০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে ভিসাসহ কনস্যুলার সেবা বন্ধ

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করছেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা : ছবি সংগৃহীত -


নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভিসাসহ সব ধরনের কনসুলার সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গতকাল থেকেই বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে মিশনের ভিসা ও কনসুলার সেবা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এ দিকে স্থানীয় পুলিশের উপস্থিতিতে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হামলায় আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রেক্ষাপটে গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। বিকেল ৪টায় প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহর সাথে প্রায় আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন। এ সময় আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়। এরপর একটি প্রতিবাদ পত্র ভারতের হাইকমিশনারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তলবে সাড়া দিয়ে রিয়াজ হামিদুল্লাহর সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রণয় ভার্মা বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের অভিন্ন আকাক্সক্ষা পূরণে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভারতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ক খুবই বিস্তৃত ও বহুমুখী। আমরা এটাকে নির্দিষ্ট ইস্যু বা এজেন্ডার মধ্যে সম্পর্ককে নামিয়ে আনতে পারি না।
তিনি বলেন, আমরা সামনের পথচলায় সত্যিকারভাবে ইতিবাচক, স্থিতিশীল ও গঠনমূলক সম্পর্ক তৈরি করতে চাই। আমাদের অনেক ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা রয়েছে। আমরা এটির ওপর ভিত্তি করে পরস্পরের কল্যাণ করতে চাই। আমাদের সহযোগিতা দুই দেশের উপকার করছে- এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে গত তিন মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে হাইকমিশনার মন্তব্য করেন। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য, নেপালের সাথে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন চালু এবং নিত্যপণ্যের সরবরাহের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্পর্কে গতিধারা বজায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
এর আগে দিল্লিতে পাঠানো এক নোটে ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে বড় একটি বিক্ষোভকারী গ্রুপ পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে মূল ফটক ভেঙে বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে প্রবেশ করে। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উপস্থিতিতে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করে এবং মিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তি বিনষ্ট করে। দুঃখজনকভাবে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে মিশনকে রক্ষায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। অনিরাপদ পরিবেশে মিশনে কর্মরত সবাই বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশন ত্যাগ করেছে।

নোটে বলা হয়েছে, ভারতে বাংলাদেশ মিশনগুলো আক্রমণ ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা একটি নির্দিষ্ট ছক কষে হচ্ছে। গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকশিনের সামনে একই ধরনের সহিংস বিক্ষোভ হয়েছিল। আগরতলার এ ঘটনা ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। বিদেশী কূটনৈতিক মিশনগুলোকে সব ধরনের অনধিকার প্রবেশ ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। এই ঘটনা পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে তদন্ত করে তৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং কূটনীতিকসহ সব স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।

গত সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার পর দেয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক মিশনের সম্পত্তি হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ অন্যান্য মিশনগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আগরতলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে আটক এবং নির্লিপ্ততার জন্য পুলিশের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ৭
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টেলিগ্রাফ ওই ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে চার পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। পশ্চিম ত্রিপুরার পুলিশ সুপার কিরণ কুমার কে বলেছেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন এসআইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া একজন ডেপুটি এসপিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কিরণ কুমার কে বলেন, এই ঘটনায় নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স (এনসিসি) থানায় একটি স্বপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া জানায়, বাংলাদেশে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সোমবার আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে সভা ছিল হিন্দু সংঘার্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে।
এসময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে- ঘটনাস্থল থেকে এমন কিছু ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা নুরুন্নবী ভুঁইয়া জানান, সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুরের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে ৭ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ গ্রেফতাকৃতদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাইবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে। এ ছাড়া মঙ্গলবার নিরাপত্তাজনিত কারণে আগরতলা থেকে বাংলাদেশের ভিসা বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ার ঘটনা ‘গভীর দুঃখজনক’। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক ও কনস্যুলার স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও দেশের অন্যত্র উপ বা সহকারী হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে সরকার।

ওই হামলার ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ হিসেবে অভিহিত করে এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
সোমবারের এ ঘটনায় ‘ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া’ জানিয়ে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব কূটনৈতিক মিশন ও সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দেশটিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে যাতে এমন সহিংসতামূলক ঘটনা না ঘটে সে জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
টেলিগ্রাফ লিখেছে, ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বলেছেন, ‘প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে একদল যুবক আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিসে ঢোকার চেষ্টা করে। আমি ঘটনার নিন্দা জানিয়েছি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দেয়া যেতে পারে, কিন্তু এই ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।’

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতের সাথে বাণিজ্যে রাজনৈতিক কারণ প্রভাব ফেলবে না : অর্থ উপদেষ্টা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের মাস্টার প্ল্যান পুনর্গঠন করা হচ্ছে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে শহীদ ইয়াসির বলতেন, ‘তোমরা কি রাজাকার?’ অভিশংসনের মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসিনার পররাষ্ট্রনীতি এখন আর নেই : মুশফিক আনসারী খুলনায় দুর্বৃত্তের হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু সিরিয়ার সরকারকে যে বার্তা দিলেন এরদোগান এসপি বাবুল আক্তারের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা যুক্তরাষ্ট্রের বেনজীরের ক্যাশিয়ার জসিম গ্রেফতার দিল্লি জামে মসজিদ নিয়ে হিন্দুসেনার দাবি

সকল