বিজেপি নির্দিষ্ট একটি ধর্মের প্রতি প্রতিহিংসাপ্রবণ : মমতা
বাংলাদেশে নিহত ছাত্র-জনতার জন্য দুঃখ প্রকাশ- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১১
ভারতের পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের তিস্তা চুক্তি হলেও আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের দিক থেকে আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আমাদের ভারতকে ভালোবাসে। পশ্চিম বাংলাকেও ভালোবাসে। আমাদের ভাষা সাহিত্য পোশাক পরিচ্ছদ সব এক। রাজনৈতিকভাবে যাই মতভেদ থাকুক না কেন, আমরা চাই না কোনো ধর্মে ধর্মে বিভেদ হোক এবং তার কোনো রেশ কারো ওপর পড়ুক- এটা আমরা কখনোই চাই না।
হিন্দুস্তান টাইমসসহ একাধিক ভারতীয় মিডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মমতা বন্দোপাধ্যায় মনে করেন ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি প্রতিহিংসাপ্রবণ, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কার্যত বাংলাদেশে মুসলমানদের ব্যাপারে বিজেপি সরকারের মনোভাব সম্পর্কেই মমতা এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের যারা আছেন তারাও তো পার্টিকুলার একটা ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড একটা ভিনডিক্টিভ অ্যাটিচিউড নেন। আমরা মনে করি কোনোটাই ঠিক নয়। মন্দিরও থাকবে, মসজিদও থাকবে, গুরুদুয়ারা থাকবে, গির্জাও থাকবে। আমরা শান্তির পক্ষে, আমরা উন্নয়নের পক্ষে, ধর্মীয় মতামত প্রত্যকে যেন পালন করতে পারে তার স্বাধীনতা অনুযায়ী, আমরা এটার পক্ষে।’
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান থেকে ফিরে দমদম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ তো একটা অন্য দেশ। ভারতবর্ষটা একটা অন্য দেশ। একটা দেশ আরেকটা দেশের সম্বন্ধে যদি কিছু করে সেটা সেই দেশকে করতে হয়। আমরা দুঃখিত। অনেক মানুষ আগেও মারা গেছেন। এখনো অত্যাচারিত হচ্ছে। আগেও আন্দোলনের ছাত্রছাত্রী মারা গেছে। আজো তার রেশ চলছে। আমরা তো কেউ ঘটনাটাকে সমর্থন করছি না। যেকোনো ঘটনাই যে কোনো ধর্মের ওপরই হোক না কেন আমরা সেটাকে সমর্থন করি না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা খুবই নগণ্য। যেহেতু আমরা আলাদা দেশ। বাংলাদেশ আলাদা দেশ। এটা ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে কথা বলতে পারে। বলে অ্যাকশন নিতে পারে।’
তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে মমতা বলেন, ‘আমরা এটুকু বলতে পারি যে আমরা এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স পলিসির ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের স্ট্যান্ড হচ্ছে, যে যখনই ক্ষমতায় থাকুক না কেন আমরা গভর্মেন্টের স্ট্যান্ডটাকে সাপোর্ট করি। কাজেই আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। কোনো ধর্মের ওপরে, কোনো বর্ণের ওপরে, কোনো জাতির ওপরে কোনো অত্যাচারই আমরা মানি না। না হিন্দু, না মুসলমান, না শিখ, না খ্রিষ্টান। আমরা সবাই এক। যে সব ঘটনা আজ নয় এক বছর ধরে হচ্ছে প্রত্যেকটা ঘটনার জন্যই আমরা দুঃখিত। দুঃখিত হলেও যেহেতু আমরা অন্য দেশের নাগরিক যেহেতু আমাদের রাজ্যসরকার আছে, কেন্দ্রীয় সরকারও আছে। সুতরাং ভারত সরকারের ম্যাটার বাংলাদেশের সাথে কথা বলতে পারে। সেটেল করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের তো কোনোভাবে যুক্ত করা হয় না।’
এ দিকে বাংলাদেশে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিহত ছাত্রজনতার জন্য মমতার দুঃখ প্রকাশ সম্পর্কে বিধানসভায় বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের চরমপন্থীদের প্রতি এভাবেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেস ও বামদের হিন্দু সমর্থকরা ভেবে দেখুন, নিজের ভোটব্যাংক বাঁচাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের ছুড়ে ফেলতে এক মিনিটও চিন্তা করবেন না।
তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গণশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে কী ঘটছে তা নিয়ে বক্তব্য দেয়া বাড়াবাড়ি হচ্ছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের বিজেপি নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বসে রয়েছেন হিন্দুরা। থানার বড় বাবু, বিচারপতি, এসপি, ডিএম, কত হিন্দু। এগুলো দেখা যায় না? মাদরাসার ছেলেরা মন্দির পাহারা দিয়ে পুজো করার সুযোগ করে দিয়েছে। এগুলো দেখতে পান না? পালটা হামলা যারা করছে, তারা অস্থির মস্তিষ্কের। বাংলাদেশে কোথায় কী ঘটেছে, প্রকৃতপক্ষ কতটা... অত্যাচার হলে নিশ্চিতভাবে তার নিন্দা করতে হবে। তবে সেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
এরপর সিদ্দিকুল্লা আরো বলেন, ভারতে যখন বাবরি মসজিদের বিষয়ে বাংলাদেশ মুখ খুলেছিল, তখন মোদিজি বলেছিলেন, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ইউনূস সাহেবও ভালো উত্তর দিয়েছেন- এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সন্ন্যাসী যদি অপরাধ করে অপরাধী, ইমাম অপরাধ করলে অপরাধী। ভালো সন্ন্যাসী হলে কি অপরাধ করবে? সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ৪০ বছর ধরে কাজ করছে, সবার সামনে বলছি, ক’টা থানায় কেস দেখেছেন? অপরাধ হলো অপরাধ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা