০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

১৫ বছর পর উইন্ডিজ জয় বাংলাদেশের

৫ উইকেট নেয়া তাজুলকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ৯১ রান করা জাকের আলী : ক্রিকইনফো -


জাকের আলি অনিকের স্মরণীয় ইনিংসের পর তাইজুল ইসলাম জ্বলে উঠলেন। অভিজ্ঞ বাঁ হাতি স্পিনারকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন তিন পেসার। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই শ’র নিচে গুঁড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ। ঘুরে দাঁড়িয়ে জ্যামাইকা টেস্ট জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে সমতা। এ সংস্করণে দেশের বাইরে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সব মিলিয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সফরে গিয়ে তিনটি টেস্ট জিতল তারা।
গত পরশু মঙ্গলবার রাতে কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে ম্যাচের চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ১০১ রানে জিতেছে টাইগাররা। জাকেরের আক্রমণাত্মক ৯১ রানে চড়ে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ করে থামে তারা। এর আগে থেকে ১৮ রানে পিছিয়ে থাকা ক্যারিবিয়ানরা পায় ২৮৭ রানের লক্ষ্য। তাইজুলের ঘূর্ণিতে নাজেহাল হয়ে দুই সেশনের মধ্যে তারা অলআউট হয় ১৮৫ রানে।

ক্যারিবিয়ানদের মাটিতে অতীতে দু’টি টেস্ট জেতার সুখস্মৃতি ছিল বাংলাদেশের। ২০০৯ সালের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল তারা। তবে ১৫ বছর আগের সেই দল ছিল প্রথম সারির তারকাদের ছাড়া সাজানো। এবার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের নেতৃত্বাধীন পূর্ণশক্তির উইন্ডিজের বিপক্ষে জিতে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটানোর পাশাপাশি ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করেছে সফরকারীরা। চা বিরতির পর ৪ উইকেটে ১৩৩ রান নিয়ে খেলতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাকি ৬ উইকেট তারা হারায় ৫২ রানে। তাইজুলের পাশাপাশি তাসকিন, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা করেন উইকেটের উল্লাস।
এক প্রান্ত ধরে রেখে কাভেম হজ খেলছিলেন আস্থার সাথে। সেই সাথে সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান বাড়াচ্ছিলেন। বাংলাদেশের পথের কাঁটা হয়ে ওঠা ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে থামতে হয় ফিফটি (৭৫ বলে ৫৫) করে। টানা দারুণ বল করতে থাকা তাইজুলের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিলেও কাজ হয়নি। ৭২ বলে ৩৭ রানের জুটি ভাঙার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে প্রতিপক্ষের। তাইজুলকে সরিয়ে তাসকিনকে বোলিংয়ে আনেন মিরাজ। আক্রমণে ফিরেই সফলতার মুখ দেখেন ডান হাতি পেসার। কিছুটা নিচু হওয়া বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন জাস্টিন গ্রিভস (২০)। তাসকিনের পরিবর্তে আক্রমণে ফিরেই জশুয়া দা সিলভাকে (১২) বিদায় করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল। তিনিও এলবিডব্লিউ হন।
বাংলাদেশের জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন পেসাররা। তাসকিনের পরিবর্তে আক্রমণে ফিরে একই ওভারে জোড়া শিকার ধরেন হাসান। বড় শট খেলার চেষ্টায় গড়বড় করে বোল্ড হন আলজারি জোসেফ। তিন বল পর কেমার রোচ হন এলবিডব্লিউ। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া গতিময় পেসার নাহিদ ইতি টানেন ম্যাচের। তার ইয়র্কারে এলোমেলো হয়ে যায় শামার জোসেফের স্ট্যাম্প।

ম্যাচসেরা তাইজুল দ্বিতীয় ইনিংসে টানা নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেন ৫০ রান খরচায়। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৫তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পান তিনি। সব মিলিয়ে এই টেস্টে ৭৪ রান খরচায় তার শিকার ৬ উইকেট। সিরিজসেরার পুরস্কার জেডেন সিলসের সাথে ভাগাভাগি করেন তাসকিন আহমেদ। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম জয়ের স্বাদ পান মেহেদি হাসান মিরাজ। তার কথায়, ‘প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিততে পেরেছি, এটি অবশ্যই বড় অর্জন। যেহেতু আমি প্রথম অধিনায়কত্ব করছি, এটি আমার জন্য বড় একটি পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। সবাই খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। অনেক সাপোর্ট করেছে। কৃতিত্ব সবার। আমি যেভাবে পরামর্শ দিয়েছি, সবাই মেনে নিয়েছে। এটি ভালো লাগা।’ তিনি যোগ করেন, ‘যেহেতু কন্ডিশন খুব সহজ ছিল না, সবাই মানসিকতা এরকম করে নিয়েছিল যে, ম্যাচটি জিততে হবে। সবাই মন থেকে চেয়েছে বলেই জিততে পেরেছি।’ এই জয়ের পথে বাংলাদেশের চমকপ্রদ ঘটনা ছিল দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং। প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রানের পুঁজি নিয়েও নাহিদ রানার দারুণ বোলিংয়ে ১৮ রানে লিড পায় বাংলদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে শাহাদাত হোসেন, সাদমান ইসলাম, স্বয়ং মিরাজ, সবাই আগ্রাসী সব শট খেলা শুরু করেন। সিরিজের ধারার বিপরীতে দ্রুত বাড়তে থাকে দলের রান। প্রথম ১৫ ওভারে ১৬ বাউন্ডারিতে রান রাসে ৯৯। পরে অন্যরাও তাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে জাকের আলি অনিকের ৯১ রানের ইনিংসটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে খেলতে নেমে একে একে তাইজুল, মুমিনুল, হাসান মাহমুদ, তাসকিন ও নাহিদ রানাকে এই সংগ্রহ তার। শেষ উইকেটে নাহিদকে পেয়ে সেঞ্চুরির জন্য বিগ হিট নিতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন তিনি। ১০৬ বলে ৮টি চার ৫ ছক্কায় এই সংগ্রামী ইনিংস তার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ ইনিংস : ১৬৪ ও ৫৯.৫ ওভারে ২৬৮ (জাকের ৯১, তাইজুল ১৪, মুমিনুল ০, হাসান ৩, তাসকিন ০, নাহিদ ১*; সিলস ১/৪৬, আলজারি জোসেফ ৩/৭৭, শামার জোসেফ ২/৮০, গ্রিভস ১/২০, রোচ ৩/৩৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস : ১৪৬ ও ৫০ ওভারে ১৮৫ (ব্র্যাথওয়েট ৪৩, লুই ৬, কার্টি ১৪, হজ ৫৫, আথানেজ ৫, গ্রিভস ২০, জশুয়া ১২, আলজারি জোসেফ ৫, রোচ ৮, সিলস ১*, শামার জোসেফ ৮, হাসান ২/২০, তাসকিন ২/৪৫, তাইজুল ৫/৫০, নাহিদ ১/৩২)
ফল : বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র
ম্যাচসেরা : তাইজুল ইসলাম
সিরিজ সেরা : তাসকিন আহমেদ ও জেডেন সিলস।

 


আরো সংবাদ



premium cement