আমরা দেশের দায়িত্ব যুব সমাজের হাতে তুলে দিতে চাই
- এরশাদ আলী খুলনা ব্যুরো
- ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশ এখনো পুরোপুরি মুক্ত হয়নি। আমরা দেশবাসীকে সাথে নিয়ে এবং যুবসমাজকে বুকে ধারণ করে মিলেমিশে লড়াই করে দেশকে মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ। সমাজে হাজারো জঞ্জাল রয়ে গেছে। ওইসব জঞ্জাল পরিচ্ছন্ন করে ফেলতে হবে। আমরা দেশের দায়িত্ব যুবসমাজের হাতে তুলে দিতে চাই।
তিনি লগি বৈঠার আন্দোলনে খুনের রাজনীতি শুরু হয় মন্তব্য করে ২০০৯ সালের পরবর্তী পিলখানা হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, পিলখানা খুনের সাথে আওয়ামী লীগের নেতারাই জড়িত ছিলেন। এরপরে তারা স্বাধীনতার আরেক অতন্দ্র প্রহরী জামায়াতের নির্দোষ নেতাদের সাজানো পাতানো বিচার দিয়ে জুডিশিয়াল কিলিং করে। জামায়াতের অসংখ্য নেতা ও কর্মী গুম, হত্যার শিকার হয়, অনেককে পঙ্গু করা হয়। তিনি জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যেসব সন্তান ‘বুকের ভিতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ বলে বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়ে সন্ত্রাসী-ফ্যাসিস্টদের কবল থেকে আমাদের মুক্ত করেছে তাদের প্রতি নিবেদন করে বলেন, আগামীতে মুক্তিপাগল জনগণ যে দেশ দেখতে চায়, আমরা সেই দেশের দায়িত্ব আমাদের সন্তানদের ও যুবসমাজের হাতে তুলে দিতে চাই।
তিনি দলের কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের নমুনা ফুটিয়ে তুলতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটি কাজ হবে জনবান্ধব, জনকল্যাণমূলক। আমরা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তির জন্য ডাকব। দুনিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে আরো অনেক ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা সুশৃঙ্খল শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশ কামনা করলেও কেউ কেউ আছে আমাদেরকে একটা দিনও শান্তিতে থাকতে দিতে চায় না। আমাদের শান্তি কেড়ে নিতে চায়। তাই আমাদের আকাশে মাঝে মাঝে কাল মেঘ, আবার কখনো কাল শকুনের ছায়া দেখা যায়। দোয়া করি আল্লাহ কাল মেঘ ও শকুনকে বাংলার আকাশ থেকে সরিয়ে দেন।
তিনি সকলকে জ্ঞানের আলোয় সমৃদ্ধ করে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কল্যাণের দাওয়াত প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। বন্ধু হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের মধ্যে আশা জাগাতে হবে যে এ সমাজের উত্থান সম্ভব। এটাকে শ্রেষ্ঠ জাতি এবং দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি পরনির্ভরশীলতা ত্যাগ করে কৃষি ও শিল্পনির্ভর দেশ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।
তিনি গতকাল রোববার সকালে ইস্টার্ন জুটমিল ময়দানে দলের খানজাহান আলী থানা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হুবহু আমাদের বক্তব্যটা দেবেন। আমাদের বক্তব্যের নামে আপনাদের কোনো বক্তব্যকে আমাদের ওপর চাপাবেন না। গতকাল সাতক্ষীরায় আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে। আমি ঢাকায় গিয়ে তাদের কর্মকর্তাদের সাথে বসব। আমরা আপনাদের কী ক্ষতি করেছিলাম? আমাদের নামে তারা কেন এ অপবাদ দিলেন? মিডিয়াকে আমি স্যালুট জানাই। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে কালোকে কালো সাদাকে সাদা বলা। আমার মধ্যে কোন কালো থাকলে আমাকে ছাড় দেবেন না। কিন্তু আমার সাদা পোশাককে কেউ কালো করবেন না। আপনারা এক সময় চাপ, সংকোচ ও ভয়ে বিধ্বস্ত ছিলেন। আপনারা সত্য কথাটাকে সত্য হিসেবে লিখতে পারেননি। অশুভ শক্তির চাপে সত্য গোপন করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন তো আপনারা মুক্ত। মুখ দিয়ে কেন বলবেন? কোন মানুষের কথাই বিকৃত, ম্যালাফাই বা টুইস্ট করা উচিত নয়। সাংবাদিকদেও পাশে আমরা আছি। আমার বিপক্ষে গেলেও থাকব যদি জিনিষটা ন্যায়সঙ্গত ও সত্য হয়। তিনি বলেন, আমরা সমালোচনাকে ভয় পাই না। বরং অভিনন্দন জানাই, সেইসব সমালোচনা যা জাতির জন্য উপকারী। আমরা দেশপ্রেম, ন্যায্য ও দেশগঠনের কাজে সাংবাদিকসহ সকলকে পাশে চাই।
থানা সভাপতি ডা: সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা-৫ আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা দেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য যশোর-কুুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন, খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আবদুল খালেক ও সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হোসাইন, নড়াইল আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, খুলনা জেলার নায়েবে আমির মাওলানা গোলাম সরওয়ার, খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম আজিজুল ইসলাম ফারাজী, অধ্যক্ষ গাউসুল আযম হাদী, গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, হাফেজ আলিমুল ইসলাম, মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, হাফেজ বেলাল হোসাইন,আবদুল হালিম মোল্লা প্রমুখ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার তার বক্তৃতায় বলেন, স্বৈরাচারি শাসনযন্ত্রের সৃষ্ট বিশাল সমস্যার সহজে সমাধান করা যাবে না। তাই আপনারা একটু ধৈর্য ধরবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সহযোগিতা করব। আমাদের আরেকটি সমস্যা বিগত আওয়ামী সরকারের বন্ধ করে দেয়া ২৬টি সরকারি জুটমিল। এখন বিজেএমসির কর্মকর্তারা ঠিকমতো বেতন পেলেও শ্রমিকরা তাদের মজুরি, পিএফ, গ্রাচুইটির টাকা দেয়া হয় না। সরকারের কাছে তিনি মিলগুলো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান।
সরাইলে শফিকুর রহমানের পথ সভা : নড়াইল সংবাদদাতা জানান, বিগত সরকার দেশের উন্নয়নের কথা বলে, জনগণের সেবক হতে গিয়ে নিজেরাই দেশের মালিক হয়ে লুটপাট ও দুর্নীতি করেছে। গতকাল দুপুরে নড়াইল-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের মালিবাগ মোড়ে পথসভায় এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান। খুলনা থেকে ফরিদপুর যাওয়ার পথিমধ্যে নড়াইল জেলা জামায়াতে ইসলামীর পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।
শফিকুর রহমান আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট পতিত সরকারের মতো চাঁদাবাজ, জুলুমবাজ আর কাউকে দেখতে চাই না। বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশে সম্মানের সাথে বসবাস করতে চাই। আমরা সহনশীল ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। প্রত্যেক যুবকের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে চাই। জামায়াত এদেশে ইনসাফ কায়েম করতে চায়। পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সকলে দলমত নির্বিশেষে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে বসবাস করতে চাই।
পথসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন-নড়াইল জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার, নায়েবে আমির জাকির হোসেন বিশ্বাস, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল আমিন, নড়াইল পৌর জামায়াতের আমির মাস্টার জাকির হোসেনসহ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ফরিদপুরে কর্মী সম্মেলন : দুর্নীতিমুক্ত এবং সামাজিক সুবিচার ও মানবিক সমাজ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। হিংসার রাজনীতি থেকে বের হয়ে মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে। দেশ ও মানুষের কাছে দায়বদ্ধ শাসনব্যবস্থা সম্পন্ন দেশ গড়তে পারলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।
গতকাল রোববার দুপুরে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এক বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ৪১ সাল পর্যন্ত লিজ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেনাবাহিনী ও বিডিআরের মতো শক্তিশালী দু’টি বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, তারা কখনো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় না। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছে।
জেলা জামায়াত আমির মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দীনের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল ওহাব, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত আরো বলেন, বিগত ১৬ বছর জগদ্দল পাথরের মতো পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার এ দেশের জনমানুষের ওপর চেপে বসেছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি বৈঠার তাণ্ডবে পথ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পিলখানার ৫৭ জন চৌকশ সেনা অফিসার হত্যার মাধ্যমে এ দেশের সামরিক বাহিনী ও তৎকালীন বিডিআরকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে তারা। জামায়াতের শীর্ষ ৫ নেতাকে বিচারিক হত্যার মাধ্যমে জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার চেষ্টা করেছিল।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে সবার অধিকার সমান হবে। আমাদের কলিজার টুকরো ছেলে-মেয়েরা চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে না। বরং একটি মানবিক ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে চাকরির সুব্যবস্থা করা হবে। ধর্মে-বর্ণে হানাহানি থাকবে না, কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে পাহারা দিতে হবে না।
কিছু লোক বলে জামায়াত ক্ষমতায় আসলে মহিলাদেরকে জোর করে বোরকা পরানো হবে। আমরা এটা বলি না। তিনি জামায়াত কর্মীদেরকে নৈতিক মান ও জাগতিক মান উন্নতির আহ্বান জানান।
পাটকেলঘাটা আল আমিন মাদরাসা পরিদর্শন জামায়াত আমিরের
তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরা তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা আল আমিন মাদরাসা পরিদর্শন করেছেন জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান। গত শনিবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরায় রুকন সম্মেলন ও বেলা ২টায় কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার পর বিকেলে খুলনায় যাওয়ার পথে আল আমিন ট্রাস্ট পরিচালিত পাটকেলঘাটা আলামিন ফাজিল মাদরাসায় তিনি কিছুক্ষণ যাত্রাবিরতি করেন। তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান মাদরাসার কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি মাদরাসার অধ্যক্ষ ও স্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য খুলনা অঞ্চলের সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তালা উপজেলা সাবেক আমির ডাক্তার মাহমুদুল হক, ডাক্তার আফতাব উদ্দিন, বর্তমান আমির মাওলানা মহিদুল্লাহ, সেক্রেটারি অধ্যাপক ইদ্রিস আলীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা