০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জট খুলছে তারেক রহমানের মামলার

৮০ মামলার মধ্যে ৩৯ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি
-


বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর সাজা, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, অর্থপাচার মামলাসহ পাঁচটি মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয়। এসব মামলার মধ্যে গতকাল রোববার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই দিন রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা আরো দুই মামলায় খালাস পেয়েছেন তারেক রহমান। এ ছাড়া গত ২৭ নভেম্বর ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে ২৬ লাখ টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় খালাস দেন বিশেষ জজ আদালত ১০-এর বিচারক মো: রেজাউল করিম। একই দিন চাঁদাবাজির অভিযোগে করা একটি মামলার পুলিশের দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে তারেক রহমানসহ আটজনকে অব্যাহতি দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এবং পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা সরকারের সময় আরো প্রায় ৮০টি মামলা দায়ের করা হয়। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালানোর পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার জট খুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা প্রায় ৩৯টি মামলা আদালতের মাধ্যমে খারিজ বা বাতিল হয়েছে বলে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান আইন, আদালত ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার প্রচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৮২টি মামলা করা হয়েছিল। পাঁচটি মামলায় তার দণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে খালাস পেয়েছেন। বাকি চারটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে, এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ও অন্যান্য দণ্ড পাওয়া সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় রায়ে বিচারিক আদালত মোট ৪৯ জনকে সাজা দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট তাদের প্রত্যেককে খালাস দিয়েছেন। বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রাজনৈতিকভাবে এ মামলাটা পরিচালিত হয়েছে তারেক রহমান এবং বিএনপির বিরুদ্ধে। যখন শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ১৬১ ধারা (জবানবন্দী) দেন, সেখানেও তারেক রহমানের নাম ছিল না। পরে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য তারেক রহমানকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ কারণে সবকিছু কনসিডার করে এ মামলার কোনো এভিডেন্স নেই, ১৬৪ ধারায় মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর কোনো সাক্ষ্যমূল্য নেই। কোনো সাক্ষী তারেক রহমানের নাম বলেননি। সব বিবেচনা করে তারেক রহমানসহ সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত। তিনি বলেন, তারেক রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এ মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়। তিনি বলেন, তারেক রহমান এ মামলায় ন্যায় বিচার পেয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে এ মামলা করা হয়েছিল। আমরা এ মামলায় ন্যায়বিচার পেয়েছি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা : ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় অভিযোগ ছিল, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ ট্রাস্টের কাজে ব্যবহার করা হয়নি; বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। একই সাথে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বর্তমানে এ মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রয়েছে। এ মামলাটিতে খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে তার আপিল শুনবেন বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে এ মামলাতেও তারেক রহমানের অব্যাহতি পাওয়ার পথ খুলছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement