০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`

দিল্লিতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে ফের রোহিঙ্গা

-


ভারতের দিল্লিতে ভোটের আলোচনাকেন্দ্রে এখন রোহিঙ্গারা। বিজেপি দাবি করছে, রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে ভোটার আইডি পেতে সহায়তা করেছে ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টি। আর আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকে পাল্টা বলা হচ্ছে, বিজেপিই দিল্লিতে রোহিঙ্গাদের ‘এনেছে এবং বসতি গড়ে দিয়েছে।’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা আবারো দিল্লিতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে, যেখানে দুই মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা, সেখানে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং বিরোধী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একে অপরের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য দোষারোপ করছে।
গত এক দশকে দিল্লি শহর শাসন করার সময় রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীদের অবৈধভাবে পরিচয়পত্র পেতে সহায়তা করেছে বলে আম আদমির বিরুদ্ধে বিজেপির আনা অভিযোগে স্তম্ভিত দলটি। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং গত রোববার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতীশি পুরীর দুই বছরেরও বেশি পুরনো এক বিবৃতি মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিল্লির বক্করওয়ালায় কম দামের ফ্ল্যাটে স্থানন্তরের কথা বলা হয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবি অস্বীকার করে। প্রতিবেশী মিয়ানমারের মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শতাংশ রোহিঙ্গারা, যেখানে তারা দীর্ঘ দিন ধরে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত। নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন থেকে পালিয়ে, ২০১৭ থেকে জাতিগত সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠী ভারত ও বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যদের ‘বিশ্বের সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার মানুষ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
২০২২ সালের ১৭ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে ট্যাগ করে, পুরী এক্সে বলেন, “ভারত সর্বদা রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানিয়েছে। একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে, সব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিল্লির বক্করওয়ালা এলাকায় ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত করা হবে। তাদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা, ইউএনএইচসিআর আইডি এবং সার্বক্ষণিক দিল্লি পুলিশের সুরক্ষা দেয়া হবে।”

ভারতে সরকারি নথি অনুসারে, প্রায় এক হাজার ২০০ রোহিঙ্গা, যারা ২০১২ সালের দিকে ভারতে এসেছিল, তারা দিল্লির কালিন্দি কুঞ্জে ঝোপঝাড়ের মধ্যে বাস করে। দিল্লি সরকার রোহিঙ্গাদের নতুন জায়গায় স্থানান্তরের প্রস্তাব করেছে। তবে ভারতে এখন রোহিঙ্গাদের অবৈধ বিদেশী হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং তাদের কাঞ্চন কুঞ্জ ও মদনপুর খদরে অবৈধ বিদেশীদের আইন অনুযায়ী নির্বাসন না হওয়া পর্যন্ত ডিটেনশন সেন্টারে রাখতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনী আধিপত্য অর্জনের জন্য বিড : ২০২২ সালে, আম আদমি পার্টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং দিল্লির জাহাঙ্গীর পুরীর আশপাশে সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরে, বিজেপির বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপন করে দাঙ্গার মঞ্চায়নের অভিযোগ করেছিল। এর আগে, আম আদামি পার্টি শাহিনবাগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী অবস্থান এবং উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকারদের কাছে পৌঁছতে তার অস্পষ্ট অবস্থানের জন্য উদারপন্থী ভাষ্যকার এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলোকে সমালোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। গত শুক্রবার কেজরিওয়ালের অভিযোগের মোকাবেলা করতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিজেপি সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে ভারতের নির্বাচন কমিশনের সাথে মিলিত হয়ে শহরের ভোটার তালিকা থেকে হাজার হাজার আম আদমির ভোটারের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি পালাক্রমে আম আদমির বিরুদ্ধে সরকারি যন্ত্রপাতির অপব্যবহার করে ভোটার তালিকায় অবৈধ রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশী অভিবাসীদের নাম যুক্ত করার অভিযোগ করেছে।
পাল্টা আম আদমি রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বিজেপির অতীতে দেয়া আশ্বাস তুলে ধরছে। আম আদমি পার্টির সাংসদ রাঘব চাড্ডা এবং সঞ্জয় সিং; দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ ও গোপাল রাই এবং পার্টির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সন্দীপ পাঠক ক্যাপশন সহ এক্সে প্রচারণা চালিয়ে বলছেন, কারা রোহিঙ্গাদের দিল্লিতে নিয়ে এসেছে, কারা তাদের বসতি স্থাপন করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement