গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন উদ্যোগ নেবে যুক্তরাষ্ট্র
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০২
- হারেৎজে কলামিস্ট লেভি মনে করেন গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা নেই ইসরাইলের
- নুসেইরাতে হামলায় একই পরিবারের ৯ জন নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দী মুক্তির জন্য নতুন উদ্যোগ শুরু করতে যাচ্ছেন। লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এই তথ্য জানিয়েছেন। ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার অর্থ তারা আর গাজায় হামাসের প্রতি সংহতির অংশ হিসেবে যুদ্ধ করছে না। এতে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দী মুক্তির চুক্তি করতে হামাসের প্রতি চাপ বাড়বে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে দখলদার বাহিনীর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একই পরিবারের ৯ জনসহ আরো ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার উত্তরে আটকে পড়া ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভারী ইসরাইলি বোমাবর্ষণ ‘অত্যান্ত ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়েছে জাতিসঙ্ঘের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। অন্যদিকে ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজের কলামিস্ট গিডিয়ন লেভি মনে করেন, লেবাননের মতো গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের মতো কোনো চুক্তিতে অনুমোদন দেবে না নেতানিয়াহুর সরকার। আলজাজিরার সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
গিডিয়ন লেভি বলেন, আমরা যেটা শুনতে পাচ্ছি তা হলো- গাজার ক্ষেত্রে কোনো পূর্ণাঙ্গ চুক্তি করতে ইসরাইল ইচ্ছুক নয়, এর বিপরীতে হয়তো তারা একটা সাময়িক বিরতির চুক্তিতে যেতে সম্মত হবে। আমরা মিসরের পক্ষ থেকে সাময়িক বিরতির একটি প্রস্তাবের বিষয়ে শুনেছি, যাতে কিছু ইসরাইলি বন্দীর বিনিময়ে কিছু ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হতে পারে, এরপর আবারো ইসরাইল তার অভিযান জারি রাখবে। ‘লেবাননের বিপরীতে, ইসরাইলের গাজা উপত্যকা খালি করার কোনো ইচ্ছা নেই। গাজার উত্তর অংশ এখন সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং আমি এমন পরিস্থিতি দেখছি না যেখানে ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তর অংশে ফিরে যেতে দেয়া হবে- তাই লেবাননের চেয়ে গাজায় ভবিষ্যৎ অনেক বেশি সমস্যাযুক্ত বলে মনে হচ্ছে, বলেন গিডিয়ন লেভি। ‘ইসরাইলি বাহিনী যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ প্রতিরোধ থাকবে এবং যতক্ষণ প্রতিরোধ থাকবে, ততক্ষণ প্রতিশোধ নেয়া হবে। এটাই তাদের যুক্তি।’
এর আগে সুলিভান জানান, মার্কিন ও ফরাসি মধ্যস্থতায় হিজবুল্লাহর সাথে চুক্তি ঘোষণার আগে বাইডেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন। তারা গাজায় একটি চুক্তির চেষ্টা আবারো শুরু করতে সম্মত হয়েছেন। সুলিভান আরো জানান, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার প্রতিনিধিদের তুরস্ক, কাতার, মিসর ও অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেবেন। সুলিভান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এটি একটি স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সুযোগের শুরু; যেখানে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা পাবে। ইসরাইল-হিজবুল্লাহ চুক্তি ঘোষণার সময় বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, মিসর, কাতার ও ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবারো চাপ সৃষ্টি করবে। গাজায় ইসরাইল এখনো হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
বিমান হামলায় নিহত ১৯ : আলজাজিরার খবর অনুসারে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বাহিনী কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বোমাবর্ষণ বাড়িয়েছে এবং উত্তর ও দক্ষিণে ট্যাংকগুলো আরো গভীরে প্রবেশ করেছে। উত্তর গাজা উপত্যকায় বেইত লাহিয়ায় কামাল আদওয়ানের একটি বাড়িতে ও হাসপাতালের কাছে দু’টি পৃথক বিমান হামলায় ছয়জন এবং দক্ষিণে খান ইউনুসে একটি মোটরসাইকেল বোমা হামলায় আরো চারজন নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের একটি নুসেইরাতের বহুতল একটি ভবনে বিমান হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। মসজিদের বাইরের রাস্তাগুলোতেও বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে সেনারা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই সব হামলায় একই পরিবারের অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, নুসেইরাতের পশ্চিমাঞ্চলে ট্যাংকের গোলাগুলিতে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন নারী ও অপরজন শিশু। এছাড়া, কাছাকাছি একটি বাড়িতে বিমান হামলায় আরো পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আরো গভীরে প্রবেশ করেছে ট্যাংকগুলো। উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৪,৩০১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সাহায্য প্রবেশে বাধা : জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ বলেছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ অক্টোবরের শুরু থেকে গত ২৫ নভেম্বরের মধ্যে উত্তর গাজায় প্রবেশের জন্য অপেক্ষমাণ প্রায় সব সহায়তা প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছে। ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলি সামরিক অবরোধ এবং ক্রমাগত বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত অঞ্চলটির উত্তরে মানবিক সরবরাহ প্রবেশের জন্য ৯১টি প্রচেষ্টার মধ্যে ৮২টি আটকে দেয় ইসরাইল।
ফিলিস্তিনিদের আটক : অন্যদিকে গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় অবরুদ্ধ শহর বেইত লাহিয়া ছেড়ে পালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব বেসামরিক মানুষের ওপরও ধরপাকড় চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গত বুধবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলা এসব মানুষের দল থেকে পুরুষদের আলাদা করে বেছে নিয়ে আটক করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বার্তা সংস্থা এমন খবর প্রকাশ করেছে। ৫০ দিনের বেশি সময় ধরে বেইত লাহিয়া এলাকাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ওই এলাকায় খাবার, পানি ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে তারা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা