারা আসন পুনর্বিন্যাসের নামে জুলুম করেছে। এগুলোকে আবার পুনর্বিন্যাস করা লাগবে বিবেক ও বাস্তবতার আলোকে।
তিনি বলেন, দেশকে অশান্ত করার জন্য পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তারা আমাদের সমাজকে অস্থিতিশীল করতে চায়। বাংলাদেশের বিচক্ষণ দেশপ্রেমিক জনতা তাদের পালস বুঝতে পেরে তাদেরকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র আল্লাহ তায়ালা ব্যর্থ করে দিয়েছেন। তাদের এই অপপ্রয়াস জাতিকে আরেকবার ঐক্যবদ্ধ হতে সহযোগিতা করেছে। আমাদের প্রতিপক্ষ যদি এটা বুঝতে পারেন, এই দেশের মানুষ আর কারো কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করবে না এবং কোনো রক্ত চক্ষুকে পরোয়া করবে না।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ মানবিক দেশ চাই। আমরা একটা দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই। সুবিচারপূর্ণ একটি সমাজ চাই। আমরা আমাদের যুবকদেরকে এ দেশের উন্নয়নের কারিগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব আমরা ক্রমান্বয়ে তাদের হাতে তুলে দিতে চাই। এমন রূপক বাংলাদেশ গঠনে, মানবিক বাংলাদেশ গঠনে আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার প্রতি সম্মান রেখে সবাইকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা আশাবাদী, প্রিয় দেশবাসীর সহযোগিতা পেলে একটা কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব। এ জন্য আমরা দেশপ্রেমিক সব জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। জাতীয় স্বার্থের জায়গায় আমরা যেন বিভক্ত না হই, বরং আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি। জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে জাতির বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করবে তারা অবশ্যই ব্যর্থ হবে। আল্লাহ তাদেরকে ব্যর্থ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
আবদুল কাদের মোল্লার অবদানের কথা স্মরণ : জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, বিশিষ্ট সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী আবদুল কাদের মোল্লার অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, আবদুল কাদের মোল্লা শাহাদাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, লেখক, শিক্ষাবিদ এবং গবেষক হিসেবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। কলম সৈনিক হিসেবে তিনি লেখনীর মাধ্যমে মানুষের বিবেকবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ২০১০ সালের ১৩ জুলাই সরকার তাকে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে স্থাপিত গণজাগরণ মঞ্চের দাবি অনুযায়ী সরকার আইন সংশোধন করে আপিল দায়ের করে। সংশোধিত আইনের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয়। আবদুল কাদের মোল্লা মৃত্যুদণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পাননি। এমনকি রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পূর্বেই তড়িঘড়ি করে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাকে ফাঁসি দেয়ার প্রায় দেড় বছর পর তার রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি বিচারের নামে কত বড় প্রহসনের শিকার হয়েছেন!
জামায়াত আমির বলেন, শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পূর্বে বলে গিয়েছেন, ‘সরকার আমাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিচ্ছে। আমার শরীরের প্রতি ফোঁটা রক্ত এ দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করবে।’ দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার রক্তের বদলা নেয়ার জন্য তিনি ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গিয়েছেন।
জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ : বাংলাদেশী ৭৯ জন জেলে ও নাবিককে ২টি ফিশিং বোর্ডসহ সুন্দরবন এলাকা থেকে অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে ভারতীয় কোস্টগার্ড সুন্দরবন এলাকা থেকে ৭৯ জন বাংলাদেশী জেলে ও নাবিকসহ এফভি মেঘনা-৫ ও এফভি লায়লা-২ নামক দুটি অত্যাধুুনিক ফিশিং বোর্ড অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকা থেকে বাংলাদেশী জেলে ও নাবিক ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। ভারতের এই উসকানিমূলক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা