ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচার স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২১
ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্করভাবে লেগে পড়েছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতীয় মিডিয়া যে ভূমিকা নিয়েছে, এটা কোনো অবস্থাতেই দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় বরং প্রতিবন্ধক। এটা তারা কেন করছে, এটা তারাই ভালো বলতে পারবে।
ভারতীয় মিডিয়ার ‘মিথ্যচার’ প্রতিহত করতে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখন আমাদের মিডিয়ার একটা ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। আমি বলছি না যে, ভারতীয় মিডিয়াকে অনুসরণ করে প্রতিক্রিয়া দেখান। কিন্তু তারা যেসব মিথ্যাচার করছে, সেগুলোকে সবার সামনে তুলে নিয়ে আসুন।
গতকাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ) ‘বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক : প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা এবং ভবিষ্যৎ’ বিষয়ক একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ সব কথা বলেন। এনএসইউর সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স এবং রাজনীতি বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসএসইউর ভিসি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাক্ট চেকে প্রমাণিত যে, ভারতীয় মিডিয়া অনেক মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। সেগুলোকে আমাদের মিডিয়া আরেকটু শক্তভাবে উত্থাপন করতে পারে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন একটি বিবৃতি দেয়, সেটা প্রথম পত্রিকার পাতায় আসা উচিত, ভেতরে নয়। এটা আমি মনে করি, বলছি না অবশ্যই প্রথম পাতায় দিতে হবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, সীমান্তহত্যা নিয়ে আমি সব সময়ই শক্তভাবে বলে আসছি। যখন ভারতীয়দের সাথে সামনাসামনি দেখা হয়েছে, আমি বলেছি এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত যেখানে দুটো দেশ যুদ্ধরত না, অথচ মানুষকে গুলি করে মারা হচ্ছে। আমি অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করেছি। সীমান্ত পথে অনেক দেশ পাড়ি দিয়েছি। কোথাও এরকম পরিবেশ দেখি নাই। তিনি বলেন, সীমান্তহত্যা নিয়ে ভারতকে ভাবতে হবে। এই সমস্যা খুব সহজেই দূর করা যায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের সাথে একরকম সম্পর্ক ছিল, এখন সেটা অন্যরকম। এটাই হলো বাস্তবতা। এই বাস্তবতার নিরিখেই আমাদের ভারতের সাথে সম্পর্ক বিনির্মাণ করতে হবে এবং সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। আমার বিশ্বাস, ভারত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক কিভাবে এগিয়ে নিতে হবে সেটা অবশ্যই উপলব্ধি করবে। ইতোমধ্যে হয়তো ভারতের সেই উপলব্ধি এসেছে। ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আগের সরকার ভারতের যে সব উদ্বেগ ছিল তা দূর করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। আমাদেরও কিছু উদ্বেগ রয়েছে। আমাদের উদ্বেগগুলো নিরসনে ভারত যদি মনোযোগী হতো তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে দোলাচাল থাকত না। মোটা দাগে দেখতে পাই, আমাদের উদ্বেগগুলো নিরসনে ভারত সেভাবে উদ্যোগ নেয়নি। তিনি বলেন, সম্পর্ক তো একদিনের, এক বছরের বা এক যুগের না। এটা আরো বেশি সময়ের ব্যাপার। সম্পর্ক সব সময় একরকম যাবে এমনো কথা নেই। আমরা আশাবাদী হতে চাই যে আমরা একটা ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, যাতে দুই পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে।
দেশের স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় ঐক্য জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন কিন্তু জাতীয় ঐক্য। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৩৩ বছর চাকরি করেছি। অনেক ক্ষেত্রেই আমার মনে হয়েছে, জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। শুধু জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে যেটা আমরা অর্জন করতে পারতাম, সেটা পারিনি। জাতীয় স্বার্থ যেখানে আছে, আমাদের অবশ্যই সেখানে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এস এম আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দেশ নয়। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক দেশ কখনোই ছিল না। বাংলাদেশের জনগণই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ভারত কেন আওয়ামী লীগের সাথে থাকে। কারণ, আওয়ামী লীগ ভারতের স্বার্থ রক্ষা করে। বিএনপি জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা