আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা
বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ : দিল্লির দুঃখ প্রকাশ- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৯
ভারতের আগরতলার কুঞ্জবনে অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল এই হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কয়েক শ হিন্দু নাগরিক সেখানে হামলা চালায়। তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ছিড়ে ফেলে। বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে পুলিশের সাথে তাদের টানাহেঁচড়া করতে দেখা যায়। এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। এতে তারা বলেছে, গতকাল দুপুরে আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপহাইকমিশন চত্বরে এই ঘটনা ঘটে।
গতকাল এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রাঙ্গণ ভাঙার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনো অবস্থায়ই কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এমন অবস্থায় নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি বা সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন ইস্যুতে ভারতে একের পর এক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে এবার আগরতলার ত্রিপুরায় অবস্থিত বাংলাদেশী সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালিয়েছে উগ্র ভারতীয়রা। ইসকনের সাবেক সদস্য চিন্ময় দাসকে অবৈধভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে ভারতের ডানপন্থী সংস্থা ‘হিন্দু সংগ্রাম স্মৃতি’ ত্রিপুরায় বাংলাদেশী সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালায়।
‘কোলকাতা ২৪’ এর খবরে বলা হয়, বিজেপিশাসিত রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় থাকা বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে আন্দোলনকারীরা আচমকা নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ঢুকে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা খুলে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভটি সার্কিট হাউসের মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যের সামনে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে তারা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশী সহকারী হাইকমিশনারের অফিসে প্রবেশ করে। ঘটনার পরপরই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায়। পশ্চিম ত্রিপুরার এসপি ড. কিরান কুমা এবং ডিজিপি অনুরাগ ধানকার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার পর তাতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে হিন্দু সংঘ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে।
এ সময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে, ঘটনাস্থল থেকে এমন কিছু ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে।
পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। এ বিষয়ে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি কার্যকরী সদস্য বিকে রয় জানিয়েছেন, ডেপুটেশন দেয়ার সময় বাইরে কী ঘটনা ঘটেছে তা তারা দেখেননি এবং তারা ডেপুটেশন দিয়ে আসার পরও কাউকে অফিসের ভেতরে দেখতে পাননি।
ঘটনার খবর পেয়ে ত্রিপুরা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের অফিসটি ঘুরে দেখেন এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে কথাবার্তা বলেন। তবে এ বিষয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করেনি।
একই ঘটনায় বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের কোচবিহারেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনী হিন্দু মঞ্চ। সংগঠনটির সদস্যরা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চ্যাংড়াবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিলও করে। এই কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ছিল সীমান্ত এলাকায়।
এ দিকে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের পেট্টাপোল সীমান্তেও। সেখানে সমাবেশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে।
সহকারী-হাইকমিশনে হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত : ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে ‘পূর্ব-পরিকল্পিত’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।
গতকাল ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিন্দু সংঘ সমিতি নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে বড় একটি বিক্ষোভকারী গ্রুপ পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে মূল ফটক ভেঙে বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশনে প্রবেশ করে। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উপস্থিতিতে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করে এবং মিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তি বিনষ্ট করে। দুঃখজনকভাবে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে মিশনকে রক্ষায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। অনিরাপদ পরিবেশে মিশনে কর্মরত সবাই বাংলাদেশ সহকারী-হাইকমিশন ত্যাগ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে বাংলাদেশ মিশনগুলো আক্রমণ ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা একটি নির্দিষ্ট ছক কষে হচ্ছে। গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকশিনের সামনে একই ধরনের সহিংস বিক্ষোভ হয়েছিল। আগরতলার এ ঘটনা ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। বিদেশী কূটনৈতিক মিশনগুলোকে সব ধরনের অনধিকার প্রবেশ ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব। এই ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং কূটনীতিকসহ সব স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা