৫ আগস্টের পর ভারতের সাথে সম্পর্কে সমস্যা চলছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
মমতার বক্তব্য সঠিক পদক্ষেপ না- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৭
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই ভারতের সাথে সম্পর্কে সমস্যা চলছে। এটা স্বীকার করতেই হবে। তবে পারস্পরিক স্বার্থ ঠিক রেখে আমরা ভারতের সাথে একটা স্বাভাবিক সুসম্পর্ক চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৫ আগস্টের আগের আর পরের সরকারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেটার সাথে খাপ খাওয়াতে কেউ কিছু সময় নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। বাস্তবতা মেনে নিয়েই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার নিয়ে ঢাকায় বিভিন্ন মিশনে দায়িত্বরত বিদেশী কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি এই বক্তব্য কেন দিলেন তা বুঝতে পারছি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটা তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নয়। রাজনীতিবিদরা সবসময় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। আমি মনে করি, এটা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির জন্য হয়তো সহায়ক হবে না।
প্রসঙ্গত, গতকাল বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় মানুষ, পরিবার ও তাদের সম্পত্তি বাংলাদেশে রয়েছে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ধর্মীয় কারণে কেউ অত্যাচারিত হলে আমরা তার নিন্দা জানাই। আমরা এই বিষয়ে ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছি। ভারত সরকার এই বিষয়ে যে অবস্থান নেবে, আমরা তা সমর্থন করব।
ব্রিফিং সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকভাবে খারাপ অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে- এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে রয়েছে। সেই প্রচেষ্টা যেন সফল না হয় তার জন্য আমরা সচেষ্ট। এটা আমরা কূটনীতিকদের জানিয়েছি। তিনি বলেন, প্রধানত ভারতের মিডিয়া এই ধরনের ধারণা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। ভারতের মিডিয়ার বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে আরো কিছু দেশের মিডিয়া একই ধরনের খবর প্রকাশ করছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে কোন পরিস্থিতিতে গ্রেফতার করা হয়েছে ও তার জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে, সেই বিষয়টিও কূটনীতিকদের বিস্তারিত জানিয়েছি। আমার মনে হয়, আমাদের যে অবস্থান, সেটা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। এটা অবশ্যই কূটনীতিকরা নিয়মানুযায়ী তাদের দেশে রিপোর্ট করবেন। তিনি জানান, কূটনীতিকদের কিছু কিছু বিষয়ে প্রশ্ন ছিল, সেগুলোর উত্তর দেয়া হয়েছে। আমাদের ব্যাখ্যায় তারা সন্তুষ্ট বলে মনে হয়েছে।
বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই বার্তা দিতে চাই যে, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বরদাশত করবে না। সেটা হিন্দু বা মুসলিম বলে কথা না, সবাইকে আমরা সমান চোখে দেখবো। তিনি বলেন, আইন তার নিজের মতো চলবে, সেখানে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে অবশ্যই শক্ত হাতে দমন করা হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) যোগ দিতে চলতি মাসের মাঝামাঝি ঢাকা সফর করার কথা রয়েছে। ভারতের সাথে সম্পর্ক টানাপড়েনকে কেন্দ্র করে এফওসি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, এফওসি হওয়ার কথা। আমি মনে করি হবে। এখন দুই পক্ষকে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের আন্তরিকতা প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আন্তরিকতা পরিমাপ করা খুব কঠিন কাজ। এটা গণমাধ্যমকে মাপতে হবে। এখানে উভয়ের জন্য অন্তরের চেয়ে স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, নিজেদের স্বার্থ সমুন্নত রেখে ভারত-বাংলাদেশ উভয়েই সম্পর্ক এগিয়ে নেবে। তিনি বলেন, ভারতীয় ভিসা বন্ধ। যে কারণে অনেক বাংলাদেশী চিকিৎসা নিতে ভারত যেতে পারছেন না। আবার বাংলাদেশীরা যেতে না পারায় কলকাতার ব্যবসায়ীদের অবস্থা খারাপ। এতে ভারতের স্বার্থ সংরক্ষিত হয় কি না সেটা তাদের দেখতে হবে। বৃহত্তর স্বার্থে তারা মনে করতে পারে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি হলে হোক, তবুও ভারতের সরকার ভিসা ইস্যুতে অনড় থাকবে। ভারতের স্বার্থ তো আমি বুঝতে পারব না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা