০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুবিধার জন্যই ভারতে ‘বাংলাদেশ কার্ড’ খেলা হচ্ছে

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের অভিমত
-


ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর সামনে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকার অবমাননার সাথে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। ‘সাম্প্রদায়িকতা’ তত্ত্বের ওপর ভর করে ভারতের একটি গোষ্ঠী অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুবিধা লাভের জন্য ‘বাংলাদেশ কার্ড’ ব্যবহার করছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির সমর্থকরাই আরএসএসসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এ সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের জন্য ভারত সরকার এতে উসকানি দিচ্ছে।

নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা গতকাল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও হিন্দু নেতা চিন্ময় দাসকে গ্রেফতার ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা-ভাঙচুর এবং কলকাতা ও মুম্বাই উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একই ছকে আঁকা ঘটনাবলি হিসেবে বর্ণনা করেছে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, এ সব ঘটনার মাধ্যমে জনউত্তেজনা সৃষ্টি করে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার একটি পদ্ধতিগত প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থানের সাথে আমি একমত।

এ মুহূর্তে দিল্লি হাইকমিশন বাদে ভারতের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো নিরাপত্তার কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা উচিত কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী স্বাগতিক দেশ হিসেবে ভারত সরকারের কাছে আমাদের মিশনগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মিশনগুলোর সম্পত্তির সুরক্ষা চাওয়া হয়েছে। তারা সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে আমরা বিকল্প চিন্তা করতে পারি।
ভারত নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ বলে দাবি করে। ভিন্ন দেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে তারা যতটা সোচ্চার, নিজ দেশে মুসলিমদের ওপর আক্রমণের ক্ষেত্রে তারা ততটাই নিশ্চুপ। এ প্রেক্ষাপটে ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার দাবি কতটা যৌক্তিক- জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ভারত এখন আর এ দাবি করে না। গতকাল ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চাকরি করেন এমন ১০০ আমলা দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এ ব্যাপারে ভারত সরকারের উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি ভারতীয় পত্রিকায় এসেছে। কাজেই যাই বলা হোক না কেন ভারতে বাস্তবে কী ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছে। আমরা অন্যের ক্ষেত্রে যে কথা বলি, তা নিজে চর্চা করি কিনা সেদিকে দৃষ্টি থাকলে ভালো হয়।

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে ভারতের ধারাবাহিক অভিযোগের সাথে এ দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা- প্রশ্ন করা হলে হুমায়ুন কবির বলেন, অবশ্যই রয়েছে। এর সাথে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও জড়িত। সম্প্রদায়িক কার্ড হিসেবে বাংলাদেশ ইস্যু ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের রাজ্যসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ ইস্যু ব্যবহার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও রাজ্যসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে কেউ কেউ একই কার্ড খেলার চেষ্টা করছেন। তাই এতে সম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিবেচনাও কাজ করছে। এ সব ভারতীয় পত্রিকায়ও লেখালেখি হচ্ছে, যা আমরা দেখতে পাচ্ছি।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শহীদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের কথিত অভিযোগে ভারতীয়দের বিক্ষোভ ও আক্রমণাত্মক আচরণ তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সাথেই বেশি সম্পৃক্ত। সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি যে মোটেও খারাপ না সেই তথ্য তারা জানে। তারপরও এ সব ঘটনার মূল কারণ হলো, ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল আরএসএস কর্তৃক ক্ষমতাসীন বিজেপিকে দেয়া নির্দেশনা। বিজেপি সমর্থকরাই বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এ সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা মনে করছে বাংলাদেশ বিরোধী একটি সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করতে পারলে অন্তর্বর্তী সরকারকে অজনপ্রিয় করে দেয়া সম্ভব। আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের জন্য ভারত সরকার এতে উসকানি দিচ্ছে। একইসাথে তাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকে অকার্যকর করে দেয়া।

তিনি বলেন, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর মিশন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তটা ভালো হয়েছে। আগরতলা থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কলকাতায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া দরকার। কারণ ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করা বিদ্যুৎ সুদে-আসলে আদায় করার জন্য ত্রিপুরার বিজেপি রাজ্য সরকার উঠে-পড়ে লেগেছে। ভূমিবেষ্টিত ভারতের সাত রাজ্যের সুবিধার জন্য বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করে দেয়ার চিন্তাভাবনাও তারা প্রকাশ্যে এনেছে। পুরো ভারতের মধ্যে ত্রিপুরাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছে। আসাম বলছে, বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য বন্ধ করে দেবে। এই বাণিজ্য বন্ধ হলে আসামই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাংলাদেশ না।


আরো সংবাদ



premium cement
বেসিসে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার সংলাপে অংশ নিতে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বিএনপির প্রতিনিধি দল কুষ্টিয়ায় পদ্মায় ভাঙন রোধে কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ ভারতের সাথে বাণিজ্যে রাজনৈতিক কারণ প্রভাব ফেলবে না : অর্থ উপদেষ্টা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের মাস্টার প্ল্যান পুনর্গঠন করা হচ্ছে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে শহীদ ইয়াসির বলতেন, ‘তোমরা কি রাজাকার?’ অভিশংসনের মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসিনার পররাষ্ট্রনীতি এখন আর নেই : মুশফিক আনসারী খুলনায় দুর্বৃত্তের হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু সিরিয়ার সরকারকে যে বার্তা দিলেন এরদোগান এসপি বাবুল আক্তারের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই

সকল