বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে মোদির কাছে আবদার মমতার
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৭
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য আবদার জানিয়েছেন মোদির কাছে। কারণ বাংলাদেশে সঙ্ঘাতের যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা সামলানোর ক্ষমতা ড. মুহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই।
গতকাল দুপুরে বিধানসভা অধিবেশনের সময় বাংলাদেশে বিশেষ সামরিক বাহিনী মোতায়েনের পক্ষে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা জানান, বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা যেন জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিবেশী দেশে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব পেশ করার আর্জিও জানান মুখ্যমন্ত্রী। যে বাহিনী কোনো দেশকে সঙ্ঘাতের রাস্তা থেকে শান্তির পথে ফিরিয়ে আনার কাজ করে। বিশেষ শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর অর্থ হলো বাংলাদেশের সুরক্ষা বাহিনীর ওপরে অনাস্থা প্রকাশ করা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা দরকার। সেই সাথে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যে ভারতীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের তিনি তার রাজ্যে ঠাঁই দিতে তৈরি আছেন। তাদের খাদ্যের কোনো অসুবিধা হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা।
তবে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভের সুরে তিনি জানিয়েছেন, ১০ দিন হয়ে গেল; কিন্তু পুরো বিষয়টি নিয়ে চুপ করে আছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল প্রতিদিন মিছিল করছে। মিছিল করার অধিকার আছে। সীমান্ত আটকে দেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন; কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে, সীমান্তের বিষয়টা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে আছে। আর রাজ্য সরকার কেন্দ্রের পরামর্শ মেনেই চলবে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থানের সাথে আমরা সহমত পোষণ করি।
একই সাথে বাংলাদেশ নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দেয়ার দাবি তোলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তার বক্তব্য, এখন এমনিতেই সংসদে অধিবেশন চলছে। তাই বাংলাদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দেয়া উচিত। কূটনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে যদি তিনি বিবৃতি না দেন, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মুখ খোলা উচিত বলে জানান মমতা। বাংলাদেশ নিয়ে ভারত সরকার চুপ করে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মমতা।
বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হলে তার সরকার সহ্য করবে না বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যদি বাংলাদেশে ভারতীয়রা আক্রান্ত হন, তবে আমরা তা সহ্য করব না। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, আমাদের পরিবার, সম্পত্তি এবং প্রিয় মানুষেরা বাংলাদেশে রয়েছেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ নিয়ে যে অবস্থান নেবে, আমরা তা গ্রহণ করব। কিন্তু বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ধর্মীয় কারণে কেউ অত্যাচারিত হলে আমরা তার নিন্দা জানাই। আমরা এই বিষয়ে ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছি।
এ দিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতন’ ও ‘সন্ন্যাসীদের গ্রেফতারের’ প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। বিজেপির সমর্থনে সীমান্তে অবরোধের কারণে ভারত থেকে দ্রুত দেশে ফিরছেন বাংলাদেশীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, কেবল পেট্রাপোল সীমান্তে নয়, পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সীমান্ত এলাকায় এই বিক্ষোভ চলবে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পেট্রাপোল সীমান্তে দলে দলে জড়ো হচ্ছেন হিন্দুরা। চলছে তুমুল বিক্ষোভ। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর ‘অত্যাচার’ বন্ধের দাবিতে পশ্চিমবাংলার সীমান্তে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন বিজেপি নেতারা। মূলত দলীয় পতাকা ছাড়াই তারা এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল হচ্ছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ একাধিক বিজেপি নেতা এই বিক্ষোভ সমাবেশে আসছেন। সনাতনী ঐক্য পরিষদের ডাকে এসব জমায়েতে অখিল ভারতীয় সন্ত সমিতির প্রতিনিধিরা, সাধু সন্তরাও জড়ো হয়েছেন।
পেট্রাপোলের পাশাপাশি কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তও কার্যত থমথমে। বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছিলেন তাদের অনেকেই ফিরতে চাইছেন তাদের নিজের দেশে। অনেকে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন ভারতে তারাও ফিরতে চাইছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা পালানোর চেষ্টা করছেন; কিন্তু পারছেন না। তবে ওখানে কী হচ্ছে সেটি দেখার পরেও যদি পশ্চিমবাংলার হিন্দুরা এখনো না জাগে তবে বাংলার হিন্দুদেরও এই পরিস্থিতি হবে। এটা মনে রাখতে হবে। এ দিকে ভারত ও বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতির জেরে দুই দেশের বাণিজ্যে অত্যন্ত খারাপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাংলার বিভিন্ন সীমান্তেই এই পরিস্থিতি। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা