ইসরাইলি আগ্রাসনে ক্ষুধা, তৃষ্ণায় মৃত্যুর মুখে ২০ লাখ ফিলিস্তিনি
আরব লীগকে জরুরি বৈঠকের আহ্বান- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৯
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকির মুখোমুখি উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইসরাইলি দখলদারিত্বের কারণে ত্রাণ বিতরণে অসহযোগিতা, ওষুধ, খাদ্য ও পানির প্রবেশাধিকারের ওপর বিধি-নিষেধের কারণে গাজার ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকির সম্মুখীন। গাজার শিশুরা ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে এবং বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক উপাদানগুলোর অভাবে পরিবারগুলো দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। গত শুক্রবার আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মিডলইস্ট মনিটর এ খবর জানিয়েছে।
অন্য দিকে আলজাজিরার খবর অনুসারে, গতকাল শনিবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে গাজা সিটিতে ১৭ জন, জাবালিয়ায় একজন এবং খান ইউনুসে তিনজন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল সহায়তা কর্মীসহ পাঁচজন রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ ছিটমহলে ১৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ৪৪,৩৮২ জনে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার মধ্যেই এসব হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার সেনারা।
এ দিকে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এর পূর্ববর্তী বিবৃতি অনুসারে, প্রতিদিন ৩০টি মানবিক সহায়তা ট্রাক গাজায় প্রবেশ করে। এই সহায়তা এতটাই অপ্রতুল যে তা সেখানকার মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য এক ফোঁটা পানির মতো। ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে ছিটমহলের ২০ লাখেরও বেশি লোককে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করত। গাজায় ইসরাইলের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বহু আন্তর্জাতিক এবং জাতিসঙ্ঘের সংস্থা দুর্ভিক্ষ এড়াতে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছে।
মিসরে হামাস : এর আগে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর হামলায় এক রাতেই কমপক্ষে ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে হামাসের কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন দফা আলোচনার জন্য গতকাল শনিবার কায়রো পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। শুক্রবার রাতে হামাসের দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, মিসরীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য হামাসের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার কায়রো পৌঁছাবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবারো উত্থাপন করতে কাতার, মিসর ও তুরস্কের সাথে নতুন করে প্রচেষ্টা শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় খুব কম অগ্রগতি হয়েছে এবং আলোচনা এখন স্থগিত রয়েছে। এ দিকে ইসরাইল ও লেবাননে হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর মধ্যে বুধবার ভোরের আগে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
আরব লীগকে বৈঠকের আহ্বান : অন্য দিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে বেইত লাহিয়ায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে আরব লীগকে জরুরি বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। খবর ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফার। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় দখলদার সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনে প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ‘ক্ষুধার যুদ্ধ’ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসরাইলের গণহত্যা, ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি-ছাড়া করা এবং তাদের ওপর ভয়াবহ অনাহার চাপিয়ে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিবৃতিতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে উত্তরাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য দখলদাররা অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে যাতে ফিলিস্তিনিরা তাদের ঘরবাড়ি ও মাতৃভূমি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান।
গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসনের মধ্যে ইহুদিবাদী ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনিদের কাছে কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে দিচ্ছে না। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ইসরাইলের প্রতি বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও দখলদাররা তা আমলে নেয়নি। এ ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতিকে অনেক বেশি জটিল করে তুলেছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা