২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সংবাদ সম্মেলনে সেনা সদরের বক্তব্য

দেশে বিশৃঙ্খলার পেছনে রয়েছে ইন্ধনদাতারা

চট্টগ্রামে বড় অঘটন ব্যর্থ করা হয়েছে
-


সম্প্রতি সারা দেশে চলমান বিশৃঙ্খলার পেছনে উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন দেখছে সেনাবাহিনী। তবে এই ইন্ধনদাতা কারা তাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় সেনাবাহিনীর কাছে নেই বলে বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনাসদর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের কারণে অনেক ঘটনা শেষ পর্যন্ত ঘটছে না। যেগুলো ঘটছে সেগুলোও যেন থেমে যায় সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে সেনাবাহিনী। তবে ছাত্র ও শ্রমিকদের মতো সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে যখন সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগের বিষয় আসে তখন অনেক চিন্তা করে এগোয় সেনাবাহিনী। সেজন্য হয়তো অনেকে মনে করতে পারেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।

ইন্ধনদাতা যাদের বলা হচ্ছে তারা আসলে কারা, তাদের বলার মতো কোনো পরিচয় আছে কী না এবং তাদের উদ্দেশ্য কী বলে এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে জানতে চাইলে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, তাদের আইডেন্টিটি এখন এক্সাকটলি বলতে পারব না। বাট তারা কী চায় সেটা আপনি-আমি সবাই জানি। তারা দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। এটা এক ধরনের মোটিভ (উদ্দেশ্য) আছে এটা বলছি না, একেক জনের একেক ধরনের মোটিভ থাকতে পারে। এখানে ব্যক্তিস্বার্থ থাকতে পারে, সমষ্টিক স্বার্থ থাকতে পারে। এ ধরনের ইন্ধনদাতা থাকবেই, এটা শুধুমাত্র বর্তমান পরিস্থিতিতে না, যেকোনো দেশ যখন শান্তিকালীন পরিস্থিতিতে থাকে তখনো এ রকম অনেক ধরনের হতে পারে। একটা দেশ যখন চলে তখন অনেক রকমের বিষয় থাকে- ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক। ইন্ধনদাতারা সবসময় ছিল থাকবে। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ জনতা তাদের দায়িত্ব হচ্ছে ইন্ধনে প্ররোচিত না হওয়া।

সনাতন নেতা চিন্ময় দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে সহিংসতা হতে পারে এ রকম ধারণা থাকার পরও কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, মৃত্যুর ঘটনাটি অবশ্যই অনেক বেদনাদায়ক। আমাদের সার্বিক চেষ্টা থাকে যেকোনো ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধ করার। কিন্তু আমাদের সক্রিয়তার কারণেই হয়তো অনেক বড় ঘটনা সেখানে ঘটেনি। আপনারা জানেন সেখানে বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় অনেক ছিল। সেই পরিস্থিতিতে কিন্তু সেখানে আরো খারাপ ঘটনা ঘটতে পারত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে সে রকম কিছু হতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের তথ্য জানিয়ে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, গত ১৩ নভেম্বর থেকে এই পর্যন্ত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী মোট ২৪টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত মোট ১,৩২৮ জন ব্যক্তিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর এই কাজের ধারাবাহিকতায় গত ২০ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর মোট ১২৩ জন সদস্য হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন অফিসার শহীদ হয়েছেন। ৯ জন অফিসারসহ মোট ১২২ জন সেনাসদস্য বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। শিল্পাঞ্চল ছাড়াও ৬৩টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৬টি, সরকারি অফিস সংক্রান্ত একটি, রাজনৈতিক কোন্দল ৬টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ৪০টি।
বৌদ্ধদের দেশব্যাপী কঠিন চীবরদান উৎসব, সনাতন ধর্মাবলম্বী মাতুয়া গোষ্ঠীর রাসমেলা ও নবান্ন উৎসব উদযাপনের জন্য নিরাপত্তা দিয়েছে সেনাবাহিনী। কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ যৌথ অভিযান গত এপ্রিল থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৭৯ জন কেএনএ সক্রিয় সদস্য ও সহায়তাকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসহ মোট ৬০টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণে গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জামাদি (দুরবিন, ম্যাপ, আইডি সরঞ্জাম, ওয়াকি টকি, ইউনিফর্ম ইত্যাদি) উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠনটির পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণ এবং অতর্কিত হামলায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অনেক পরে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে এবং তারা আসার পরেও তেমন ভূমিকা কেন দেখা যায়নি- জানতে চাইলে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, এই ছাত্ররাই কিন্তু আন্দোলন করে দেশের এমন একটা পরিবর্তন এনেছে। আমরা সবাই আশা করছি যে দেশটা একটা ভালো দিকে যাবে। ছাত্ররাই যখন কারও ইন্ধনে পরিস্থিতি না বুঝে সাময়িকভাবে ডিরেইলড হয়ে যাচ্ছে তখন তাদের বিরুদ্ধে আমরা যদি শক্তি প্রয়োগের কথা চিন্তা করি তখন আমাদের কিন্তু অনেক চিন্তা করে কাজটা করতে হয়। আমরা আশা করি ছাত্ররা বা সাধারণ মানুষ যারা আছে প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝবেন। আর সামাজিক মাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে কোনাে উসকানি এলে সবাই যেন যাচাই করার চেষ্টা করেন যে আসলে ঘটনাটি কী ঘটছে।

সেনাবাহিনীর অবস্থান থাকার পরেও অনেক ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে আপনাদের গোয়েন্দা তথ্যের কোন ঘাটতি আছে কি না জানতে চাইলে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, ঘাটতি আছে আমি বলব না। ইন্টেলিজেন্সের বিষয়ে সবার সাথে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানে না এ রকম কোন ঘটনা হয়নি। যৌথবাহিনীর অভিযান চালাতে গিয়ে অপরাধে জড়িয়েছে এ রকম খবর শোনা যায়। এ রকম কতজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আছেন তারা অপরাধে জড়িয়েছেন এ রকম ঘটনা হয়তো ঠিক না। তবে কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে হয়তো সেনাসদস্য বা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখন নেই। তবে যত অভিযোগ আসছে প্রত্যেকটার তদন্ত হচ্ছে, কিছু তদন্ত শেষ হয়েছে। আমার জানামতে এখানে পাঁচ বছরের থেকে শুরু করে এক বছরের জেল, চাকরি থেকে বরখাস্তসহ বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement