চার দিকে বিজয়ের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬
ডিসেম্বর মাস এলেই এ দেশের জনমানসে নতুন অনুভূতির সৃষ্টি হয়। মানুষ ফিরে যায় ৫০ বছর আগের স্মৃতিতে। প্রবীণরা দেখেছেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্মকাহিনী। আর তরুণ প্রজন্ম সে কাহিনী শুনে উদ্বুদ্ধ হয় নতুন প্রেরণায়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই চার দিকে বিজয়ের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সর্বত্র তুমুল যুদ্ধ চলছে। পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে ক্যাম্প গুটিয়ে ঢাকার দিকে সরে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারাও ক্রমে চার দিক থেকে বিভিন্ন রণাঙ্গনে বিজয় লাভ করে ঢাকামুখী হচ্ছেন। কৌশলগত বিভিন্ন স্থান থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্প সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করায় এ সময় ঢাকামুখী যাত্রা আরো ত্বরান্বিত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের।
রাজধানী ঢাকা জয়ের জন্য অগ্রসরমান মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধ বাধে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে। নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে পথে সম্মুখযুদ্ধ চলে। আখাউড়া রেলস্টেশনেও সম্মুখযুদ্ধের ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে। এ ছাড়া পঞ্চগড়, বরগুনা, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, ভুরুঙ্গামারী, কামালপুর, বনতারা, শমসের নগর, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানেও এ দিন তুমুল লড়াই চলে পাকসেনাদের সাথে। আগের দিনে মুক্তিযোদ্ধারা পঞ্চগড় আক্রমণ করেন এবং ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী পঞ্চগড় ছেড়ে চলে যায়। ঢাকায় রামপুরা বিদ্যুৎকেন্দ্র বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়। চট্টগ্রামেও একইভাবে পাঁচটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ও দু’টি পেট্রলপাম্প ধ্বংস হয়। আগরতলায় পাকিস্তান বিমানবাহিনী দফায় দফায় বিমান হামলা চালায়। জাতিসঙ্ঘ পর্যবেক্ষক টিম পাঠানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।
১৯৭১ সালের আজকের দিনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে মার্কিন সিনেটর উইলিয়াম বি. স্যাক্সবি, পাকিস্তানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডের বৈঠক হয়। ২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী। বিজয় যত এগিয়ে আসতে থাকে ততই ঝরতে থাকে রক্ত। আগের দিন ১ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার খলাপাড়ার ইজাবনগরে ন্যাশনাল জুট মিলস প্রাঙ্গণে গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ৯৯ জন মিলশ্রমিককে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সকালে যখন এসব শ্রমিক নাশতার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা হানা দেয় মিলে। তাদের সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্যাতন শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য আদায়ের জন্য। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ এবং মারধর করা হয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য আদায় করতে না পেরে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রেখে ৩টার পরে ছেড়ে দেয়া হয় দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। এ সুযোগে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে শূন্য হাতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু বিপদ কেটে গেছে মনে করে বেশির ভাগই রয়ে যান নিজ নিজ ঘরে। আসরের আজানের সাথে সাথে আবার শ্রমিকরা বন্দুকের গুলি শুনে আঁতকে ওঠেন। তাদের সবাইকে ঘর থেকে ডেকে এনে মিলের সামনে লাইন ধরে দাঁড় করানো হয়। গুলি করে হত্যা করা হয় বহু নিরীহ মানুষকে।
এই ঘটনার সাক্ষী রাবেয়া আহম্মদ গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ তাহের ঘটনার দিন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। ঘটনার পরের দিন ২ ডিসেম্বর তিনি আবার জুটমিলে যান এবং ৯৯ জনের লাশ গণনা করেন। এদের মধ্যে যাদের নাম তার মনে ছিল তারা হলেন- আবু তালেব, মোজাম্মেল হক, আহসান উল্লাহ ও নজরুল করিম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা