ডলারের বিকল্প আনলে ব্রিকস দেশকে শতভাগ শুল্কের হুমকি ট্রাম্পের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭
চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ব্রিকস জোট যদি বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য নতুন মুদ্রা চালু বা প্রচলিত মুদ্রার বিকল্পব্যবস্থা গ্রহণ করে, তা হলে জোটের সদস্য দেশগুলোর ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সিএনএন।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, মার্কিন ডলার থেকে ব্রিকস দেশগুলোর দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা আর সহ্য করা হবে না। আমরা চাই, তারা অঙ্গীকার করবে যে, নতুন ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে না এবং ডলারের বিকল্প কোনো মুদ্রাকে সমর্থন দেবে না। অন্যথায়, তারা শতভাগ শুল্কের সম্মুখীন হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবে।
২০১১ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত হয় ব্রিকস জোট। চলতি বছর ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া এবং মিসর ব্রিকসের নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডর জানিয়েছিলেন, ৩৪টি দেশ এই জোটে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগ্রহীদের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ২০২৩ সালে ব্রিকসের জন্য একটি সাধারণ মুদ্রা চালুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো। ব্রিকস নিজস্ব মুদ্রা ও ডলারের বাইরের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে রাশিয়া, চীন এবং ইরানের মতো দেশগুলো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সক্ষম হবে। তবে জোটের ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে খুব শিগগির একটি নতুন মুদ্রা প্রচলনের সম্ভাবনা আপাতত কম।
চীন ও রাশিয়ার জন্য ব্রিকস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা এই জোটকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছে। বর্তমানে ব্রিকসের চেয়ারম্যানশিপের দায়িত্ব পালন করছে রাশিয়া। গত অক্টোবরে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেন যে, পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্বে একা হয়ে পড়েছে এবং ‘বৈশ্বিক সংখ্যাগরিষ্ঠ’ দেশগুলো তাদের উদ্যোগকে সমর্থন করছে।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক হুমকি এমন সময়ে এলো, যখন তিনি প্রথম দিন থেকেই মেক্সিকো, কানাডা এবং চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বড় শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন, ‘অপরাধ ও মাদক চোরাচালান’ বন্ধ করার কথা উল্লেখ করেছেন।
মার্কিন বলয় থেকে বেরিয়ে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতির সম্প্রসারণ ঘটাতে চায় ব্রিকস। ৯টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত এই সংগঠনটি মার্কিন ডলারের পরিবর্তে আলাদা মুদ্রা চালু করতে চায়। যা দিয়ে নিজেদের মধ্যে পণ্য লেনদেন করবে তারা। সবশেষ অক্টোবরে ব্রিকসের বৈঠকে এমন আলোচনায় একাত্মতা পোষণ করেছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ব্রিকসের বাকি দেশগুলো।
ব্রিকসের এমন আলোচনার ঘোর বিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিকসের এই নীতির বিরোধিতা করে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বাকি দেশগুলোকে সতর্কবাণী দিয়েছেন তিনি। যেখানে এই দেশগুলোর ওপর কড়া শুল্ক আরোপের পক্ষে মত তার।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরপরই শুল্ক যুদ্ধের দ্বিতীয় তরঙ্গ দেখতে পাবে বিশ্ব। ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপ করবেন তিনি। তবে সেটি তখনই হবে যদি মার্কিন ডলারের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক লেনদেনে অন্য মুদ্রার ব্যবহার করে দেশগুলো।
ট্রাম্পের মতে ব্রিকস দেশগুলো অন্য একটি মুদ্রার সন্ধান করতে পারে, তবে তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারকে অন্য মুদ্রার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হবে না। কারণ যে দেশ চেষ্টা করবে আমেরিকাকে বিদায় জানাতে হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেও এমন কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে শুল্ক পরিকল্পনা নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন তিনি। জানিয়ে ছিলেন, আমরা সাধারণত শুল্ক চার্জ করি না। আমি সেই প্রক্রিয়াটি শুরু করেছিলাম। কাভার ভ্যান এবং ছোট ট্রাকের ওপর এটি খুব দুর্দান্ত ছিল। চীন আমাদের ওপর ২০০ শতাংশ চার্জ করে। শুল্কের দিক দিয়ে ব্রাজিলও একটি বড় চার্জার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে নিজের গভীর সম্পর্কের কথা জানালেও শুল্ক চার্জ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘সবার মধ্যে সবচেয়ে বড় চার্জার হলো ভারত। তারা সম্ভবত অনেক উপায়ে চীনের চেয়ে বেশি চার্জ নেয়। কিন্তু তারা হাসিমুখে এটা করে। তারা বোঝায় এটা খুব সামান্য চার্জ। তারা বলে ভারত থেকে কেনার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা